Published : 29 May 2025, 08:29 AM
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজ হারের পর শিশিরের প্রভাবকে বড় দায় দিয়েছিলেন লিটন কুমার দাস। তবে পাকিস্তান সফরের শুরুতে পরাজয়ের পর তেমন কোনো অজুহাত দেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। তিন বিভাগেই নিজেদের ব্যর্থতা অকপটে মেনে নেন তিনি।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গত সপ্তাহে আরব আমিরাতের বিপক্ষে পরাজয়ের ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার সুযোগ লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বুধবার রাতে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি তারা। উল্টো আরেকটি পরাজয়ে দুঃসময় আরও লম্বা করেছে লিটনের দল।
অথচ টস হারের পর বল হাতে শুরুটা দুর্দান্ত করে বাংলাদেশ। মাত্র ৮ বলের মধ্যে তারা ফিরিয়ে দেয় পাকিস্তানের দুই ওপেনারকে। সাইম আইয়ুব ও ফাখার জামানের বিদায়ের পর স্বাগতিকদের স্কোরকার্ডে তখন ২ উইকেটে ৫ রান।
অমন শুরুর পরও ক্রমেই পেছায় বাংলাদেশ। শুরুর ধাক্কা সামলে পাল্টা আক্রমণ করেন সালমান আলি আগা ও হাসান নাওয়াজ। শেষে সময়ের দাবি মেটান শাদাব খান। পুরো ইনিংসে একের পর এক বাজে ফিল্ডিংয়ে তাদের কাজ আরও সহজ করে দেন সফরকারী ফিল্ডাররা।
মূল বোলারদের দেদার রান খরচের দিনে সবচেয়ে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন অনিয়মিত অফ স্পিনার শামীম হোসেন। ২৬ ম্যাচের ক্যারিয়ারে মাত্র তৃতীয়বার বল হাতে নিয়ে ৪ ওভারে ৩১ রানে তিনি নেন ১টি উইকেট।
বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম ২ উইকেটের জন্য ৩ ওভারে খরচ করেন ৩২ রান। তানজিম হাসান, রিশাদ হোসেন, শেখ মেহেদি হাসানরাও ছিলেন খরুচে। হাসান মাহমুদ তুলনামূলক কৃপণ বোলিংয়ে ৩ ওভারে ২৪ রান দিলেও তাকে আরেকটি ওভার করাননি লিটন।
বড় লক্ষ্যে তানজিদ হাসান ঝড়ো শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। দলের ভরসা হয়ে টিকে ছিলেন লিটন দাস। কিন্তু ১২তম ওভারে ৪৮ রান করে অধিনায়ক ফেরার পর আর লড়াই করতেই পারেনি বাংলাদেশ। মাত্র ৬৪ রানে শেষের ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৭ রানে হেরে যায় তারা।
প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের চারজন ১৫ ছুঁয়েও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। শেষ দিকে ২০ বলে ৩৬ রানের ইনিংসে পরাজয়ের ব্যবধানই শুধু কমাতে পারেন পাঁচ নম্বরে নামা জাকের আলি। শেষ ছয় ব্যাটসম্যানের কেউ দুঅঙ্ক ছুঁতে পারেননি।
তিন বিভাগে হতশ্রী পারফরম্যান্সের পর ম্যাচ শেষে দায় মেনে নেন লিটন।
“অবশ্যই (ভালো শুরুর পর হেরে যাওয়া হতাশাজনক)… ম্যাচজুড়ে আমরা ভালো ব্যাটিং, ভালো বোলিং ও ভালো ফিল্ডিং করিনি। আমি কোনো কিছু বলছি না... তবে আমাদের শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এখনও দুটি ম্যাচ আছে।”
ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে ব্যাটিং-বোলিংয়ে ধারাবাহিকতার তাগিদ দিয়েছিলেন লিটন। সিরিজ শুরু করে অন্য বিভাগেও নিজেদের ঘাটতি টের পেয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
“অবশ্যই (ব্যাটিং-বোলিংয়ে ধারাবাহিকতা প্রয়োজন)। শুধু ব্যাটিং-বোলিং নয়, আমাদের ফিল্ডিংও ভালো করতে হবে। গতিময় খেলায় আপনাকে ভালো ফিল্ডিং করতে হবে। আমরা এই মুহূর্তে ভালো ফিল্ডিং করছি না।”
লিটনের দাবি, বাজে বোলিং-ফিল্ডিংয়ে দুইশর বেশি রান দেওয়ার পরও ম্যাচ জেতার বিশ্বাস ছিল তাদের।
“আমি নিশ্চিত, এই মাঠে ২০০ রান তাড়া করা সম্ভব। কারণ এই মাঠ খুবই গতিময়। উইকেটও ব্যাটিংয়ের জন্য খুব ভালো। মাঝের ওভারগুলোতেও আমরা ভালো ব্যাটিং করতে পারিনি। আমাদের শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।”
ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে শেষ দিকে একপ্রান্ত আগলে পরাজয়ের ব্যবধান কমান জাকের। শুধু এই ম্যাচই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে তিন সংস্করণেই বাংলাদেশের বিপদের বন্ধু হয়ে গেছেন তিনি।
গত বছর ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত জাকেরের চেয়ে বেশি রান করতে পারেননি বাংলাদেশের কেউ। দলের চাপের মুখে বেশ কয়েকটি মূল্যবান ইনিংস খেলেন তিনি।
তবে একক পারফরম্যান্সে যে ফল পক্ষে আনা কঠিন, সেই বাস্তবতাই মনে করিয়ে দিলেন লিটন।
“গত এক বছর ধরে জাকের আলি সত্যিই ভালো খেলছে। এই মুহূর্তে সে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। কিন্তু কোনো ক্রিকেটার একা ম্যাচ জেতাতে পারে না। আমাদের সবার অবদান রাখতে হবে।”
বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে কোনো ব্যর্থতায় কোচিং প্যানেলের পক্ষ থেকে প্রায়ই বলা হয়, স্কিল ঠিকই আছে ক্রিকেটারদের। মূল সমস্যা মানসিকতায়। এবার সেই একই সুরে কথা বললেন লিটন।
“অনুশীলন করে (কোনো পরিবর্তন) নয়। মানসিকতার জায়গা থেকে আমাদের চিন্তা করতে হবে। আমার মনে হয়, ক্রিকেট শুধু অনুশীলনের ব্যাপার নয়। আমাদের ক্রিকেট নিয়ে চিন্তা করতে হবে এবং মাঠে বাস্তবায়ন করতে হবে।”
একই মাঠে শুক্রবার সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি খেলবে বাংলাদেশ।