Published : 19 Jun 2025, 08:55 PM
ইংল্যান্ড ও ভারতের টেস্ট সিরিজ শুরুর আগের দিন উন্মোচন হলো অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি। যাদের নামে এখন থেকে এই দুই দলের সকল টেস্ট সিরিজের নতুন নামকরণ, সেই দুই কিংবদন্তি সাচিন টেন্ডুলকার ও জেমস অ্যান্ডারসন উপস্থিত ছিলেন নতুন ট্রফির উন্মোচনে।
ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়ে অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি উন্মোচনের খবর জানায়। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে ট্রফির পাশে পোজ দিতে দেখা যায় টেস্ট ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যান টেন্ডুলকার ও সফলতম পেসার অ্যান্ডারসনকে।
এই দুজনকে সম্মান জানিয়ে নামকরণ করা ট্রফিটিতে তাদের ছবি ও স্বাক্ষর খোদাই করা হয়েছে।
হেডিংলি টেস্ট দিয়ে শুক্রবার শুরু হবে এই ট্রফির লড়াই।
এতদিন এই দুই দলের ইংল্যান্ডে খেলা টেস্ট সিরিজকে বলা হতো পাতৌদি ট্রফি। ইংল্যান্ড-ভারত দুই দলের হয়েই খেলা ইফতিখার আলি খান পাতৌদি ও তার ছেলে ভারতের সাবেক অধিনায়ক মানসুর আলি খান পাতৌদির সম্মানে এই নামকরণ করা হয়েছিল। আর ভারতে খেলা সিরিজকে বলা হতো অ্যান্থনি ডি মেলো ট্রফি। বিসিসিআইয়ের (বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া) প্রতিষ্ঠাতাদের একজন অ্যান্থনি ডি মেলো ১৯৪৬-৪৭ থেকে ১৯৫০-৫১ সালের মধ্যে বোর্ডের প্রথম সচিব ও সভাপতিও ছিলেন।
এই লড়াই থেকে পাতৌদির নাম অবশ্য পুরোপুরি মুছে যাচ্ছে না। নাম পরিবর্তনের পর পাতৌদির পরিবার ও ভারতের ক্রিকেট মহলের একটি অংশে কিছুটা অসন্তোষের খবর জানা গিয়েছিল। স্বয়ং টেন্ডুলকার দুই দেশের বোর্ডের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন যে, পাতৌদির নাম কোনোভাবে রাখা যায় কি-না।
এখন থেকে এই সিরিজের বিজয়ী অধিনায়ককে দেওয়া হবে ‘পাতৌদি মেডেল।’
সম্প্রতি লর্ডসে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের চতুর্থ দিন জমকালো আয়োজনে অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি উন্মোচনের কথা ছিল, কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ভারতের আহমেদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে পিছিয়ে দেওয়া হয় সেই আয়োজন।
গত বছরের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লর্ডস টেস্ট দিয়ে বর্ণাঢ্য টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টানেন অ্যান্ডারসন। ১৮৮ টেস্টে ৭০৪ উইকেট নিয়ে শেষ হয় ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে তার পথচলা। পরে তিনি বোলিং পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন ইংল্যান্ডের কোচিং স্টাফে।
গত জানুয়ারিতে ল্যাঙ্কাশায়ারের সঙ্গে নতুন চুক্তি করে এখনও ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে যাচ্ছেন আগামী মাসে ৪৩ বছর পূর্ণ করতে যাওয়া পেসার।
টেন্ডুলকারের সঙ্গে নিজের নামে ট্রফির এই সম্মান পেয়ে গর্বিত ভারতের বিপক্ষে ৩৯ টেস্টে ১৪৯ উইকেট শিকার করা অ্যান্ডারসন।
“সাচিন ও আমার নামে এই আইকনিক সিরিজের নামকরণ আমার ও আমার পরিবারের জন্য গর্বের মুহূর্ত। আমাদের দুই দেশের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সবসময়ই বিশেষ কিছু, ঐতিহাসিক, তীব্রতা ও অবিস্মরণীয় মুহূর্তে পূর্ণ।”
“এভাবে স্বীকৃতি পাওয়া সত্যিই সম্মানের। এই গ্রীষ্মে ইংল্যান্ডে পরবর্তী অধ্যায়টি উন্মোচিত হওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।”
অ্যান্ডারসনের চেয়ে ১০ বছরের বড় টেন্ডুলকার ২০০তম টেস্ট খেলে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন ২০১৩ সালে। টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ ম্যাচ, সর্বোচ্চ রান (১৫ হাজার ৯২১), সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি (৫১) ছাড়াও অনেক রেকর্ড তার।
টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে জীবনের মিল খুঁজে পান ভারতীয় কিংবদন্তি।
“আমার মতে, টেস্ট ক্রিকেট জীবনের প্রতিচ্ছবি- যেখানে আপনি নিজের সেরাটা দেন এবং যদি কিছু ভুল হয়ে যায়, তাহলে এটা আপনাকে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার, চিন্তা করার এবং ঘুরে দাঁড়ানোর আরেকটি সুযোগ দেয়। এটা খেলাটির সর্বোচ্চ স্তর, যা আপনাকে সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে ধৈর্য, শৃঙ্খলা ও মানিয়ে নেওয়া শেখায়। আমার ভিত গড়ে ওঠার বিষয়ে টেস্ট ক্রিকেটের কাছে আমি ঋণী, কারণ এটা আমাকে হতাশা থেকে জয়ে, আকাঙ্ক্ষা থেকে পরিপূর্ণতায় পরিণত হতে দেখেছে।”
“টেস্ট ক্রিকেটকে এমনভাবে গড়তে ভারত ও ইংল্যান্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে যে, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এটা অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এখন যেভাবে আমার মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বী ও মাঠের বাইরের ভদ্রলোক জেমসের (অ্যান্ডারসন) সঙ্গে এই স্বীকৃতি ভাগ করে নিচ্ছি, আশা করি গোটা বিশ্ব টেস্ট ক্রিকেটকে আরও বেশি করে উদযাপন করবে।”
অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফির পাঁচ টেস্টের সিরিজ দিয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে নিজেদের পথচলা শুরু করবে ইংল্যান্ড ও ভারত।