Published : 27 May 2025, 01:32 AM
জুলাই-অগাস্টের অস্থিরতা আর রাজনৈতিক ডামাডোল সামলে রাজস্ব আহরণ প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরলেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক দূরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থনীতিতে গতি ফেরানোর নানা পদক্ষেপের পরও চলতি অর্থবছরের নয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি ছাড়িয়েছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
অর্থবছরের বাকিটা সময়ে রাজস্ব বাড়ানোর চাপ তো আছেই; সঙ্গে নতুন অর্থবছরে অতিরিক্ত আহরণের পরিকল্পনাও করতে হচ্ছে সংস্থাটিকে। তবে দেশের প্রধান রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটির সামনে এ নিয়ে সহজ কোনো পথ খোলা নেই।
সরকারের বেঁধে দেওয়া বিশাল লক্ষ্যমাত্রা পূরণ আর ঋণ পেতে আইএমএফের শর্তের চাপ সামলে রাজস্বে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ঘটানোর যাদুমন্ত্র নেই, বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আর অর্থনীতির বিশ্লেষকরা।
আইএমএফের শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে অর্থবছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্যে মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) বাড়িয়েও খুব একটা সুফল আসছে না।
এরইমধ্যে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বাড়তি শুল্ক সামাল দিতে বাংলাদেশ বিভিন্ন মার্কিন পণ্যে যে কর কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাতে রাজস্ব আদায় আরও কমার শঙ্কার কথা বলেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
এমন অবস্থায় বাড়তি রাজস্ব বাড়ানোর নানা কৌশল ও পরিকল্পনা নেওয়া হলেও কর্মকর্তারা মনে করছেন স্বল্প সময়ের মধ্যে এনবিআরের হাতে এমন কোনো হাতিয়ার নেই যে বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কিংবা আইএমএফরের দেওয়ার শর্ত পূরণ করা যাবে। আন্তর্জাতিক সংস্থাটির শর্ত পূরণ যে অসম্ভব সেটি বলেও দিয়েছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।
সংস্থাটির নীতি শাখার কর্মকর্তারা বলেন, আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক অনুবিভাগ কর ছাড় কমিয়ে, প্রশাসনিক সক্ষমতা বাড়িয়ে অর্থ্যাৎ কর ফাঁকি ধরে, বকেয়া আদায় করে এবং কর হার কিছু ক্ষেত্রে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি আদায় করা সম্ভব।
এমন বাস্তবতায় রাজস্ব বাড়াতে কয়েকটি প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিভিন্ন খাতে করপোরেট কর হার বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন মো. এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
এর মধ্যে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে আলাদা দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশ নিয়ে টানা দুই সপ্তাহের আন্দোলনে সরকারের মুখোমুখি অবস্থানে ছিলেন রাজস্ব সংস্থাটির কর্মকর্তা ও কর্মীরা।
অন্তর্বর্তী সরকার ১২ মে এ অধ্যাদেশ জারির পর থেকে টানা আন্দোলন করে আসা কর্মীরা তা বাতিল ও সংশোধনের দাবি জানিয়েছে আসছে।
এ অবস্থায় সরকার কিছুটা পিছু হটেছে। এনবিআর বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে এটিকে বিশেষায়িত বিভাগের সর্যাদা দিয়েছে।
ধীর গতির অর্থনীতিতে রাজস্ব আহরণে টানাপোড়নের মধ্যে অর্থবছরের শেষ সময়ে এসে এনবিআর কর্মীদের এমন আন্দোলন রাজস্ব সংগ্রহের পরিসংখ্যানে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সাম্প্রতিক কয়েক বছর ধরে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করলেও চলতি অর্থবছরে তা ধীর হয়ে পড়েছে। এতে করে সরকারের অর্থ সংকুলানের পথ কতটা সুগম হবে জানতে চাইলে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন অর্থনীতির নানাবিধ সংকট ও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় করের হার না বাড়িয়ে কর্মকর্তাদের ‘ঘুষ’ ও ‘নেগোসিয়েশনের’ মাধ্যমে যে ‘কর ফাঁকি’ হয় তা আদায়ে নীতি প্রণয়নের পরামর্শ দেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যে পরিমাণ কর ফাঁকি দেওয়া হয়, তার সবটাই যে করদাতারা ফাঁকি দেন তা নয়। করদাতা হয়ত তার প্রদেয় করের অর্ধেকটা দিয়েছেন, কিন্তু সেটা গেল কোথায়? গিয়েছে অন্যদের পকেটে।”
করদাতার ওপর বোঝাটা না বাড়িয়ে’ঘুষ’ বন্ধ করে কর আদায় বাড়ানো সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সম্প্রতি এক গবেষণায় বলেছে, কর ফাঁকির কারণে ২০২৩ সালে আনুমানিক ২ লাখ ২৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে বাংলাদেশ; ২০১২ সালে যা ছিল ৯৬ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত ১১ বছরে কর ফাঁকির পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি হয়েছে।
'করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স রিফর্ম ফর গ্র্যাজুয়েটিং বাংলাদেশ: দ্য জাস্টিস পারসপেক্টিভ‘ শীর্ষক এ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট কর ফাঁকির মধ্যে শুধু করপোরেট খাতেই এর পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা, যা মোট কর ফাঁকির অর্ধেকের সমান।
আসছে বাজেট, লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে কী?
চলতি অর্থবছরের ৯ মাস শেষ হয়েছে। অর্থবছরের শুরুতেই রাজনৈতিক আন্দোলন ও সহিংসতায় অর্থনৈতিক স্থবিরতা দেখা গেছে; ব্যবসা-বাণিজ্য ও উৎপাদন শ্লথ হওয়ার সঙ্গে উন্নয়ন কর্মসূচিও চলছে ঢিমেতালে।
এর জের পড়েছে রাজস্ব আহরণেও। সরকার এ ধাক্কা সামলাতে প্রথমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি করে, যা আগে ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত লক্ষ্য পূরণে এনবিআর প্রতিমাসের জন্য আলাদা লক্ষ্য নির্ধারণ করে। এতে দেখা গেছে, জুলাই-মার্চ শেষে লক্ষ্যের চেয়ে রাজস্ব আদায় পিছিয়ে আছে ৬৫ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা।
এর বাইরে আইএমএফ বলেছে, চলতি অর্থবছরে আদায় করতে হবে ৪ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা; সে হিসাবে শেষ তিন মাসে আহরণ করতে হবে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা, প্রতি মাসে ৬৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রথম নয় মাসের হিসাবে প্রতি মাসে গড় আদায় ছিল সাড়ে ২৮ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করছেন, চলতি অর্থবছরের ‘পরিস্থিতি বিবেচনায়’ ৪ লাখ কোটি টাকা আদায় করতে পারলেই সেটি ‘উল্লেখযোগ্য অর্জন’ হবে।
প্রতিবছরই শেষ সময়ে কিছু না কিছু বকেয়া আদায় বা আপিলে নিষ্পত্তি করে এটা বাড়ানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ভ্যাট বাড়িয়ে লাভ কী হল?
আইএমএফের ঋণের শর্ত প্রতিপালনে রাজস্ব আদায় বাড়াতে সবচেয়ে সহজ পথ বেছে নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। শতাধিক পণ্য ও সেবায় সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানো হয়। লক্ষ্য ছিল ১২ হাজার কোটি টাকা আদায় করা। তবে পরিসংখ্যান বলছে, বড় ধরণের প্রবৃদ্ধি না হয়ে উল্টো নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির দেখা দেয় ভ্যাট আহরণে।
অর্থবছরের মাঝামাঝিতে ৯ জানুয়ারি এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরের মাসে আগের অর্থবছরের জানুয়ারির তুলনায় ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখে ভ্যাট অনুবিভাগ; ফেব্রুয়ারিতে এটি কমে আগের অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে দশমিক ১৩ শতাংশ কমে যায়। মার্চে আগের অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হলেও তা ছিল ১ দশমিক ১৮ শতাংশ।
এনবিআরের ভ্যাটের (পরীবিক্ষণ ও করদাতা সেবা) প্রথম সচিব মো. মশিউর রহমান বলেন, “প্রধান ১০ খাতের মধ্যে আমরা কেবল সিগারেটেই কর বাড়িয়েছি। তেল বড় রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্র। আমরা সেখানে করছাড় দিয়েছি। গ্যাসের ক্ষেত্রে আমরা কর বাড়াইনি। ফার্মাসিকিউটিক্যালে বাড়িয়েছিলাম, পরে সেখান থেকে সরে এসেছি। ফলে কর বাড়ানোর মাধ্যমে যতটা রাজস্ব আহরণের প্রত্যাশা ছিল, তা পূর্ণ হযনি।
“এছাড়া সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি কমায় সেখান থেকে ভ্যাট আদায় কমেছে; এখান থেকে বড় অংশের রাজস্ব আদায় হয়। এছাড়াও মেগা প্রকল্পের কাজ শ্লথ হওয়ায় এক্ষেত্রে বেসরকারি খাত থেকে রড, সিমেন্ট, বালু এসবের ব্যবহার কমায় রাজস্ব আদায় কমেছে।”
আদায় বাড়ানোর উপায় কী?
উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে কর বাড়ানোর নীতি নিয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর চেষ্টার সমালোচনা করে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, এভাবে রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব নয়। আগামী অর্থবছরেও এই চেষ্টা খুব বেশি সুখকর ফল বয়ে আনবে না।
”আপনি রেট বাড়ালে কিসের বাড়াবেন তাহলে? উৎপাদন বা ভোগের ওপরে? তাহলে আরও মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়বে।”
কর হার না বাড়িয়ে কী করা যেতে এমন প্রশ্নে এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেসের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, কর ও ভ্যাট আদায় বাড়াতে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর বিকল্প নেই এই সময়ে। করদাতাদের কর ও ভ্যাট রিটার্ন জমা দেওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া প্রকৃত লেনদেন এবং বিষয়গুলো ভ্যাট ও ট্যাক্স রিটার্নে যাতে প্রতিফলিত হয় তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
ভ্যাট আদায় বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি বাজার বা এলাকায় দোকান মালিকদের সমিতি রয়েছে। যদি এনবিআর এ সমিতিগুলোকে সঙ্গে নিয়ে কর ও ভ্যাট দাখিলের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে পারে তাহলে কর ও ভ্যাট রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যাও বাড়েবে।
রাজস্ব আহরণের চিত্র
বাজেটে সরকার প্রতি বছর এনবিআরকে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয়। আগের অর্থবছরের চেয়ে ১২ শতাংশ বা এর কিছুটা বেশি প্রবৃদ্ধি ধরে তা ঠিক করা হয়। কিন্তু এনবিআর অনেক পিছিয়ে থাকে বলে নতুন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রবৃদ্ধির প্রয়োজন হয় ২৫ শতাংশের মত। যেটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পূরণ করতে পারে না সংস্থাটি। এনবিআর প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মত প্রবৃদ্ধি মাথায় রেখে অগ্রসর হয়; মোটামুটি তা ছুঁতেও পারে।
কোভিড মহামারীর মধ্যে প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে শুরুতে শঙ্কা থাকলেও এখন খুব বেশি প্রবৃদ্ধির দেখা মিলবে বলে ধরে নিয়েছে এনবিআর।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে বাড়ে ১৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ওই অর্থবছরে আহরণ হয়েছিল ৩ লাখ ৩১ হাজার ৫০২ কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরের চ্যালেঞ্জ, পদক্ষেপ কী?
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসে সংকোচনমূলক নীতিতে চলছে; কমিয়েছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নও। এ ধারাবাহিকতায় বর্তমান ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটের চেয়ে তা প্রায় ৭ হাজার কমানোর পরিকল্পনার খবর এসেছে।
তবে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হতে পারে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৭ শতাংশের বেশি।
চলতি অর্থবছরে ৪ লাখের আশেপাশে রাজস্ব পাওয়া গেল নতুন লক্ষ্যমাতা পূরণে নতুন বছরে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লাগবে; যা কখনই অর্জন করতে পারেনি সংস্থাটি।
এর সঙ্গে রয়েছে আইএমএফের চাপ। আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি চায় যেসব খাতে করহার কম রয়েছে, সেগুলোতে হার বাড়ানোর নীতি নিয়ে ৫৭ হাজার কোটি টাকা বাড়তি আদায় করুক এনবিআর।
সংস্থাটির সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে এসেছে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক যুদ্ধ। সরকার দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ধরে রাখতে শুল্ক কমানোর পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে চাপে পড়েছে এনবিআর।
সংস্থার চেয়ারম্যান আবদুর রহমান মনে করছেন, বাংলাদেশে প্রতিযোগী দেশের তুলনায় শুল্ক বেশি থাকায় সেখানে ‘যৌক্তিকীকরণ’ করতে হবে।
“ইউএস ট্রেজারি যে ব্যবস্থা, সেখানে যে আমরা কিছু কমিটমেন্ট করেছি, আমাদের ডিউটি স্ট্রাকচার কিছুটা র্যাশনালাইজ করতে হবে। সেখানে আমাদের কালেকশন কমবে।
“একইভাবে ইনকাম ট্যাক্সের ক্ষেত্রেও, যে কথাগুলো বললেন যে মিনিমাম ট্যাক্স, টিডিএস এসব অনেক হাই, এগুলো যদি র্যাশনালাইজ করতে যাই, এখানেও কালেকশন কমবে।”
সরকারের ব্যয় মেটাতে রাজস্ব বাড়ানোর চাপের মধ্যে এমন প্রতিকূল বাস্তবতায় তিনি প্রাক-বাজেট আলোচনায় কয়েকটি খাতে করপোরেট করহার বাড়ানোর পরিকল্পনার বিষয়ে কথা বলেন।
তবে করহার না বাড়িয়ে কর ফাঁকি কমানোর পক্ষে জোরালো তাগিদ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনের।
ভিন্ন ভিন্ন এইচএস কোডে বিভিন্ন রকমের হার না রেখে তা কমানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “সরলীকরণ করতে হবে তাহলে ওই নেগোসিয়েশনের (কর্মকর্তাদের সঙ্গে) জায়গাগুলো বন্ধ হয়ে যায়।”
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় থাকা বাংলাদেশের জন্য বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘বড় চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
রাজধানীতে এক বিফ্রিংয়ে তিনি এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি কর ব্যবস্থার ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন ও নীতিগত সংস্কারের সুপারিশ করেন।
তিনি বলেন, বিনিয়োগের কথা বলে বিভিন্ন খাতভিত্তিক কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ করা উচিত।
কর আদায়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ’ক্যাশলেস’ অর্থনীতির দিকে নজর দিতে বলেন এসএমএসি অ্যাডভাইজরির স্নেহাশীষ বড়ুয়া।
এনবিআর কী করছে?
আইএমএফের চাপ সামলে ও ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক যুদ্ধ মাথায় রেখে রাজস্ব বাড়াতে কী কৌশল হাতে নিতে যাচ্ছে এনবিআর- এমন প্রশ্নে সংস্থার নীতি শাখার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা বাজেটে মোটাদাগে ট্যারিফ রেশনালাইজেশনকে গুরুত্ব দিচ্ছি। বিভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে সমজাতীয় পণ্যে একইরকম শুল্ক নির্ধারণ, বিভিন্ন ধরনের শুল্ক বসানো থেকে সরে এসে এ ধরনের শুল্ক বাধা কমিয়ে আনার কাজ হাতে নিয়েছি। আমরা অনেক অপ্রয়োজনীয় এইচএস কোডও বাতিল করব যাতে ডিসক্রিমিশনের সুযোগ কমে।
“এগুলো আমাদের এলডিসি গ্রাজুয়েশন পরবর্তী সময়ের জন্য এবং শুল্ক যুদ্ধের মধ্যে কাজে আসবে। এছাড়া অনেকগুলো অব্যাহতির এসআরও আমরা প্রত্যাহার করব; নতুন করে সময় বাড়াব না।”
জানুয়ারিতে এক দফা ভ্যাট বাড়ানোর কারণে বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় বাজেটে কিছু আইনি বিষয় ’ঠিকঠাক’ করা ছাড়া তেমন কিছুই করা হবে না বলে জানিয়েছেন ভ্যাট অনুবিভাগের নীতি শাখার একজন কর্মকর্তা।
বেশ কিছু অব্যাহতি তুলে নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকে আমানত রাখা ও ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক যৌক্তিক করার আলোচনা চলার কথা বলেন তিনি।
তৈরি পোশাক খাতে করপোরেট করহার বাড়ানোর চিন্তাভাবনার কথা বলেন আয়কর অনুবিভাগের নীতি শাখার একজন কর্মকর্তা। বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানি খাত কম হারে করপোরেট করহার দিয়ে আসছে। এ ছাড় থাকায় বৈষম্যও আছে।
”এখন যেহেতু চাপ আছে তাই আমরা এটা নিয়ে বিশ্লেষণ করছি, কথা বলছি খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।”
আরএমজি খাতে কর অব্যাহতি আছে প্রতি অর্থবছরে ৪ হাজার কোটি টাকার ওপরে। অব্যাহতির পরিমাণ অর্ধেক করা গেলে এ খাতে বাড়তি আসবে ২ হাজার কোটি টাকা, বলেন তিনি।
প্রকৃত কৃষক বা খামারির বদলে পোল্ট্রি এবং মৎস্য খাতের কর অব্যাহতির সুযোগ নিচ্ছেন রাজনীতিবিদ ও অনেক সাবেক আমলারা। এদিকেও নজর দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
বর্তমানে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য করপোরেট করহার ১২ শতাংশ এবং সবুজ কারখানার জন্য ১০ শতাংশ রয়েছে, যা আগামী ২০২৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকার বিধান রয়েছে।
কর্মকর্তারা বলেন, রাজস্ব বাড়াতে বাজেটকে সামনে রেখে এর বাইরে আয়কর আইন সহজীকরণ, কিছু আইনের সমস্যা তৈরি হওয়ায় তা নিরূপণ, রিটার্ন দেওয়ার প্রমাণ দাখিলের ক্ষেত্রে সহজ বিধান করা ও উৎসে করহার যৌক্তিকরণের কাজ করা হচ্ছে।
রাজস্ব আদায়ে ৯ মাসে ঘাটতি ৬৫ হাজার কোটি টাকা
ট্রাম্পের শুল্ক সামাল দিতে কমবে কর আদায়: এনবিআর চেয়ারম্যান
করযোগ্য 'সবার কাছ থেকেই' কর আদায় করব: সালেহউদ্দিন
শুল্ক-কর না বাড়িয়ে কী করতে পারত সরকার?
আইএমএফের শর্ত, বাংলাদেশের সামনে জটিল অঙ্ক
রাজস্ব বৃদ্ধি: সম্ভব বলছে আইএমএফ, আরও সময় চায় এনবিআর