Published : 20 May 2025, 08:09 PM
এনবিআরকে দুভাগ করে অধ্যাদেশ জারির পর এ নিয়ে সংস্থার কর্মকর্তাদের প্রতিবাদের মধ্যে তাদের দাবি বিবেচনায় রেখে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গেজেট প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ৷
মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টার দপ্তরে এ নিয়ে এক বৈঠকের পর তিনি সংবাদিকদের বলেন, “এনবিআর পৃথকের বিষয়টি বাস্তবায়নের পর্যায় রয়েছে৷ অনেক কাজ আছে এসব নিয়ে। সে সময় আমরা দেখবো কতটুকু তাদের দাবি নেওয়া যায়। কিন্তু তাদের বিষয়গুলো যেভাবেই হোক যতটুকু সম্ভব অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করব।”
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বিসিএস (কর) ক্যাডার এবং বিসিএস (শুল্ক ও আবগারী) ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিদের ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বিষয়ে আলোচনা হয়।
সেখানে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ছাড়াও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, অর্থ সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অধ্যাদেশ বিষয়ে পরামর্শক কমিটি, এনবিআরের সংশ্লিষ্ট ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য ও মতামত তুলে ধরেছেন।
জারি করা অধ্যাদেশ বিষয়ে কর্মকর্তাদের বিভিন্ন উদ্বেগ, পরামর্শ এবং মতামত গুরুত্বসহকারে শোনা হয়। আলোচনায় উঠে আসা বিষয়গুলো যথাযথভাবে বিবেচনা করা হবে বলে অর্থ উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন।
বৈঠক শেষে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা।
এনবিআর ভাগ করে যে দুটি বিভাগ করা হয়েছে সেগুলোর কাজ শুরু হবে কবে? উত্তরে তিনি বলেন, “আগে গেজেট করতে হবে৷ গেজেটের আগেও অনেক কাজ আছে৷”
আলোচনায় এনবিআর কর্মকর্তারা সন্তুষ্ট কি না, জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা বলেছি আন্দোলন থেকে সরে আসেন৷ তারা কি বলেছে, সেটায় আমার যায় আসে না৷”
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড—এনবিআরকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুই ভাগ করে ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।
এতে বলা হয়েছে, পরবর্তী সময়ে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার এটি কার্যকর করার তারিখ ঘোষণা করবে।
এনবিআরকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে আলাদা করতে গত ১৭ এপ্রিল খসড়া অধ্যাদেশে অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।
বাকি প্রক্রিয়া শেষ করে তা দ্রুত জারি হওয়ার কথা থাকলেও অধ্যাদেশের খসড়া অনলাইনে এলে তা দেখে আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। এই দুই ক্যাডারদের অ্যাসোশিয়েসন এটি বাতিলের দাবি তোলে।
অধ্যাদেশের অনুচ্ছেদ ৪(৪) এ বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগের পদসমূহ আয়কর, কাস্টমস, ভ্যাট, অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, গবেষণা, পরিসংখ্যান, প্রশাসন, অডিট, আইন সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।
রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে “কর আইন প্রয়োগ ও কর আহরণ পরিস্থিতি মূল্যায়ন” যুক্ত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, রাজস্ব আহরণে অভিজ্ঞ কোনো সরকারি কর্মকর্তা রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।
রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক পদসমূহে আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের সঙ্গে প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে অধ্যাদেশে।
বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তারা পদস্থ রয়েছেন, যা তাদের নির্ধারিত পদ।
অধ্যাদেশে নীতির সচিব হিসেবে 'উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে' নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, এনবিআর বিলুপ্তির ফলে এর বর্তমান সাংগঠনিক জনবল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে সংযুক্ত হবে। আর দুই বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামো কেমন হবে, তার সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানাবে।
এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে প্রথম দফায় বুধবার, বৃহস্পতি ও শনিবার কলম বিরতি পালন করেন তারা। একই কর্মসূচি ছিল পরের দিনও। তারপর তৃতীয় দফায় সোমবারের কর্মসূচি বাড়ানো হয়।
তবে মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক সামনে রেখে সোমবার আন্দোলন সাময়িক স্থগিতের ঘোষণা দেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
ঐক্য পরিষদের ডাকে দেশের সব কর অঞ্চল, ভ্যাট কমিশনারেট ও শুল্ক স্টেশনসহ এনবিআরের সব দপ্তরে কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, রপ্তানি কার্যক্রম এবং জাতীয় বাজেট প্রণয়ন কার্যক্রম এর আওতামুক্ত ছিল।
পুরনো খবর:
এনবিআরকে দুভাগ করে অধ্যাদেশ জারি
এনবিআর 'ভাগ করাটা ঠিক আছে, প্রক্রিয়াটা ঠিক নাই': দেবপ্রিয়
বিআর ভাগ করে তড়িঘড়ি অধ্যাদেশ নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে: টিআইবি