Published : 18 May 2025, 10:51 AM
নিজের তৃতীয় ওভারেই একটি উইকেট। পঞ্চম ওভারে আরেকটি। পাঁচ ওভারের স্পেলে দুই ওপেনারই কুপোকাত। মন্থর পিচেও প্রাণবন্ত পেস বোলিং। কে বলবে এই বোলারের বয়স কিছুদিন পর হবে ৪৩ আর তিনি ম্যাচ খেলতে নেমেছেন ১০ মাসেরও বেশি সময় পর!
বোলারের নাম যদি হয় জেমস অ্যান্ডারসন, তাহলে অবশ্য বিস্ময়ের কিছু নেই। তিনি তো চিরতরুণ।
গত জুলাইয়ের পর যে কোনো ধরনের ক্রিকেটে প্রথমবার মাঠে নেমেই যথারীতি উজ্জ্বল ইংল্যান্ডের পেস কিংবদন্তি। ফেরার ম্যাচে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে প্রথম স্পেলে উইকেট শিকার করেছেন দুটি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার উইকেট সংখ্যা এখন ১ হাজার ১২৮টি!
গত জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লর্ডস টেস্ট দিয়ে বর্ণাঢ্য টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টানেন অ্যান্ডারসন। বিদায়ী টেস্টে চার উইকেট শিকার করে টেস্ট ইতিহাসের সফলতম পেসার থেমে যান ৭০৪ উইকেট নিয়ে। পরের টেস্ট থেকেই শুরু হয় তার নতুন অধ্যায়। বোলিং পরামর্শক হিসেবে যোগ দেন তিনি ইংল্যান্ডের কোচিং স্টাফে। সোজাসুজি বলা যায়, পেস বোলিং কোচ।
শুরুতে শুধু ইংলিশ গ্রীষ্মের জন্যই ছিল তার দায়িত্ব। সেখানে তার কার্যকারিতা দেখে পরে পাকিস্তান ও নিউ জিল্যান্ড সফরেও তাকে ধরে রাখা হয় কোচিং স্টাফে। এর মধ্যে টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ফেরার চেষ্টা করেছেন তিনি, নাম লিখিয়েছেন এমনকি আইপিএলের নিলামেও। কিন্তু হালে ঠিক পানি পাননি।
তার খেলোয়াড়ি জীবন তখন শেষ বলেই মনে হচ্ছিল। কোচিংয়ের পাশাপাশি টিভিতে ধারাভাষ্যকার ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছিলেন। কিন্তু গত জানুয়ারিতে জানা যায়, মাঠে ফেরা নিয়ে ল্যাঙ্কাশায়ারের সঙ্গে আলোচনা চলছে তার। কদিন পর নতুন চুক্তিও হয়ে যায়!
ফেরার কথা ছিল তার এপ্রিলেই। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় পায়ের পেশির চোট। আবার অনিশ্চয়তায় পড়ে যায় মাঠে ফেরা। এর আগে দা হান্ড্রেড-এর ড্রাফটে নাম লিখিয়ে দল পাননি। চোটের কারণে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে ল্যাঙ্কাশায়ারের প্রথম পাঁচ ম্যাচে মাঠের বাইরে থাকতে হলো তাকে। অবশেষে সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে ফিরলেন শুক্রবার ডার্বিশায়ারে বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ম্যাচের প্রথম দিনে ল্যাঙ্কাশায়ার ব্যাট করায় অ্যান্ডারসনকে নামতে হয়নি। দ্বিতীয় দিনে ৪৫৮ রানে অলআউট হয় দল। ১১ নম্বরে নেমে তিনি অপরাজিত থাকেন চার রানে।
এরপর শুরু তার আসল কাজ। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের উইকেট এই ম্যাচে কিছুটা মন্থর। ডার্বিশায়ার শুরু করে শুরুতেই বেশ কয়েকটি বাউন্ডারি দিয়ে। তবে দ্রুতই সেই উইকেটেও প্রাণের সঞ্চার করেন পেস বোলিংয়ের শিল্পী অ্যান্ডারসন।
তার প্রথম শিকার ডার্বিশায়ারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ক্যালেব জুয়েল। রাউন্ড দা উইকেটে করা সুইঙ্গিং ডেলিভারির কোনো জবাব ছিল না বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের। ডিফেন্স করে তিনি দেখতে পান বল স্টাম্পে ছোবল দিচ্ছে বল আর বাতাসে উড়ছে বেলস।
আরেকপ্রান্তে ছয়টি বাউন্ডারি মেরে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিলেন যিনি, সেই ডেভিড লয়েডকেও ফেরান অ্যান্ডারসন। ক্ষুরধার শর্ট ডেলিভারি এড়াতে পারেননি ১২৪ ম্যাচ খেলা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। তার গ্লাভস ছুঁয়ে বল যায় কিপারের কাছে।
পাঁচ ওভারের স্পেলের পর অ্যান্ডারসনকে আর বোলিংয়ে দেখা যায়নি এ দিন। স্পিন সহায়ক উইকেটে ল্যাঙ্কাশায়ারের স্পিনাররা পরে আরও দুটি উইকেট নেন। ৪ উইকেটে ১১২ রান নিয়ে দিন শেষ করে ডার্বিশায়ার।
তিন সংস্করণ মিলিয়ে স্বীকৃত ক্রিকেটে অ্যান্ডারসনের উইকেট সংখ্যা এখন ১হাজার ৫২৭। এ দিন আর দেখা না গেলেও এই গ্রীষ্মে তার ঝলক অনেকবার দেখা যাবে নিশ্চিতভাবেই। সব ঠিকঠাক থাকলে ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে এবারের টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টেও খেলবেন তিনি। সেক্ষেত্রে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দেখা যাবে তাকে প্রায় ১২ বছর পর।