Published : 08 Jun 2025, 11:03 PM
বাঁধের পাথরের ব্লকে দাঁড়িয়ে সৈকতে তাকালে হাজারো মানুষের মিলন মেলাই চোখে পড়ে সবার আগে।
এত মানুষের আনন্দে সঙ্গ দিতে সাগরও বেশ শান্ত; উত্তাল ঢেউয়ের দেখা নেই; তাতে দর্শনার্থীরাও অখুশি নন।
বর্ণিল পোশাকে ঈদের ছুটি কাটাতে নগরী ও জেলার নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হন পতেঙ্গা সৈকতে।
কেউ এসেছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে; কারো সঙ্গী হয়েছেন বন্ধুরা।
রোববার ঈদের দ্বিতীয় দিন বিকালে পতেঙ্গা সৈকত পরিণত হয় জনারণ্যে। ঢেউয়ের দাপট না থাকায় অনেকেই নেমে পড়েন সৈকতে।
কেউ ঘোড়ায় চড়েন, কেউ ওঠেন স্পিডবোটে। সৈকতের অল্প পানিতে দাঁড়িয়ে পানি ছিটিয়ে খেলছিল শিশু-কিশোরদের কেউ কেউ।
সৈকতে হেঁটে সময় কাটানো মানুষের সংখ্যাও কমতি ছিল না। আবার রকমারি পণ্য নিয়ে হকাররাও আসেন সৈকতে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে পতেঙ্গা সৈকতে আসা শাহিনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সি-বিচ দেখতে চলে এসেছি। ঈদের পরদিন হওয়ায় গাড়ি পেতে একটু সমস্যা হয়েছে। কিন্তু সেটা কোনো বিষয় না। একটু পর বন্ধুদের সঙ্গে পানিতে নামব।"
বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি নগরীর নানা প্রান্ত থেকেও মানুষ এসেছে সৈকতে। তাদের একজন রবিউল আলম এসেছেন ছোটপোল এলাকা থেকে।
তিনি বলেন, "পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছি। ভেবেছিলাম লোক কম হবে আজ। এসে দেখি মানুষ আর মানুষ। ঈদের ছুটিতে পতেঙ্গায় এরকম ভিড় থাকলেই ভালো লাগে।
"খালি থাকলে ঈদ বলে মনে হয় না। সবাই মিলে আনন্দ করছে, এটাই তো মজা।"
স্টিলমিল এলাকার বাসিন্দা নাজিয়া বেগম বলেন, "আমরা বছরের অন্য সময়েও সৈকতে আসি। কিন্তু ঈদে পতেঙ্গা সৈকত অন্য রকম। হাজার হাজার মানুষ হয়। খুব ভালো লাগে।"
ভিড় থাকায় শামুক-ঝিনুকের গহনা বিক্রেতা, আচার বিক্রেতা, বিভিন্ন রকম খাবারের স্টল আর হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতারা নিজেদের ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ে নেমে পড়েছে সৈকতে।
অবশ্য একদিন আগেই শনিবার দুপুরে পতেঙ্গা সৈকতের ওয়াকওয়েতে বসানো ভাসমান দোকান সরাতে অভিযান চালান সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন নিজেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোববার বিকালে সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, "পতেঙ্গা সৈকত আমাদের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা আসেন।
"হাঁটাচলার পথ উন্মুক্ত রাখতে হবে। গতকাল আমি নিজে কিছু দোকান সরিয়েছি। জেলা প্রশাসক এবং সিডিএকে এ বিষয়ে ফোন করে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।"
তবে ঈদ আনন্দে আর হাজারো মানুষের সমাগমে এই বিধিনিষেধ তেমনটা মানা হচ্ছে না বলেই দেখা গেল রোববার বিকালে।
পানিতে নামার সময় পর্যটকদের বিধিনিষেধ মেনে চলার বিষয়ে সতর্ক করছিলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের চট্টগ্রাম রিজিয়নের পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "যারা স্পিডবোটে উঠবেন, তারা অবশ্যই লাইফ ভেস্ট ব্যবহার করবেন। আমাদের ওয়াচ টাওয়ার থেকেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
"হাজার হাজার পর্যটক পতেঙ্গা সৈকতে এসেছেন। তাই ভিড়ও আছে। পর্যটকদের সচেতন থাকতে আহ্বান জানিয়েছি। বিশেষ করে ভিড়ের মধ্যে শিশু এবং ব্যক্তিগত মূল্যবান সরঞ্জামের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছি। আমাদের টিম টহল দিচ্ছে।"
পতেঙ্গা সৈকত এলাকায় আসা পর্যটকদের সেবা দিতে লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেন্টার, ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার এবং হেল্প ডেস্ক আছে বলেও জানান ট্যুরিস্ট পুলিশের এই কর্মকর্তা।
পতেঙ্গার পাশাপাশি নগরীর ফয়'স লেক এলাকায় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা ও ফয়'স লেক এমিউজমেন্ট পার্ক ঘিরেও প্রচুর মানুষের সমাগম হয়েছে।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর শাহাদাৎ হোসেন শুভ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চিড়িয়াখানায় ১০ হাজার ৪৯৩ জন দর্শনার্থী এসেছেন।
"আবহাওয়া ভালো থাকায় আজ প্রচুর মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে এসেছেন।"
ফয়’স লেইক কমপ্লেক্সের পরিচালনাকারী কোম্পানি কনকর্ডের উপ-ব্যবস্থাপক (বিপণন) বিশ্বজিৎ ঘোষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোরবার বিকাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার দর্শনার্থী এসেছেন। আগামী কয়েক দিন ভিড় আরও বাড়তে পারে।
চট্টগ্রামের সবগুলো পর্যটন কেন্দ্র ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ট্যুরিস্ট পুলিশের চট্টগ্রাম রিজিয়নের পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক।