Published : 30 May 2025, 12:56 AM
পাঁচটি জুটি ছাড়াল পঞ্চাশ, যার একটি পৌঁছে গেল শতকের দুয়ারে। চার ব্যাটসম্যান করলেন ফিফটি। তাতে যে উচ্চতায় উঠল ইংল্যান্ডের স্কোর, তার ধারেকাছেও যেতে পারল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
পূর্ণ মেয়াদে সাদা বলের অধিনায়ক হিসেবে হ্যারি ব্রুকের শুরুটা হলো দুর্দান্ত। প্রথম ওয়ানডেতে ২৩৮ রানের জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড।
টানা সাত ওয়ানডেতে হারের পর জয়ের স্বাদ পেল ২০১৯ বিশ্বকাপ জয়ীরা।
এজবাস্টনে বৃহস্পতিবার ঠিক ৪০০ রানের পুঁজি গড়ে ইংলিশরা। রান তাড়ায় শুরু থেকে ধুঁকতে ধুঁকতে কোনোমতে ১৬২ পর্যন্ত যেতে পারে ক্যারিবিয়ানরা।
এই সংস্করণে রানের দিক থেকে ইংল্যান্ডের এর চেয়ে বড় জয় আছে কেবল একটি, ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৪২ রানে।
একপর্যায়ে ১২৪ রানে ৯ উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চোখ রাঙাচ্ছিল তাদের সবচেয়ে বড় পরাজয়ের রেকর্ড (২৫৭ রান)। আলজারি জোসেফ ও জেডেন সিলসের ৩৮ রানের শেষ উইকেট জুটিতে সেই শঙ্কা এড়াতে পারে তারা।
এগারো নম্বরে নামা সিলসের অপরাজিত ২৯ রানই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে সর্বোচ্চ! ওয়ানডেতে এগারো নম্বরে নেমে দলের সর্বোচ্চ রান করা স্রেফ সপ্তম ব্যাটসম্যান তিনি।
বিরল এক নজির দেখা যায় ম্যাচের প্রথমভাগে। চার হাজার ৮৮০ ম্যাচের ওয়ানডে ইতিহাসে কোনো ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি ছাড়া প্রথম চারশ রানের দলীয় ইনিংস ইংল্যান্ডের এটি।
ইংলিশদের হয়ে সর্বোচ্চ ৮২ রান করেন জ্যাকব বেথেল। ছয় নম্বরে নেমে ৫৩ বলে ৮ চার ও ৫ ছক্কায় গড়া এই অলরাউন্ডারের ইনিংসটি। পরে বল হাতে একটি উইকেট নিয়ে ম্যাচ-সেরার পুরস্কার জেতেন তিনি।
বেথেল ছাড়া ফিফটি করেন বেন ডাকেট, জো রুট ও ব্রুক।
ফিল্ডিংয়ে একটি বিশ্ব রেকর্ডও স্পর্শ করেন সাদা বলের নতুন ইংলিশ অধিনায়ক। ক্যাচ নেন তিনি পাঁচটি, ওয়ানডে ইনিংসে কোনো আউটফিল্ড ফিল্ডারের যা সর্বোচ্চ। ১৯৯৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই পাঁচটি ক্যাচ নিয়ে রেকর্ডটি গড়েছিলেন সর্বকালের সেরা ফিল্ডারদের একজন হিসেবে বিবেচিত জন্টি রোডস। দক্ষিণ আফ্রিকান গ্রেটের পাশে বসলেন ব্রুক।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে জেমি স্মিথ ও ডাকেটের ব্যাটে ভালো শুরু পায় ইংল্যান্ড। ৪২ বলে ৬৪ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে ফেরেন প্রথমবার ওপেনিংয়ে নামা স্মিথ (২৪ বলে ৩৭)।
পাওয়ার প্লেতে ইংল্যান্ড করে ১ উইকেটে ৯০ রান। পঞ্চাশোর্ধ জুটি আসে পরের দুটি উইকেটেও। ৩৪ বলে ফিফটি করেন ডাকেট। ৬ চার ও এক ছক্কায় ৪৮ বলে ৬০ রান করে ফেরেন তিনি।
তিনে নেমে রুট ফিফটি করেন ৬০ বলে। তার ব্যাট থেকে আসে ৫ চারে ৬৫ বলে ৫৭ রান।
ব্রুকের রান একপর্যায়ে ছিল ১৯ বলে ১৩। এরপর জাস্টিন গ্রেভসের তিন বলের মধ্যে দুই ছক্কায় ডানা মেলে দেন তিনি। ফিফটি পূর্ণ করেন ৪১ বলে। ফিফটির পর তিনিও বেশিদূর যেতে পারেননি, ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৫ বলে করেন ৫৮।
পাঁচ নম্বরে নেমে সাবেক অধিনায়ক জস বাটলার ৩২ বলে করেন ৩৭ রান। এরপরই ইনিংস সেরা ৪৪ বলে ৯৮ রানের বিস্ফোরক জুটি ইংল্যান্ড পায় বেথেল ও উইল জ্যাকসের ব্যাটে।
৫ চার ও এক ছক্কায় ২৪ বলে ৩৯ রান করে থামেন জ্যাকস। ৪২ বলে ফিফটি ছুঁয়ে এগিয়ে যান বেথেল। শেষ ওভার শুরু করেন তিনি ৮২ রান নিয়ে, তবে আউট হয়ে যান সিলসের প্রথম বলে। ওয়ানডেতে তার সর্বোচ্চ ইনিংস এটি।
৮৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফলতম বোলার সিলস।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম চার ওভারের মধ্যে দুই ওপেনার গ্রেভস ও ব্র্যান্ডন কিংকে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর নিয়মিতই উইকেট হারায় তারা। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি কেউই।
আগের দুই ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা কেসি কার্টি থামেন ২২ রানে। গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেকে ব্যাটিংয়ের সুযোগ না পাওয়া জুয়েল অ্যান্ড্রু এবার ফেরেন ৮ রানে।
৭৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে কোনোমতে দেড়শ ছাড়াতে পারে তারা।
২২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের সফলতম বোলার জেমি ওভারটন। সাকিব মাহমুদ ৩ উইকেট নেন ৩২ রানে।
আগামী রোববার কার্ডিফে হবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৪০০/৮ (স্মিথ ৩৭, ডাকেট ৬০, রুট ৫৭, ব্রুক ৫৮, বাটলার ৩৭, বেথেল ৮২, জ্যাকস ৩৯, ওভারটন ১, কার্স ৩*, রাশিদ ২*; ফোর্ড ৮-০-৮৮-০, সিলস ৯-০-৮৪-৪, আলজারি ১০-০-৬৯-২, চেইস ৬-০-৪১-০, মোটি ৭-০-৩৯-০, গ্রেভস ১০-০-৬৮-২)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৬.২ ওভারে ১৬২ (কিং ১০, গ্রেভস ৪, কার্টি ২২, হোপ ২৫, অ্যান্ড্রু ৮, জাঙ্গু ১৪, চেইস ৯, ফোর্ড ১, মোটি ১৮, আলজারি ১২, সিলস ২৯*; সাকিব ৭-১-৩২-৩, কার্স ৬-০-৩৯-১, ওভারটন ৫.২-০-২২-৩, বেথেল ২.৪-০-১৮-১, রাশিদ ৫.২-০-৫০-২)
ফল: ইংল্যান্ড ২৩৮ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে প্রথমটির পর ১-০তে এগিয়ে ইংল্যান্ড
ম্যান অব দা ম্যাচ: জ্যাকব বেথেল
আরও পড়ুন: