চট্রগ্রাম ব্যুরো
Published : 27 May 2025, 01:15 AM
চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার ধারণক্ষমতা সাড়ে ৫৩ হাজার টিইইউস হলেও স্বাভাবিক সময়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজারের মত কন্টেইনার থাকে। এরমধ্যে প্রতিদিন গড়ে বন্দর থেকে খালাস হত চার হাজারের মত কন্টেইনার।
তবে সারাদেশের মত চট্টগ্রাম কাস্টমসের কর্মকর্তারা গত ১৪ মে থেকে কলম বিরতি শুরু করলে পণ্যের শুল্কায়ন, বিল অব এন্ট্রি দাখিল, কায়িক পরীক্ষাসসহ বিভিন্ন কাজে স্থবিরতা আসায় বন্দর থেকে কন্টেইনার খালাসের পরিমাণ কমে যায়। বাড়তে থাকে কন্টেইনার জট।
একইসঙ্গে বেড়েছে বন্দরে জেটিতে ভিড়তে অপেক্ষায় থাকা জাহাজের সংখ্যা এবং অপেক্ষার সময়। সোমবার থেকে কাস্টমস কর্মকর্তারা পুরোদমে কাজে ফিরলেও বন্দরের স্বাভাবিক অবস্থা এখনও ফেরেনি।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, গত রোববারে ২৪ ঘণ্টার হিসাবে বন্দরে জমে থাকা কন্টেইনার ছিল ৪২৩১৫ টিইইউস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার একক হিসেবে)। কাস্টমস কর্মকর্তারো পুরোদমে কাজে ফেরার পরও সোমবারের হিসাবে ২৪ ঘণ্টায় জমে থাকা কন্টেইনারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩৮২৭ টিইইউস এ।
অপরদিকে কলমবিরতি শুরুর আগে বন্দরে জমে থাকা কন্টেইনারের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৭ হাজার, গত বৃহস্পতিবার তা দাঁড়ায় ৪৩ হাজারে।
রোববার ২৪ ঘণ্টায় বন্দর থেকে কন্টেইনার খালাস (সরবরাহ) হয়েছে ২৭৪৯ টিইইউস। সোমবার খালাস হয়েছে ৩৭৫৫ টিইইউস। তবে স্বাভাবিক সময়ে বন্দর থেকে দিনে গড়ে চার হাজারের মত কন্টেইনার খালাস হয়ে থাকে।
রোববারে বন্দরে প্রবেশের জন্য বর্হিনোঙ্গরে অপেক্ষায় থাকা কন্টেইনারবাহী জাহাজের সংখ্যা ছিল ১৭টি। সোমবারে সেটি ১০ এ নেমে এসেছে।
কর্মবিরতি শুরুর আগে জেটিতে ভিড়তে জাহাজের অপেক্ষমান সময় যেখানে এক থেকে দুইদিনে নেমে এসেছিল, কর্মবিরতি শুরুর পর সেটি পাঁচ থেকে ছয় দিনে গিয়ে ঠেকেছে।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। কিন্তু কাস্টমস কর্মকর্তাদের কলমবিরতির কারণে বিল অব এন্ট্রি দাখিল, শুল্কায়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা আসে। ফলে বন্দর থেকে কন্টেইনার খালাস কমে আসে। এতে ইয়ার্ডে জমে থাকা কন্টেইনারের পরিমাণ বেড়ে গেছে।
আগামী মাসে কোরবানি ঈদের ১০ দিনের সরকারি ছুটিতে বন্দরের কার্যক্রম চালু থাকলেও কন্টেইনার ওঠা-নামাসহ খালাস কার্যক্রমে ধীরগতি আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে বন্দরে কন্টেইনার জট আবারও ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের মত।
কন্টেইনার খালাসে ধীরগতি এবং জাহাজের অপেক্ষমান সময় বাড়ার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। শুল্কায়ন কার্যক্রমে ধীরগতি হওয়ায় আমদানিকারকরা সঠিক সময়ে পণ্য খালাস নিতে না পারায় তাদের অতিরিক্ত মাশুলও গুনতে হচ্ছে।
শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাস্টমস কর্মকর্তাদের যে আন্দোলন সেটি অনাকাঙ্ক্ষিত। এ কারণে বন্দর থেকে ডেলিভারি কম হওয়ায় জমে থাকা কন্টেইনারের পরিমাণও বাড়ছে। এতে করে শিল্প কারখানার মালিকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
“সামনে কোরবানির ঈদে ১০ দিনের লম্বা বন্ধ রয়েছে। সেসময় বন্দর চালু থাকলেও সামগ্রিক কার্যক্রমে কিছুটা ধীরগতি আসে এবং কন্টেইনার জমে থাকার পরিমাণও বেড়ে যায়।”
বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব বলেন, “বন্দরকেন্দ্রিক কোনো আন্দোলন না হলেও কাস্টমস কর্মকর্তাদের কলমবিরতির প্রভাব এখানে পড়েছে। সামনে কোরবানের টানা ছুটি। সবমিলিয়ে বন্দর বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে পড়ছে।”
এতে পোশাক কারখানার মালিকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দাবি করে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পোশাক তৈরির কাঁচামাল বিদেশ থেকে থেকে আনা হয়। সেগুলো কারখানায় তৈরি করে পুনরায় বিদেশে রপ্তানি করা হয়।
“কন্টেইনার জট এবং খালাসে দেরি হওয়ার কারণে অনেক কারখানা তাদের আমদানি করা কাঁচামাল সময়মতো পাচ্ছে না। এতে করে তাদের শিপমেন্ট ফেল করার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে কারখানা মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”
এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বিজিএমইএ, শিপিং এজেন্টস, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ব্যাংক, কাস্টমসসহ সকল প্রকার স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের বৈঠক করে জরুরি কর্মপন্থা নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন আবু তৈয়ব।
চট্টগ্রাম বন্দরের মুখপাত্র নাসির উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বন্দরের সকলপ্রকার অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। কলমবিরতির কারণে জমে থাকা কন্টেইনারের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। কলমবিরতি প্রত্যাহার হওয়ার পর কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এবং ডেলিভারি কার্যক্রম বেড়েছে।”
চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ”কলমবিরতির সময় বাদে অন্য সময়ে আমরা স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। দিনের যেসব কাজ আমাদের কাছে থাকত তা ওইসময়ে শেষ করা হত।”
কলমবিরতি প্রত্যাহারের পরদিন কাস্টমসে পুরোদমে কাজ হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ”নির্দেশনা আছে দিনে জমে থাকা কাজ শেষ করে অফিস ত্যাগ করতে এবং সকলেই তা করছেন।”