Published : 13 May 2025, 03:25 PM
চট্টগ্রামের বহুল প্রতীক্ষিত নতুন কালুরঘাট সেতুর (রেল কাম সড়ক) ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হচ্ছে বুধবার।
এদিন দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস থেকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
কালুরঘাট সেতুর প্রকল্প পরিচালক আবদুল কালাম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বুধবার সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
“বলতে গেলে সেতু নির্মাণের কাজ আমাদের শুরু হয়ে গেছে। আমাদের সম্ভ্যবতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। পরামর্শক নিয়োগের টেন্ডারও আহ্বান করা হয়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে (অগাস্ট-সেপ্টেম্বর) ভরা জোয়ারের সময় নদী শাসন সংক্রান্ত সমীক্ষার কাজ হবে।”
সব মিলিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণ কাজ দৃশ্যমান হবে বলে আশা প্রকল্প পরিচালকের।
বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১১ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাস্তবায়ন হতে যাওয়া এ প্রকল্পে মূল সেতুর আয়তন হবে ৭০০ মিটার। সেতুর প্রস্ত হবে ৩১ দশমিক ৯৫ মিটার।
সেতুর জন্য ছয় দশমিক ২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট এবং সাড়ে চার কিলোমিটার বাঁধসহ রেল লাইন নির্মাণ করা হবে।
সেতুর উচ্চতা হবে ১২ দশমিক ২০ মিটার, যার কারণে সেতুর নিচ দিয়ে সহজে বড় নৌযান চলাচল করতে পারবে। সেতুতে থাকবে ডুয়েল গেজ রেল লাইন।
এ সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৫৬০ কেটি ৭৬ লাখ টাকা। যার মধ্যে সরকারি অর্থায়ন থাকবে চার হাজার ৪৩৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং বিদেশি ঋণ সাত হাজার ১২৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার একাংশের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম বর্তমান কালুরঘাট সেতুটি প্রায় শতবর্ষী। সড়ক পথের সব ধরনের যানবাহনের পাশাপাশি এ সেতু দিয়ে ট্রেনও চলাচল করে।
কর্ণফুলী নদীর উপর নতুন সেতু নির্মাণের জন্য বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তা থেমে যায় নানা কারণে। নানা প্রতিকূলতা উতরে গেল বছরের ২৭ জুন বাংলাদেশ সরকারের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ১৭ নভেম্বর প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন হয়েছে। প্রকল্পের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর।
১৯৩০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে রেল যোগাযোগের জন্য এ সেতু নির্মাণ করা হয়। পরে ১৯৫৮ সালে এ সেতুটি সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার।
নব্বই দশকে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে ট্রেন চলাচল সীমিত হয়ে পড়লে কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচলে চাপ বাড়ে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু ভেঙে গেলে কালুরঘাট সেতু হয়ে ওঠে নগরীর সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয়টি উপজেলা এবং কক্সবাজার, বান্দরবান জেলার যোগাযোগের অন্যতম সড়ক।
স্থানীয়দের ভাষ্য, ২০১০ সালে তৃতীয় শাহ আমানত সেতুর উদ্বোধনের আগ পর্যন্ত কালুরঘাট সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচলের কারণ সেতুটি আরও নাজুক হয়ে পড়ে।
২০০১ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পর ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুই দফায় এ সেতুটি বন্ধ রেখে সংস্কার কাজ করেছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
কক্সবাজারের পথে রেল চালুর জন্য কালুরঘাট সেতু সংস্কারের জন্য ২০২৩ সালের ১ অগাস্ট থেকে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে একই বছরের ৫ নভেম্বর কক্সবাজারের পথে রেল চলাচল শুরু হয়। সেতুটি গত বছরের অক্টোবরে সাধারণ যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হলেও ৮ ফুটের উপরে কোনো যানবাহন এ সেতু নিয়ে চলাচল করতে পারে না। এ কারণে বড় বাস ট্রাক, কভার্ড ভ্যান পারাপারের ভরসা কেবল ফেরি।
এদিকে সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের খবরে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে খুশির জোয়ার বইছে। আগামী ১৫ মে তারা আনন্দ মিছিলের আয়োজন করেছে। সেদিন সকাল ৯টায় কালুরঘাটের পশ্চিমপ্রান্ত থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে পূর্ব প্রান্তে গিয়ে শেষ হবে।
এক দশক ধরে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে ‘বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ’।
এ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সাংবাদিক মুস্তফা নঈম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ সেতু নির্মাণের কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পাশাপাশি বান্দরবান ও কক্সবাজারের মানুষের যোগাযোগের উপযোগিতা বেড়ে যাবে।
কক্সবাজারে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কারণে টানেল ও শাহ আমানত সেতুর ওপর চাপ তৈরি হবে। কালুরঘাট সেতু নির্মিত হলে চট্টগ্রামের সাথে এ যোগাযোগ অনেকটা সহজ হবে।
সেতু আন্দোলনের নেতা মুস্তফা নঈম বলেন, “সেতু নির্মাণের জন্য বিলম্বে হলেও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করায় আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হয়, সেজন্য সরকারের নজরদারিরও দাবি জানাচ্ছি।”
আরও পড়ুন
নতুন কালুরঘাট সেতুর নির্মাণ কাজ চলতি বছরেই শুরুর দাবি
কালুরঘাটে সেতু নির্মাণে ৮২ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া