Published : 23 May 2025, 01:12 AM
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দুই ভাগ করার অধ্যাদেশে সরকার ‘প্রয়োজনীয় সংশোধনী’ আনার ঘোষণা দিলেও তাতে ‘সন্তুষ্ট’ নয় 'এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ'।
আন্দোলনে নামা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবিতে তাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর অর্থ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাদেশে 'প্রয়োজনীয় সংশোধনী' আনার কথা বলে।
এরপর রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ বলে, অধ্যাদেশ বাতিলসহ তাদের চার দাবির বিষয়ে 'সুনির্দিষ্ট আশ্বাস' মেলেনি। দাবি আদায়ে 'পূর্বঘোষিত কর্মসূচি আগামী শনিবার থেকে চলবে'।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-
>> শনিবার এবং রোববার কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশন ছাড়া ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে। এই দুইদিন কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশনে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। তবে, রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে;
>> সোমবার থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ছাড়া ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে।
তাদের চার দাবি হলো -
১। জারিকৃত অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে;
২। অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে;
৩। রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে এবং
৪। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়া এবং পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আলোচনা-পর্যালোচনাপূর্বক প্রত্যাশী সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মতামত নিয়ে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থাসংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি প্রসঙ্গে পরিষদ বলেছে, "আজকের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। দুই ক্যাডারের দাবি যে যৌক্তিক ছিল, তা প্রেসনোটের মাধ্যমে স্বীকার করা হয়েছে, সে জন্য ধন্যবাদ।"
গত ১২ মে রাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অধ্যাদেশ জারি করে সরকার।
পরদিন থেকে অবস্থান ও কলমবিরতিসহ টানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন দেশের প্রধান রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটির কর্মীরা।
এর মধ্যে মঙ্গলবার এনবিআর কর্মকর্তাদের বসে সেখানে অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে বলা হলেও তা মানেনি এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরপর বৃহস্পতিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
পরিষদের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "আমাদের বিগত দিনের কর্মসূচিতে কোনো পদ-পদবি কমানো-বাড়ানোর বিষয়েও আমরা কোনো বক্তব্য দিইনি, এগুলো আমাদের দাবিও নয়, ছিলও না কোনোদিন।
"আমরা আরও বলতে চাই, আমাদের কর্মসূচি ধীরে ধীরে যথেষ্ট সময় দিয়ে তীব্র করতে বাধ্য হয়েছি, হঠাৎ করে নয়। কর্মসূচির মাঝে মাঝে আমরা বিরতিও দিয়েছি দেশ ও মানুষের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে। সরকার শুরু থেকেই যদি আমাদের যৌক্তিক দাবির বিষয়ে আজকের মতো ভাববার সদিচ্ছা প্রদর্শন শুরু করত, তবে এই সমস্যা অনেক আগেই সুরাহা হয়ে যেত বলে আমরা মনে করি।"
দেরিতে হলেও 'সরকারের এই সদিচ্ছার প্রারম্ভকে' স্বাগত জানিয়ে পরিষদ বলেছে, "আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের চারটি যৌক্তিক দাবি পূরণের সুনির্দিষ্ট আশ্বাস আমরা শিগগিরই পাব।
দাবি আদায়ের পর 'নির্ধারিত অফিস সময়ের বাইরে অতিরিক্ত সময়ে কাজ করে অনিষ্পন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন' করার প্রতিশ্রুতিও আছে বিজ্ঞপ্তিতে।
আরও পড়ুন
এনবিআর বিলুপ্তিতে পিছু হটল সরকার, সংশোধন হবে অধ্যাদেশ
এনবিআর ভাগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের মতামত 'প্রতিফলিত না হওয়ার' দাবি
এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারক
এনবিআর কর্মকর্তাদের দাবি যতটুকু সম্ভব মানা হবে: অর্থ উপদেষ্টা
এনবিআরকে দুভাগ করে অধ্যাদেশ জারি
এনবিআর ভাগ: বৈঠকে বসছেন উপদেষ্টা, কলম বিরতি 'সাময়িক' প্রত্যাহার
এনবিআর 'ভাগ করাটা ঠিক আছে, প্রক্রিয়াটা ঠিক নাই': দেবপ্রিয়
বিআর ভাগ করে তড়িঘড়ি অধ্যাদেশ নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে: টিআইবি