Published : 11 Jun 2025, 05:53 PM
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ওলামা পরিষদের আপত্তির মুখে 'তাণ্ডব' সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধ রাখার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিচালক আশফাক নিপুণ।
সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধের সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি ‘তাণ্ডব’ প্রদর্শনের ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন এই পরিচালক।
কোরবানি ঈদের দিন থেকে কালিহাতীর আউলিয়াবাদ এলাকায় জেলা পরিষদের কমিউনিটি সেন্টার কাম মাল্টিপারপাস ভাড়া নিয়ে 'তাণ্ডব' সিনেমা প্রদর্শনীর আয়োজন করেন কামরুজ্জামান সাইফুল ও সাজু মেহেদী।
ঈদের দিন থেকে সিনেমাটি চললেও, মঙ্গলবার থেকে ‘নিরাপত্তার অভাবে’ প্রদর্শন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
ফেইসবুকে দেওয়া পোস্টে নিপুন লিখেছেন, "অতি সম্প্রতি তৌহিদী জনতার হুমকির কারণে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে 'তাণ্ডব' সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ, সিলেটে পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ আর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আপনি এখনো পড়ে আছেন চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে?
“বন্দরের ব্যাপারে যেভাবে যে কোনো প্রতিরোধ মোকাবিলার ঘোষণা আসে আপনার কাছ থেকে, মব নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সে রকম কঠোর প্রতিরোধের ঘোষণা কবে আসবে আপনার কাছ থেকে?"
দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে এই পরিচালক লিখেছেন, "অবিলম্বে কালিহাতীতে 'তাণ্ডব' প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন, যে কোনো পর্যটনকেন্দ্র, পাবলিক প্লেসকে ঝুঁকিমুক্ত করার ব্যবস্থা করেন এবং সবার আগে মবের উল্লম্ফন বন্ধ করেন। গত ১০ মাসে এটা না করতে পারার কাফফারা হিসেবে আগামী ১০ মাস আপনার মূল কাজ হওয়া উচিত এটা।"
শনিবার সিনেমা মুক্তির আগের দিন শুক্রবার বাদ আছর পারখী ইউনিয়ন ওলামা পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করে সিনেমা প্রদর্শন বন্ধের দাবি তোলা হয়।
এছাড়া সিনেমা প্রদর্শনী বন্ধের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদনও করা হয় ওলামা পরিষদের পক্ষ থেকে।
ওলামা পরিষদের একজন আব্দুল্লাহ বলেন, "মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানে ক্ষতি হতে পারে। এছাড়াও অসামাজিক কার্যকলাপ হতে পারে। সেই জন্য হলটি বন্ধের জন্য বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।"
‘তাণ্ডব’ দেখাতে হলটি এক মাসের জন্য অনুমতি সাপেক্ষে ভাড়া নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুই আয়োজক সাইফুল ও মেহেদী। এজন্য অগ্রিম ১০ দিনের ভাড়াও পরিশোধ করেছেন তারা।
আয়োজক মেহেদী বলেন, "কমিউনিটি সেন্টার কাম মাল্টিপারপাস হলের এসি সার্ভিসিং, টিকেট প্রিন্টিং ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সব মিলিয়ে আমাদের নয় লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। আমরা সব মিলিয়ে আড়াই দিনের মত সিনেমা চালাতে পেরেছি। ভালো সাড়া পাচ্ছিলাম।“
কেবল প্রদর্শনী বন্ধ নয়, সিনেমা মুক্তির আগে প্রচার কাজেও বাঁধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মেহেদী।
তিনি বলেন, “পোস্টার লাগাতে দেয়নি ও মাইকিংও করতে দেয়নি।"
আয়োজন সাইফুল বলেন, "স্থানীয় আলেম ওলামারা আমার যে ক্ষতি করল, এমন ক্ষতি যাতে আর কারো না হয়, সেজন্য সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। শুরু থেকে ভালই সাড়া পাচ্ছিলাম। আশে পাশের বল্লা, পারখী ও বীরবাসিন্দা এলাকার লোকজন না আসলেও সখীপুর ও মির্জাপুরের দর্শক বেশি আসতেন।"
বিভিন্নভাবে আসা ‘হুমকি এবং নিরাপত্তাহীনতার অভাবে’ হলটি বন্ধ করতে তারা বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সাইফুল।
কালিহাতী থানার ওসি জাকির হোসেন বলেন, "আমার কাছে ওলামা পরিষদের লোকজন এসেছিলেন। তাদের বলেছি, এই বিষয়ে আমি সিদ্ধান্ত দেওয়ার কেউ নয়। হুজুররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলছে এই সিনেমা ইসলামবিরোধী। আপনারা এই সিনেমা হলে গিয়ে দেখবেন না। এ কথা গুলো মানুষের মুখে শুনেছি।
“তবে আমি আরেকটা বিষয়ে জানতে পেরেছি যে সিনেমা চালাতে গিয়ে তাদের প্রতিদিন খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আর আয় হয় ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা এর জন্য বন্ধ হতে পারে।"
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, "বিষয়টি আমি জেনেছি। জেলা পরিষদের হলটি ভাড়া নিয়ে তারা সিনেমাটি চালাচ্ছিলো। এ দিকে বন্ধ করার জন্য আমার অফিসে আবেদনও করেছে। তবে আমি ছুটিতে রয়েছি।"
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, "আবেদনের প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তের মাধ্যমে আমরা ওই হলটি ভাড়া দিয়েছিলাম। সাথে কিছু শর্তও দিয়েছিলাম, তার মধ্যে অন্যতম ছিল, সেখানে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে সিনেমা চালানো বন্ধ করতে হবে। পরবর্তীতে কি হয়েছে, আর জানি না।"
রায়হান রাফীর পরিচালনায় 'তাণ্ডব' সিনেমায় ঢাকাই সিনেমার সুপারস্টার শাকিব খানের সঙ্গে আছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান। আরও অভিনয় করেছেন সাবিলা নূর। এই সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক হয়েছে এই অভিনেত্রীর।
সিনেমায় বিভিন্ন চরিত্রে আরও অভিনয় করেছেন রোজী সিদ্দিকি, এজাজুল ইসলাম, আফজাল হোসেন, গাজী রাকায়েত, সালাহউদ্দিন লাভলু, শহিদুজ্জামান সেলিম, মুকিত জাকারিয়া, সুব্রত, এফ এস নাঈম, আদনান আদিবসহ অনেকে।