Published : 20 May 2025, 01:37 AM
নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় দেশে এখন বিনিয়োগের ‘পরিবেশ নেই’ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তার মতে, এরকম অবস্থায় ব্যবসায়ীরা ‘টাকা পকেটে রাখাই পছন্দ করেন’।
এ নিয়ে সুরাহা হলে বিনিয়োগকারীরা ‘পরিষ্কার’ বার্তা পাবেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তখন বিনিয়োগকারীরা ওদিক থেকে বলবেন, এখন একটা মেঘ কেটে গেছে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের পথ ধরে ভেঙে পড়া পুরনো ব্যবস্থা থেকে যেমন উত্তরণ ঘটবে, তেমনি এ অনিশ্চয়তাও কাটবে বলে আশা তার।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ইনসাইড আউট আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক এই প্রধান অর্থনীতিবিদ।
অনুষ্ঠানে তিনি কথা বলেছেন আগামী বাজেট, সমকালীন অর্থনীতি, মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ পরিবেশ, অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ, সংস্কার, রাজস্ব আহরণ, অর্থপাচার, ব্যাংক খাতের দুর্দশা কাটাতে করণীয় নিয়ে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেইসবুক পেইজে এ আলোচনা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে অন্তবর্তী সরকারের গঠিত ‘শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির’ সদস্য জাহিদ হোসেন বলেন, “বর্তমানে আমরা যে ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে আছি সেখানে সুদের হার বিনিয়োগের পথে যে একমাত্র বাধা বা সবচেয়ে বড় বাধা এটা বলা বোধহয় যৌক্তিক হবে না।
“কারণ এখন যদি আপনি সস্তায় ঋণও দেন সে (উদ্যোক্তা) ঋণ নেবে ঠিকই কিন্তু সেইটা যে আপনার বিনিয়োগে যাবে যেটা প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে বা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এমন হওয়ার মত পরিবেশ এখন নাই।”
মহামারী থেকে পুনরুদ্ধারের সময়কাল থেকে চড়তে থাকা মূল্যস্ফীতিতে দেশের অর্থনীতি দুর্বল হচ্ছে। প্রান্তিক মানুষ ভুগছে বছর তিনেক ধরে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে দফায় দফায় নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এতে বাজারে অর্থের চাহিদা কমে বিনিয়োগে টান পড়ছে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ঘরে নেমেছে।
দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব নিয়ে বলতে গিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, “এখানে একটা মানে উভয় সংকটের বিষয় আছে। আপনি এই মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে সুদের হার বাড়াতে হবে এবং মূল্যস্ফীতি না কমা পর্যন্ত এটাকে কমালে আবার মূল্যস্ফীতি উসকে যেতে পারে। কাজেই ওই দিকটা যদি আপনি বেশি গুরুত্ব দেন যে আমার প্রায়োরিটি মূল্যস্ফীতি কমানো, তাহলে সুদ উচ্চ পর্যায়ে রাখতেই হবে।
“কিন্তু সেটার আবার একটা কস্ট আছে যে ওইটার কারণে অর্থায়নের চাহিদা কমে যায়। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।”
এর সঙ্গে রাজনৈতিক ‘অনিশ্চয়তার’ প্রসঙ্গে টেনে এই অর্থনীদিবিদ বলেন, “বিনিয়োগের জন্য যেটা সবচেয়ে বড় বিষয় সেটা হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যৎটাকে যদি পরিষ্কারভাবে দেখতে না পারেন, তাহলে তারা তাদের টাকা পকেটে রাখাই পছন্দ করেন। এখন একটা রাজনৈতিক পালাবদলের মধ্যে আছি আমরা। পুরনো ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, সেটা নাই।
“কিন্তু সেটার বদলে আমরা একটা অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থার মধ্যে আছি। যেটা সবাই জানে যে এটা থাকবে না। কিন্তু এটা না থেকে কোথায় যাবে এবং নতুন ব্যবস্থাটা কোন ধরনের হবে এইটা বলা…(দরকার)। বিনিয়োগকারী বাদ দেন, যারা রাজনীতিতে মাঠে খেলছেন তাদের পক্ষেও এটা বলা কঠিন। কাজেই এখানে একটা বড় ধরনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আছে।”
নতুন বন্দোবস্তের মাধ্যমে এ অনিশ্চয়তা কাটাতে ঐক্যমত্য কমিশন কাজ করছে, যা নিয়ে আশা প্রকাশ করে অর্থনীতির এই বিশ্লেষক বলেন, “যদি সবাই মত বদলে একটা জায়গায় আসেন, আমাদের আগামীর রাজনৈতিক ব্যবস্থাটা এরকম হবে এবং এই পথ দিয়ে উত্তরণটা ঘটবে, তাহলে হয়ত ওই অনিশ্চয়তা কাটবে। সেটির জন্য নির্বাচনের জন্য তো কেউ অপেক্ষা করবে। যদি ওই বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যায় তাহলে বিনিয়োগকারীরা ওদিক থেকে বলবেন যে, এখন একটা মেঘ কেটে গেছে।”
অভ্যন্তরীণ বিষয়ের বাইরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি করলেও সেটির চাইতে দেশের রাজনৈতিক ‘অনিশ্চয়তা’ কাটানোর পক্ষেই মত দিয়েছেন জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা যদি না কাটে তাহলে বিনিয়োগের পথে যে আবর্জনাগুলো আছে, প্রতিবন্ধকতা যেগুলো আছে- সেগুলো ভেঙে আপনি যদি পথকে মসৃণ করতে পারেন, তাহলে সেটা বিনিয়োগের জন্য সহায়ক হবে। কিন্তু বিনিয়োগকারী তো দেখবে যে আমি যে পথ দিয়ে হাঁটব, সেটার শেষটা যদি একটা খাদে পড়ে যায় তাহলে তো মসৃণ পথ আর আমার জন্য কোনো কাজে আসলো না।
“ওই পথটা আমাকে শেষে কোথায় নিয়ে যাবে সেইটা হল ওই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ব্যাপার।”
পাশাপাশি তিনি ‘নীতির ধারাবাহিকতার’ ওপর জোর দেন। বিশেষত কর নীতির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের মনোযোগ থাকার কথা তুলে ধরেন।
অন্তর্বর্তী সরকার এখন একধরনের নীতি নিলেও রাজনৈতিক সরকারের সময় তা থাকবে কি না সেজন্য ব্যাবসায়ীদের ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ মনোভাব ‘স্বাভাবিক’ বলেই মনে করেন অর্থনীতির এই বিশ্লেষক।
মূল্যস্ফীতি চড়া, বাজারে নতুন ’খেলোয়াড়’
মূল্যস্ফীতি সাম্প্রতিক মাসে কিছুটা কমার তথ্য সরকারের পরিসংখ্যানে এলেও এটি এখনও মানুষের মাথাব্যথার বড় কারণ। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপর।
জাহিদ হোসেন বলেন, মূল্যস্ফীতি এখনও যে পর্যায়ে আছে তা খুবই অসহনীয়। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি। নিম্ন আয়ের দরিদ্র মানুষের জন্য এটা মোকাবেলা করা খুবই কঠিন। কাজেই যেটুকু কমেছে সেইটা দিয়ে তুষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেননা আগামীতে এটা ধারাবাহিকভাবে যে কমতে থাকবে সেটারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এর পেছনে উৎপাদন খরচের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বিতরণ খরচকেই কারণ হিসেবে তুলে ধরেন তিনি। বলেন, “উৎপাদন খরচের চেয়ে যদি বিতরণের খরচটা অনেক বেশি হয়ে যায় তাহলে তো পরিষ্কার যে এখানে মানে অনেক ধরনের হাতবদল হচ্ছে পণ্যটা। এবং ওই হাতবদল প্রতিটা পর্যায়েই একজনতো যার হাত দিয়ে বের হচ্ছে সেতো কিছু মুনাফা সেখানে পাচ্ছে এবং সেটা মূল্যের সাথে যোগ হচ্ছে চাঁদাবাজি।
“যদি চাঁদাবাজি যোগ করেন এবং চাঁদাবাজিটা প্রত্যেকটা পর্যায়ে, তাইলে পণ্যের মূল্যের স্তরটা তো অনেক উঠে (বেড়ে) যায়।”
এ প্রসঙ্গে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর অগাস্টে চাঁদাবাজির প্রভাব কমে যাওয়ায় তখন পণ্যমূল্য কমার উদাহরণ দেন তিনি। বলেন, “এটা পরিষ্কার ছিল তখন যে চাঁদাবাজি না হলে মূল্যস্তরের উপর একটা উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে এবং সেটা কতটা পড়ে তার একটা আন্দাজ আমরা সেই অগাস্ট মাসে পেয়েছি।
“দুর্ভাগ্যবশত ওই শূন্যতা, যে শূন্যতা পূরণ না হলেই ভালো হত, ওই শূন্যতা পূরণ করতে খুব একটা সময় লাগে নাই। মানে অগাস্টের শেষ থেকে আমরা দেখতে পেলাম যে নতুন খেলোয়াড়রা এসে হাজির হয়েছেন। একই খেলা আবার পুনরায় চালু হয়ে গেছে।”
’যারা অর্থপাচার করত, নিজেরাই পাচার হয়ে গেছে’
ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাতের লুট হওয়া পাচারের টাকা ফেরানোর সুযোগ কতটা– এমন প্রশ্নে জাহিদ হোসেন বলেন, “এটা ফেরত আনা খুবই কঠিন। আপনি আন্তজার্তিক অভিজ্ঞতা যদি দেখেন, আন্তর্জাতিক ধারণা হচ্ছে প্রতিবছর পাচার হওয়া অর্থের প্রবাহ প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলারের মত বিভিন্ন দেশ থেকে চলে যায় বা ভেতরে চলে আসে।
“পুনরুদ্ধারের হারটা হচ্ছে, আপনার ১০০ টাকা যেখানে অবৈধভাবে বেরিয়ে যাচ্ছে সেখান থেকে ফেরত আসার পরিমাণ হচ্ছে এক টাকা। কাজেই এইটা নিয়ে যেটা গেছে সেইটা আপনি ফেরত আনতে পারবেন এটা অনেক দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং সেই প্রক্রিয়া শেষেও যে রেজাল্ট পাবেন এটার কোনো নিশ্চয়তা নাই।“
এমন প্রেক্ষিতে সামনে যাতে তা না ঘটে বা বন্ধ করাই হবে সরকারের প্রথম কাজ, যোগ করেন তিনি।
তার ভাষ্য, “অন্তত রেমিটেন্সের তথ্য দেখে বোঝা যায় যে সেখানে একটা বড় ধরনের ভাটা পড়েছে। এই যে অর্থপাচারে সেটা ভাটা পড়েছে আমার মনে হয়। বড় কারণ হল, যারা অর্থপাচার করতো তারা নিজেরাই পাচার হয়ে গেছে। এবং ওই শূন্য এখনো পূরণ হয় নাই।
“কিন্তু ওই শূন্যতা যে আগামীতে থেকে যাবে অন্তত চাঁদাবাজির কেসটা থেকে মনে হয়, যে সেটাও পূরণ হওয়াটাকে আপনি একেবারে উড়িয়ে দিতে পারেন না। তাহলে আবার নতুন খেলোয়াড় এসে পুরনো খেলা খেলবে।“
অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করে ওই দেশের আদালতে লড়াই করে সেগুলো অবরুদ্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, “তাহলে এটা ভবিষ্যতের জন্য তো একটা সুস্পষ্ট বার্তা যাবে যে আগের মত খেলা এখন খেলা সম্ভব হবে না।“
প্রবৃদ্ধি কম, উত্তরণের উপায় কী?
ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে সরকার বদলের পর অস্থিরতা কাটিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বিনিয়োগসহ অর্থনীতির নানা খাতে দিশা ফেরানোর বার্তা দিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা অবনতির পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার মধ্যে আন্তর্জাতিক টানাপোড়নেও দেশের অর্থনীতি ধীর হয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্ব ব্যাংক ও এডিবির অনুমান বলছে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৪ শতাংশের নিচে।
এর থেকে উত্তরণে উপায় কী জানতে চাইলে জাহিদ হোসেন উৎপাদন খাতের পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করতে না পারার কথা বলেন।
উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোকে ‘প্রধান লক্ষ্য’ হিসেবে তুলে ধরে তিনি জ্বালানির সংকট বিশেষ করে গ্যাসের সংকট কাটানোর ওপর জোর দেন।
মহামারী পূর্ব কালের প্রবৃদ্ধিতে ফেরার বিষয়ে তিনি বলেন, “বর্তমানে যেই হার (প্রবৃদ্ধির) আছে সেটা মহামাররি আগে যে ধরনের প্রবৃত্তি ছিল তার তুলনায় কম সেটা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে। তবে ওই যে আমরা যদি বলি ওই আগের মত ৭ শতাংশ ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ওটা তো কখনো হয় নাই।
“এখন ধরেন ৫-৬ শতাংশও যদি ওঠানো যায় প্রবৃদ্ধিটাকে তাহলে মোটামুটি অর্থনীতি একটা ঘুরে দাঁড়ানোর পর্যায়ে যাবে।”
ব্যাংক খাতের দুর্দশা কাটার লক্ষণ মিলছে কী?
এ অর্থনীতিবিদের ভাষ্য, “এখানে কিছু কাজ হয়েছে। ধরেন একটা ব্লিডিং হচ্ছিল। বড় ধরনের ক্ষত তৈরি হচ্ছিল সেইটাকে মোটামুটি ঠেকানো গেছে, যাতে রোগী মারা না যায়।”
পট পরিবর্তনের পর অক্টোবর মাসকে আর্থিক খাতের জন্য আতঙ্কের মাস হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, “যে ব্যাংক ফাঁকা হতে পারে এবং যার কারণে ইভেন ভালো ব্যাংকগুলোও বিপদে পড়তে পারে। ডিপোজিটররা কনফিডেন্স পাচ্ছিল না। ওইটাকে আমরা মোটামুটি ঠেকিয়েছি। তারপরে কিছু রেগুলেটরি রিফর্ম হয়েছে যেমন ধরেন এই যে খেলাপি ঋণের স্বীকৃতি ১৮০ দিনের জায়গায় ৯০ দিনের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নিয়ে আসা। যেটা আমাদের এখানেও আগেই ছিল।”
তার মতে, এতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বাড়বে। এর কারণ আগে এটা ছিল আগে ‘কার্পেটের নিচে’ ছিল। এখন সংস্কারের ফলে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসছে।
এছাড়া দিন কয়েক আগে ব্যাংক খাতের জন্য ’রেজুলেশন’ বিষয়ক নতুন অধ্যাদেশকে তিনি এ খাতের দৃশ্যমান অগ্রগতি হিসেবে তুলে ধরেন।
দুর্বল ও খাদের কিনারে চলে যাওয়া ব্যাংকগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, “একটা স্থায়ী সমাধান হল, যেটি ক্লিনিক্যালি ডেড সেটাকে অবসায়ন করা, আরেকটা মার্জার একুজিশনের দিকে যাওয়া। আর লাস্ট যেটা থাকে সেটা হচ্ছে লাইজেশন করা পাবলিক মানি দিয়ে।
“মানে বাজেট থেকে অর্থ দিয়ে ওইটা চেষ্টা করা। যে ট্যাক্সপেয়ারের মানি দিয়ে যাতে এই দুর্দশাগত প্রতিষ্ঠানকে বেইল আউট করতে না হয় সে ধরনের উপায় খুঁজতে হবে। কাজেই ওটাই আগামীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এই রেজুলেশনটা।”
শুধু যুক্তরাষ্ট্রকে ’শুল্ক ছাড় নয়’
আলোচনায় অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের দুনিয়া কাঁপিয়ে দেওয়া শুল্ক যুদ্ধ, যেটি থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশও। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে করণীয় নিয়েও তার পরামর্শ রেখেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় এসেই শতাধিক দেশের রপ্তানি পণ্যে সম্পূরক শুল্ক বসিয়েছে। বিভিন্ন দেশের আবেদনের পর তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রেখেছে। বাংলাদেশ সরকারের তরফে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে আরও সময় চাওয়া হবে।
এদিকে আগামী বছর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে। এমন পরিস্থিতিতে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানির বেলায় শুল্ক না কমিয়ে সব ট্যারিফ লাইনের ক্ষেত্রেই সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক এই অর্থনীতিবিদ।
ট্যারিফ নীতি সংস্কার বলতে বর্তমানে যে ৮ হাজারের ওপর ট্যারিফ লাইনের পণ্য আছে- তাতে সম্পূরক শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, উচ্চ আমদানি শুল্ক কমিয়ে উদার করা। দেশি পণ্যের সুরক্ষা নীতির আওতায় আমদানির ক্ষেত্রে তা বাড়িয়ে রেখেছে সরকার।
জাহিদ হোসেন বলেন, “শুধু আমেরিকার ক্ষেত্রে যদি আপনি দেন (শুল্ক কমিয়ে দেওয়া) তাহলে কিন্তু আবার ডব্লিউটিওর সাথে জটিলতা তৈরি হবে। ডব্লিউটিও বলবে তুমি একটা দেশকে দিলে অন্য দেশের বেলায় এই বৈষম্য শুল্ক তো ঠিক না।“
এভাবে দিলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ডব্লিউটিওতে মামলা হওয়ার আশঙ্কার কথাও প্রকাশ করেন তিনি।
তার মতে, “শুধু আমেরিকাকে লক্ষ্য করে না। সার্বিকভাবে এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর ট্যারিফ রেট আমাদের কমাতে হবে।
“সেটা এখন থেকেই শুরু হোক এবং এক ঢিলে দুই পাখি তখন আপনি মারতে পারবেন।”
উচ্চাভিলাসী বাজেট দেখতে চান না
বর্তমান বাস্তবতায় আগের মত উচ্চাভিলাসী বাজেট দেখতে চান না জাহিদ হোসেন। তবে তার আশা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন না। বলেন, “কারণ যেটা শুনতে পাচ্ছি সেই অঙ্কটা সেটা এখনো বেশ বিরাট আকারের, আর তা বাস্তবায়নযোগ্য না। কাজেই বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট করা।
“বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট বলতে আমি যেটা বলছি যে, যেটাকে আপনি অর্থায়ন করতে সক্ষম। আপনার রাজস্ব আহরণ এবং আপনার বিদেশি ও নিজস্ব অর্থায়ন– এই তিনটা মিলে যেই অর্থ জোগাড় আপনি করতে পারবেন সেই আকারের একটা বাজেট যদি দেয়া হয়, তাইলে সেটা বাস্তবায়নের জন্য অন্ততপক্ষে প্রাথমিকভাবে সম্ভব বলবেন।“
এছাড়া শুধু কর বাড়িয়ে সহজ পথে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পক্ষেও নন তিনি। এজন্য তার পরামর্শ করজাল বাড়ানো এবং কর আইনের ‘লুপহোলের’ সুযোগ নিয়ে যে পরিমাণ ফাঁকি হয় তা কমানো।
বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক খাতে অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যয় বাড়ানোর তাগিদ দেন। বলেন, “এখন এই যুক্তি দিলে হবে না যে এখানে তো বরাদ্দ দেই তারাতো ব্যয় করতে পারে না। কাজে বরাদ্দ বাড়িয়ে লাভ কী?”