Published : 23 May 2025, 02:09 PM
ইংল্যান্ডের সবাইকে জো রুট ছাড়িয়ে গেছেন বেশ আগেই। দ্রত পায়ে ছুটছেন তিনি এখন টেস্ট ইতিহাসের চূড়ার পানে। যেখানে এখন অনেক বছর ধরেই সগৌরবে আছেন সাচিন টেন্ডুলকার। যদিও ক্রিকেটারদের ফর্ম আর ক্যারিয়ারের বাস্তবতা বদলাতে সময় লাগে না। তবে এখনকার সব পারিপার্শ্বিকতা বলছে, ভারতের কিংবদন্তিকে ছাড়িয়ে নতুন উচ্চতায় পা রাখা খুবই সম্ভব ইংলিশ তারকার জন্য।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টের প্রথম দিনে ইংল্যান্ডের রান উৎসবে মলিন ছিলেন কেবল রুট। তবে ৩৪ রানের সেই ইনিংসের পথেই প্রথম ইংলিশ ব্যাটসম্যানকে ১৩ হাজার টেস্ট রানের ঠিকানায় পৌঁছেছেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রানে তার ওপরে আছেন শুধু রাহুল দ্রাবিড়, জ্যাক ক্যালিস, রিকি পন্টিং এবং অবশ্যই টেন্ডুলকার।
ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ২০০ টেস্টের অবিশ্বাস্য মাইলফলক ছুঁয়ে ১৫ হাজার ৯২১ রান নিয়ে টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন টেন্ডুলকার। সবচেয়ে কাছে থাকা পন্টিংয়ের চেয়েও তার রান আড়াই হাজারের চেয়েও বেশি।
খেলা ছাড়ার অনেক আগে থেকেই অবশ্য সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে টেন্ডুলকার। এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে রুটকেও। তবে ভারতের ক্রিকেট ঈশ্বরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সত্যিকার সম্ভাবনা আছে ইংল্যান্ডের সফলতম টেস্ট ব্যাটসম্যানের।
রুটের বয়স এখন ৩৪। সবসময়ের মতো এখনও দারুণ ফিট। সবচেয়ে যেটা জরুরি, সেখানেই সবচেয়ে উজ্জ্বল। তার পারফরম্যান্স। ২০২১ সাল থেকে তার ক্যারিয়ারে সোনালি সময় চলছে। সেই সময়ের আভা ম্লান হওয়ার কোনো আভাস এখনও নেই।
২০২০ পর্যন্ত রুটকে নিয়ে সবচেয়ে বড় আক্ষেপের জায়গা ছিল, ফিফটিগুলোকে শতরানে রূপ দিতে না পারা, বড় ইনিংস যথেষ্ট বেশি খেলতে না পারা। এমনকি তিনি আদৌ গ্রেট হতে পারবেন কি না, এই আলোচনাও ঠিল ইংলিশ ক্রিকেটে। একটা পর্যায়ে ব্যাটিং গড় পঞ্চাশের নিচেও নেমে গিয়েছিল। ২০২০ সাল থেকে তার টেস্ট গড় ছিল ৪৮-এর নিচে।
কিন্তু পরের বছর থেকেই সব আক্ষেপ মুছে দেন তিনি ব্যাটের অসাধারণ দাপটে। সেই প্রতাপ চলছে এখনও। ২০২০ সাল পর্যন্ত ৯৭ টেস্টে তার সেঞ্চুরি ছিল ১৭টি। ২০২১ থেকে চলতি টেস্টের আগ পর্যন্ত ৫৫ টেস্টে তার সেঞ্চুরি ১৯টি!
এই সময়ে ৫ হাজার ১৪৯ রান করেছেন তিনি ৫৫.৯৬ গড়ে। ক্যারিয়ার গড়কেও আবার নিয়ে গেছে পঞ্চাশ ছাড়িয়ে। এখন যা প্রায় ৫১।
টেন্ডুলকারকে ছাড়াতে তার লাগবে আর ৩ হাজারের কাছাকাছি রান। এমনিতে সংখ্যাটি বেশ বড়। তবে রুট যেভাবে এগোচ্ছেন, এর কাছাকাছি ফর্ম থাকলেও দূরত্বটা ঘুচিয়ে দিতে সময় খুব বেশি লাগবে না।
১১ হাজার থেকে ১২ হাজার টেস্ট রানে যেতে তার লেগেছিল ২৩ ইনিংস। ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজারে যেতে লাগল ১৮ ইনিংস।
পরের সময়টায় যদি তার প্রতি হাজারে ২২-২৫ ইনিংস করেও লাগে, আর ৭০টির মতো ইনিংস খেললে টেন্ডুলকারকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন তিনি।
রুটের পক্ষে সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটি আছে, ইংল্যান্ড প্রচুর টেস্ট খেলে। গোটা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলে তারাই। রুট নিজেই যেমন ২০২১ ও ২০২২ সালে খেলেছেন ১৫টি করে টেস্ট, গত বছর ১৭টি। মাঝে ২০২৩ সালে স্রেফ ৮টি টেস্ট খেলেছিলেন, সেটিও অনেক দেশের চেয়ে বেশি।
ইংল্যান্ডের টেস্ট ম্যাচের কমতি নেই সামনের সময়টাতেও। রুটকে স্রেফ ধরে রাখতে হবে ফর্ম ও ফিটনেস। এড়াতে হবে বড় চোট। যেহেতু তিনি বোলার নন, বড় চোটের শঙ্কাও কম।
ফর্ম ব্যাপারটি যদিও খুব ভঙ্গুর ও অনিশ্চিত। যে কোনো সময় বদলে যেতে পারে। ইংল্যান্ডের মতো দেশে ক্রিকেটাররা অনেক সময় হুট করে অবসর নিয়েও ফেলেন। কোনো কিছুই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি তার যে ভালোবাসা, তাতে শঙ্কাগুলো কম।
রানের রেকর্ডের মতো টেন্ডুলকারের ২০০ টেস্ট খেলার কীর্তিও ছাড়িয়ে যাওয়া খুবই সম্ভব রুটের পক্ষে। তার দৃষ্টি থাকবে ভারতের ব্যাটিং জিনিয়াসের ৫১ সেঞ্চুরির রেকর্ডেও।
যে রাজত্বের অবিসংবাদিত রাজা টেন্ডুলকার, তাকে সিংহাসন থেকে সরিয়ে একদিন মুকুট মাথায় তুলতেই পারেন রুট।