Published : 18 Jun 2025, 04:01 PM
স্বামী-স্ত্রীর আলাদা বসবাস। কিন্তু ‘সন্তানকে দেখতে’ স্বামীর বারবার শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারতেন না সেই বাড়ির লোকজন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিবাদ হয়েছে।
এ বিবাদের জেরে খুন হয়েছেন এক যুবক। আর কারাগারে যেতে হয়েছে স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও শ্যালককে।
চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় তিন দিন আগে মো. হানিফ নামে এ যুবক খুনের ঘটনার তদন্তে বের হয়ে এসেছে এ তথ্য।
পুলিশ বলছে, শ্বশুর, শ্যালক ও শ্যালকের বন্ধু মিলে ছুরিকাঘাতে খুন করেছেন হানিফকে। তাতে সহযোগিতা করেছেন তার স্ত্রী ও শাশুড়ি।
১৫ জুন ভোরে বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকার মাঝের ঘোনা গলাচিপা কাঁচা রাস্তার মোড়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন নম্বর ৯৯৯ এ সংবাদ পেয়ে পুলিশ হানিফের লাশ উদ্ধার করে এবং তার স্ত্রী ও শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করে।
১৬ জুন রাতে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত সন্দেহে পুলিশ গ্রেপ্তার করে হানিফের শ্বশুর, শ্যালক ও শ্যালকের বন্ধুকে।
গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন- হানিফের শ্বশুর খোরশেদ মোল্লা (৫১), শ্যালক আরিফ মোল্লা, তার বন্ধু দেলোয়ার হোসেন বাবু (১৯), হানিফের স্ত্রী নুরজাহার আক্তার আঁখি (২২) ও শাশুড়ি রহিমা বেগমকে (৪৫)।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার এসআই মুহাম্মদ নূর ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, খোরশেদ, আরিফ ও বাবু আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন। সোমবার বিকালে আরিফ ও বাবুকে নগরীর প্রবর্ত্তক মোড় এবং রাতে খোরশেদকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গেইট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যে কারণে হত্যাকান্ড
হানিফ হত্যার ঘটনায় তার বাবা জামাল মিয়া বাদী হয়ে শ্বশুর খোরশেদ, শ্যালক আরিফ, স্ত্রী আঁখি ও শাশুড়ি রহিমাকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলাটি তদন্ত করছেন বায়েজিদ বোস্তামী থানার এসআই কাজী আবিদ হোসেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তদন্ত কর্মকর্তা আবিদ বলেন, প্রাথমিক তদন্তে তারা জেনেছেন স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকার পরও হানিফ বিভিন্ন সময়ে তার শ্বশুর বাড়িতে মেয়েকে দেখতে যেতেন। কিন্তু বিষয়টি মানতে পারতেন না শ্বশুর পক্ষের লোকজন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ঝগড়া বিবাদ হতো। তবুও হানিফ শ্বশুর বাসায় যাওয়া বন্ধ করেননি।
“১৫ জুন ভোর রাতে সে মাঝের ঘোনা এলাকায় তার শ্বশুর বাড়িতে গেলে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এর এক পর্যায়ে খোরশেদ ছুরি দিয়ে হানিফকে আঘাত করে। পরে হানিফ সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করলে আরিফ ও বাবুসহ তিন জনে মিলে তাকে ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।”
খোরশেদ ও আরিফ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা।
যেভাবে ঘটে হত্যাকাণ্ড
নিহত হানিফের বাবা জামাল মিয়ার করা মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০১৮ সালে হানিফ ও আঁখির বিয়ে হয়। পারিবারিক কলহের কারণে তারা আলাদা থাকছিলেন। হানিফ বিভিন্ন সময়ে তার স্ত্রী ও সন্তানকে নিজের বাসায় আনার চেষ্টা করলেও শ্বশুর, শাশুড়ি তাদের আসতে দিতেন না।
জানুয়ারি মাসে আঁখি তার স্বামী হানিফের বিরুদ্ধে আদালতে পারিবারিক আইনে একটি মামলা করেছেন।
জামাল মিয়ার অভিযোগ, ১৫ জুন রাত ৩টার দিকে আরেফিন গেইট এলাকায় দোকান থেকে হানিফকে মেয়ের অসুস্থতার কথা বলে ডেকে নিয়ে যান তার শ্বশুর খোরশেদ।
তার ছেলেকে ‘পরিকল্পিতভাবে’ হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “প্রাণ বাঁচাতে হানিফ দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় হত্যকারীরা তাকে ধাওয়া করে মাঝের ঘোনা ফরিদের বাড়ির কাছে গলচিপা কাঁচা রাস্তার ওপর নিয়ে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।”
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবিদ বলছেন, “হানিফের বাবা জামাল মিয়া তার ছেলেকে দোকান থেকে ডেকে নেওয়ার অভিযোগ করলেও আমরা প্রাথমিক তদন্তে সেটি পায়নি। ঘটনার দিনও হানিফ নিজ থেকে শ্বশুরের বাসায় গিয়েছিল।”
হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তিনি বলেন, হানিফের শ্বশুরের বাসা পাহাড়ি টিলা এলাকায়। রাতের বেলা হানিফ সেখানে গিয়ে ডাকাডাকি করায় তার শ্বশুর খোরশেদ পকেটে ছুরি নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে মোবাইলে ভিডিও করতে থাকেন।
“মোবাইলে ভিডিও করতে দেখে হানিফ উত্তেজিত হয়ে তার শ্বশুরকে ধাক্কা দেয়। এসময় খোরশেদ ছুরি দিয়ে তাকে আঘাত করে। হানিফ দৌঁড়ে পালানোর সময় তাকে ধাওয়া করে খোরশেদ, আরিফ ও বাবু। পরে তাকে ছুরিকাঘাতে মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা ঘরে চলে আসে।”
সুরতহালে হানিফের শরীরে ছুরির ১৭টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা বলেছে পুলিশ।
ছুরি ধুয়ে রেখে দেওয়া হয় ঘরে
পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর খোরশেদ ছুরিগুলো ঘরে নিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলেন। তাকে গ্রেপ্তারের পর ঘরে অভিযান চালিয়ে একটি ছুরির ডাইনিং টেবিলের নিচ থেকে, আরেকটি ছুরি ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে উদ্ধার করা হয়।