Published : 14 Jun 2025, 08:46 PM
গত কয়েক দিনের মতো শনিবার সকাল থেকে মিরপুরের জাতীয় ক্রিকেট একাডেমি মাঠে চলছিল সাদা বলের ক্রিকেটারদের অনুশীলন। এর মাঝে হঠাৎ ক্র্যাচে ভর দিয়ে একাডেমির দিকে যেতে দেখা যায় আলিস আল ইসলামকে। অথচ সব ঠিক থাকলে তাসকিন আহমেদ, তাওহিদ হৃদয়দের সঙ্গে তারও এখন ব্যাট-বল নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা ছিল।
তবে সবশেষ বিপিএলে পাওয়া হাঁটুর চোট দীর্ঘ সময়ের জন্য রহস্য স্পিনারকে ছিটকে দিয়েছে মাঠের বাইরে। দেশের বাইরে থেকে অস্ত্রোপচারের পর এখন বিপিএলের সামনের আসর দিয়ে মাঠে ফেরার লক্ষ্য ২৮ বছর বয়সী স্পিনারের।
শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গত বিপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে বল হাতে ১৪ রানে ১ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়েও বড় অবদান রাখেন আলিস। ম্যাচের শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে নিশ্চিত করেন দলের জয়।
তবে এর দুই বল আগে দ্রুত রান নিতে গিয়ে বাঁ পায়ের চোটে মাঠ ছেড়ে যেতে হয় তাকে। পরে উইকেট পড়লে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে কাভারের ওপর দিয়ে চার মেরে তিনিই হয়ে যান শেষের নায়ক।
জয় নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলিসকে মধ্যমণি করে উল্লাস শুরু করেন চিটাগং কিংসের ক্রিকেটাররা। তবে তখনও পায়ের চোটে ঠিকমতো হাঁটতে পারছিলেন না তিনি। সেই চোটই এখন তাকে রেখেছে মাঠের বাইরে।
বিপিএল চলাকালেই স্ক্যান করানো হলে জানা যায়, হাঁটুর এসিএল (অ্যান্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট) চোটে পড়েছেন আলিস। তাই অস্ত্রোপচার বাধ্যতামূলক ছিল তার। শুরুতে ব্যাংকক ও পরে ভারতে তার অস্ত্রোপচারের কথা ভেবেছিল বিসিবি।
তবে শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় গত মাসে করানো হয় আলিসের অস্ত্রোপচার। ছুঁড়ি-কাঁচির নিচে যাওয়ার পর ২১ দিন পুরোপুরি বিশ্রামেই ছিলেন তিনি। পরে বিসিবির তত্ত্বাবধানে গত বৃহস্পতিবার শুরু করেন পুনর্বাসন প্রক্রিয়া।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপে আলিস জানালেন, সপ্তাহ ধরে ধরে তৈরি করা হয়েছে তার পুনর্বাসন পরিকল্পনা।
“পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছি। আশা করি সব ঠিকঠাক থাকলে দ্রুতই সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরতে পারব। হাঁটা বা দৌড়ানো শুরুর ব্যাপারে আসলে এখনই বলা কঠিন।”
“এসিএলের সার্জারির ক্ষেত্রে সপ্তাহ ধরে ধরে পরিকল্পনা সাজাতে হয়। হাঁটুর জন্য আপাতত প্রথম সপ্তাহের কাজ শুরু করেছি। তারপর শরীরের অবস্থা দেখে তারা ঠিক করবে দ্বিতীয় সপ্তাহে কীভাবে এগোব। এভাবে সপ্তাহ হিসাব করে এগোতে হবে।”
ক্রীড়াবিদদের ক্ষেত্রে এসিএলের চোট প্রায় নিয়মিত ঘটনা। ২০২৩ সালের জুনে ম্যাচে বোলিং করার সময় একই চোটে পড়েছিলেন পেসার ইবাদত হোসেন চৌধুরি। অস্ত্রোপচার করানোর পরও প্রায় এক বছর লেগেছে তার মাঠে ফিরতে।
তাই আলিসের মাঠে ফিরতে কত দিন লাগতে পারে, তা নিয়ে এখনই কিছু বলতে চান না বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরি।
“আলিসের অস্ত্রোপচারের ২১ দিন হয়ে গেছে। তাই গত পরশু (বৃহস্পতিবার) থেকে আমরা পুনর্বাসন শুরু করে দিয়েছি। এসিএলের ক্ষেত্রে সাধারণত ৯ মাস সময় লাগে সুস্থ হতে। এটা আরও বেশি লাগতে পারে, ইবাদতের ক্ষেত্রেই যেমন বেশি লেগেছে। আবার এর চেয়ে কম সময়েও হতে পারে।”
রহস্য স্পিনার নিজে অবশ্য এত দিন অপেক্ষা করতে চান না। বিপিএলের এক আসরে চোট পাওয়া আলিস মাঠে ফিরতে চান আরেকটি বিপিএল দিয়েই।
“এসব ক্ষেত্রে পুনর্বাসন অনেক লম্বা হয়। আসলে এখনই নির্দিষ্ট কিছু বলা সম্ভব না। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করবে, কবে নাগাদ বোলিং শুরু করতে পারব। পুরো প্রক্রিয়া কতটা ভালো হচ্ছে, সেটার ওপর সব কিছু নির্ভর করবে।”
“আশা তো একটা থাকেই। আমার আশা হচ্ছে, বিপিএল দিয়ে মাঠে ফিরব। বিপিএলটা টার্গেটে রেখে এগোনোর চেষ্টা করছি।”
চোটের সঙ্গে আলিসের লড়াই বেশ পুরোনো। এর আগেও হাঁটুর চোটে দীর্ঘ দিন তাকে থাকতে হয়েছে মাঠের বাইরে। ২০১৯ সালের বিপিএলে নেটে বোলিং করতে দেখে আলিসকে মূল দলে নেন ঢাকা ডায়নামাইটসের প্রধান কোচ খালেদ মাহমুদ।
রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করে হইচই ফেলে দেন আলিস। তবে ওই আসরে অবৈধ বোলিং অ্যাকশনে ধরা পড়ে যান তিনি। অ্যাকশনের পরীক্ষা দেওয়ার আগেই চোটে পড়ে প্রায় ৮ মাসের জন্য ছিটকে যান।
পরে অ্যাকশন শুধরে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরলেও তেমন ভালো করতে পারছিলেন না। গত বছরের বিপিএলে ড্রাফটের বাইরে থেকে তাকে দলে নেয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বৈচিত্রের পসরা মেলে ৮ ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে জাতীয় দলেও ডাক পেয়ে যান আলিস।
আবার বাধ সাধে চোট। বিপিএলের শেষ দিকে আঙুলের চোটে জাতীয় দল থেকে ছিটকে যান। পরে মাঠে ফিরলেও জাতীয় দলের দরজা আর খোলেনি আলিসের জন্য।
ধারাবাহিকতা ধরে রেখে বিপিএলের সবশেষ আসরে ১৩ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়ে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে আবার ডাক পাওয়ার জন্য নিজের কাজটা ঠিকই করেছিলেন তিনি। কিন্তু চোটে পড়ায় আবারও হতাশার গল্প।
তাই এখন আর এসব নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে না আলিসের।
“(ভালো পারফর্ম করে জাতীয় দলের কাছে এলেই চোটের ধাক্কা) এই বিষয়টা নিয়ে আমি আসলে কথা বলতে চাচ্ছি না। একসময় এসব নিয়ে অনেক কথা বলেছি। এটা নিয়ে আমার কথা বলতে ভালো লাগে না।”
২০১৯ সালের বিপিএলের মতো সবশেষ আসরের শেষ দিকেও আলিসের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আম্পায়াররা। পরে অ্যাকশনের পরীক্ষা দিয়েই টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচগুলো খেলেন তিনি।
রান-আপের সময় বলটা নিজের হাতে লুকিয়ে রেখে অনেকটা সুনিল নারাইন বা সিকান্দার রাজার মতো অ্যাকশনে বোলিং করেন আলিস। ভিন্ন ঘরানার এই বোলিং অ্যাকশন নিয়ে অন্যদের সন্দেহ বা প্রশ্ন জাগা এখন আর দুর্ভাবনায় ফেলে না তাকে।
বরং এটিকে বাস্তবতা হিসেবে ধরেই সামনের দিনগুলোতে খেলতে চান এই রহস্য স্পিনার।
“ভিন্ন কিছু করতে গেলে বিতর্ক হবেই। এটা স্বাভাবিক। বিতর্ক হবে, সমাধান হবে- এভাবেই চলবে। আমার বোলিং অ্যাকশন অর্থডক্স না। আর খালি চোখে তো কিছু ধরা যায় না। তাই যে কারও মনে হতেই পারে যে, কোনো ভুল হয়তো আছে। এটা সারাজীবনই হয়তো হবে। যারাই আন-অর্থডক্স বোলিং করবে, সারাজীবন এটা বয়ে যেতে হবে।”
“তাই এটা বদলানোর কিছু নেই। আমাকে বদলাতে বলাও হয়নি। আমি জানি আমার বোলিং অ্যাকশন কী বা কেমন। যাদের সন্দেহ জাগে, তারা ল্যাবে পরীক্ষা করাক! আমার এতে কোনো আপত্তি নেই। এখন এসব মেনে নিয়েছি। আন-অর্থডক্স অ্যাকশনের ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক। সারাজীবনই হবে।”