Published : 24 Jul 2024, 03:57 PM
কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার প্রেক্ষপটে জারি কারফিউ শিথিল এবং তিন দিন সাধারণ ছুটির পর অফিস-আদালতের সঙ্গে খুলেছে ব্যাংকগুলো।
বুধবার রাষ্ট্রায়ত্ত ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখাগুলো সীমিত আকারে খোলা রেখে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসময় রাজধানীর মতিঝিলসহ অন্যান্য এলাকার ব্যাংকের শাখায় গ্রাহকের ভিড় দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সাথে তা বাড়তেও থাকে।
বুধ ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিলের ঘোষণার পর এই দুইদিন বেলা ১১ টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে লেনদেন চলবে বলে জানিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা ছিল, বুধবার ব্যাংকের ৫০ শতাংশ ও বৃহস্পতিবার ৭৫ শতাংশ শাখা খোলা রাখতে হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, কারফিউ শিথিল থাকার সময়ে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নির্ধারিত শাখায় সীমিত আকারে ব্যাংকিং সেবা দিতে হবে। ব্যাংকগুলো তাদের সুবিধামতো শাখা খোলা রাখার উদ্যোগ নেবে।
সহিংসতার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং সেবাও বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ থাকে এটিমএম বুথগুলোও। এরপর রোববার থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় আর খোলেনি ব্যাংকগুলোর দরজা।
মঙ্গলবার রাতে ইন্টারনেট সেবা ধীরে ধীরে ফিরতে থাকায় এবং কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ানোর ঘোষণা আসায় ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার সচল হওয়ার পথ খোলে।
বুধবার সকালে রাজধানীর সোনালী, জনতা, রূপালি, অগ্রণী এবং বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা ঘুরে গ্রাহকদের টাকা উত্তোলন করতে দেখা গেছে। টাকা উত্তোলনে গ্রাহকদের কোনো সমস্যায়ও পড়তে দেখা যায়নি। অনেকে আসেন বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল পরিশোধও করেছেন ব্যাংকে।
তবে ব্যাংকগুলোর সব শাখা না খোলায় কিছুটা বিপত্তিও ছিল। অনেক গ্রাহককে এদিন টাকা তোলার জন্য দূরের শাখায় ছুটতে হয়েছে।
মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা বন্ধ থাকায় আফরিন আহমেদ নামের একজন নারী গ্রাহককে ধানমণ্ডি শাখায় গিয়ে টাকা তুলতে হয়।
তিনি বলেন, “এটা ভোগান্তি। কোন শাখা খোলা থাকবে আর কোন শাখা খোলা থাকবে না, সেটা জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। এসব ব্যাংক অন্য সময় তো তাদের প্রমোশনালের জন্য ঠিকই মোবাইলে এসএমএস পাঠায়।”
সব শাখা খোলা না থাকায় বাড়তি চাপ পড়ে খোলা থাকা শাখাগুলোতে। ফলে সেসব শাখায় দেখা গেছে গ্রাহকের দীর্ঘ লাইন।
বেসরকারি চাকরীজীবী শফিক আহমেদ মোহাম্মদপুরের সোনালী ব্যাংকের শাখায় আসেন টাকা তুলতে।
তিনি বলেন, “ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে টাকা লেনদেন করতে পারছি না। তাই নগদ টাকা উঠানোর জন্য এসেছি।”
মোহাম্মদপুরের কলেজ গেট শাখার সোনালী ব্যাংকের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার জোবাইদা গুলশান আরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরডটকমকে বলেন, “নগদ টাকা উত্তোলন করা যাচ্ছে। গ্রাহক টাকা তুলতে আসলে আমরা দিয়ে দিচ্ছি। তবে আশপাশের অনেক শাখা বন্ধ থাকার কারণে আমাদের এই শাখায় অনেক বেশি চাপ পড়েছে।”
আমদানি-রপ্তানি কার্ক্রম চালু, রেমিটেন্সও আসছে
সরকারি-বেসরকারির কয়েকটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করে জানা গেছে, ব্যাংকে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়েছে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোও একই তথ্য জানিয়েছে।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “আজকে আমার আগের দশ দিন আগের একটি ঋণপত্র (এলসি) খোলা হবে, ব্যাংক জানিয়েছে।”
ব্যাংকগুলোর রেমিটেন্স শাখার কার্যক্রম শুরু হয়েছে জোরেশোরে।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আফজাল করিম বলেন, “ব্যাংক কার্যক্রম চলছে। গ্রাহক টাকা উত্তোলন ও জমা দিচ্ছেন। এছাড়া আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চলছে। এলসি খোলা হচ্ছে।
“আজ সোনালী ব্যাংক রেমিটেন্স গ্রহণ করেছে এবং প্রবাসীদের পরিবার যারা আছেন তাদেরকেও এর বিপরীতে অর্থও দেওয়া হয়েছে।”