Published : 07 Mar 2025, 12:14 PM
আগামী বছর ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্বপ্নপূরণে আরেকটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে ইতালি। কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে তার কানাডার সাবেক অধিনায়ক ও ওয়ানডে বিশ্বকাপের একসময়কার দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান জন ডেভিসনকে।
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক টেস্ট ব্যাটসম্যান জো বার্নস গত কয়েক মাস ধরেই ইতালির অধিনায়ক। তার আর ডেভিসনের যুগলবন্দিতে ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব উতরানোর অভিযানে নামবে দলটি।
ডেভিসনের নামটি ক্রিকেট অনুসারীদের ডুবিয়ে দিতে পারে রোমাঞ্চকর স্মৃতির সাগরে। ২০০৩ বিশ্বকাপে কানাডার হয়ে খেলতে এসে আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার।
আদতে যদিও তিনি খেলতেন অস্ট্রেলিয়ায়। জন্ম ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় হলেও ছেলেবেলায় চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়। মেলবোর্নে গ্রেড ক্রিকেট খেলে নজর কেড়ে ১৯৯৩ সালে সুযোগ পান অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ক্রিকেট একাডেমিতে। পরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেন ভিক্টোরিয়ার হয়ে। সেখানে অনিয়মিত হওয়ায় পরে পাড়ি জমান সাউথ অস্ট্রেলিয়ায়।
১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান মৌসুম শেষের বিরতিতে তিনি কানাডায় গিয়েছিলেন একটি দলে ক্রিকেটার ও কোচ হিসেবে। দ্রুতই প্রস্তাব পান কানাডার হয়ে খেলার। লুফে নেন তিনি সেই সুযোগ। বাছাইপর্ব উতরে কানাডা জায়গা করে নেয় ২০০৩ বিশ্বকাপে।
অভিষেকে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৮ রানে আউট হলেও বল হাতে দুটি উইকেট নিয়ে অবদান রাখেন স্মরণীয় এক জয়ে। গোটা ক্রিকেট বিশ্বে খবরের শিরোণামে আসেন তিনি বিশ্বকাপে কানাডার চতুর্থ ম্যাচে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরিয়নে ৭৬ বলে ১১১ রানের ইনিংস খেলে তাক লাগিয়ে দেন।
বিধ্বংসী ইনিংসটির পথে সেঞ্চুরি করেন তিনি ৬৭ বলে, তখন যা ছিল বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরি। পরে ২০১১ বিশ্বকাপে রেকর্ডটি ভেঙে দেন আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও’ব্রায়েন।
শেষ নয় সেখানেই, ওই বিশ্বকাপে পরে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষেও ৬২ বলে ৭৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। সেই ইনিংসে ফিফটি করেছিলেন ২৫ বলে, বিশ্বকাপে যা ছিল তৃতীয় দ্রুততম ফিফটির কীর্তি। এছাড়া বল হাতে আসরের সাত ম্যাচে উইকেট নিয়েছিলেন ১৪টি।
বিশ্বকাপের পরের বছর কানাডার অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পান ডেভিসন। ৫০ বছরের বেশি সময় পর কানাডা যখন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতে নামে, ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের সেই ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রেরি বিপক্ষে ১৭ উইকেট নিয়ে ইতিহাস গড়েন তিনি। সঙ্গে ব্যাট হাতে খেলেন ৮৪ রানের ইনিংস।
২০০৭ বিশ্বকাপে কানাডার বাছাইপর্ব উতরাতেও তার ছিল বড় ভূমিকা। অধিনায়ক হিসেবে ওই বিশ্বকাপে গিয়ে অবশ্য ততটা ভালো করতে পারেননি আগের বিশ্বকাপের মতো। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে শুধু ৩১ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলেন। পরে ২০১১ বিশ্বকাপেও খেলেন তিনি কানডার হয়ে।
খেলা ছাড়ার পর মূলত স্পিন বোলিং কোচ ও পরামর্শক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটসহ নানা জায়গা কাজ করছিলেন তিনি। ন্যাথান লায়ন থেকে শুরু করে হালের মিচেল সোয়েপসন, ম্যাথু কুনেমান, সবার সঙ্গে কাজ করেছেন নিবিড়ভাবে।
এবার প্রধান কোচের দায়িত্ব নিয়ে ইতালির স্বপ্নটাকে নিজের স্বপ্ন করে নিয়েছেন ডেভিসনও।
“ইতালিয়ান মেন’স টি-টোয়েন্টি প্রোগ্রামের দায়িত্ব পেয়ে আমি রোমাঞ্চিত ও সম্মানিত। এখানকার ক্রিকেটার ও পুরো প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত আছেন যারা, তাদের সম্পর্কে শোনার পর রাজি হতে খুব একটা সময় লাগেনি আমার।”
“কানাডার হয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব উতরানোর রোমাঞ্চ আমি অনুভব করেছি। সেই একই পুলক বয়ে আনতে চাই বৈচিত্রময় ও নিবেদিত একদল ক্রিকেটার এবং কোচিং স্টাফের সমন্বয়ে গড়া এই ইতালি দলে।”
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২৩ টেস্ট ও ৬ ওয়ানডে খেলা জো বার্নস গত বছর সিদ্ধান্ত নেন মায়ের দেশ ইতালির হয়ে খেলার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অভিষেকে ইতালির হয়ে করেছেন ফিফটি। সবশেষ ম্যাচ রোমানিয়ার বিপক্ষে খেলেছেন ৫৫ বলে ১০৮ রানের ইনিংস।
অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত দুই নাম জেইক ডোরান ও টম ওয়ার্ডও ইতালির হয়ে খেলার অপেক্ষায় আছেন। সব মিলিয়ে বেশ আটঘাট বেঁধেই নামছে ইতালি।