Published : 17 May 2024, 10:36 AM
ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে মেনেও নিলেন। তবে মাস ঘুরতে না ঘুরতেই আবার আদালতে গিয়ে নব নির্বাচিত কমিটির ফল স্থগিত চেয়ে রিট আবেদন করে বসলেন।
নির্বাচনে অল্প ভোটে হেরে যাওয়া সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিপুণ আক্তারের এ রিট আবেদনকে কেন্দ্র করে আবার আলোচনায় এসেছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির গতবারের নির্বাচন নিয়েও কম জল ঘোলা হয়নি। ২০২২-২৪ মেয়াদের ওই নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে জায়েদ খান ও নিপুণ আক্তারের মধ্যকার দ্বন্দ্ব হাই কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। এবারও মিশা-ডিপজল প্যানেলের জয় এবং দায়িত্ব গ্রহণের এক মাস পার না হতেই তা আবার আদালতে গিয়ে ঠেকল।
গত ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবারও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছিলেন নিপুণ। কিন্তু হেরে গেছেন মনোয়ার হোসেন ডিপজলের কাছে।
নির্বাচনে সভাপতি মিশা সওদাগর এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ডিপজল নির্বাচিত হয়েছেন। ২০২৪-২৬ মেয়াদে তারা সমিতিকে নেতৃত্ব দেবেন।
এক মাস আগে হয়ে যাওয়া নির্বাচন নিয়ে নতুন করে আলোচনা তৈরি করছেন নিপুণ। নবনির্বাচিত কমিটির কার্যকারিতা স্থগিত চেয়ে রিট আবেদন করেছেন তিনি। বুধবার হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি দায়ের করা হয়।
এক মাস পর কেন এই রিট করলেন নিপুণ, এই প্রশ্ন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকলের মনেই।
চলচ্চিত্রের জ্যেষ্ঠ শিল্পীরাও বিষয়টিকে ঠিকভাবে নিচ্ছেন না। নির্বাচন নিয়ে ঘুরেফিরে এমন পরিস্থিতি তৈরি করায় বিরক্ত তারা।
প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের পাঁচ দশক পূর্ণ করেছেন মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা।
এমন ঘটনা ৩৫ বছরে শিল্পী সমিতিতে আগে হয়নি মন্তব্য করে তিনি গ্লিটজকে বলেন, “শিল্পী সমিতি, নির্বাচন নিয়ে গোটা দেশে আলোচনা এটা কিন্তু গত দুই বছরের নির্বাচন নিয়ে হচ্ছে। এটা দিয়ে ৩০-৩৫ বছরের একটা সংগঠনের বিচার করা, বদনাম করা ঠিক না। পূর্ববর্তী সময়ে শিল্পী সমিতি কখনও কোর্ট-কাচারিতে যায়নি।
“আমাদের সময়ে যে কোনো গণ্ডগোল হয়নি তা কিন্তু না। গণ্ডগোল হয়েছে, সেটা আমরা নিজেরা নিজেরা সমাধান করেছি। সিনিয়র শিল্পীরা বসে সমাধান করেছি। সেসময় রাজ্জাক, আলমগীর, আমি, ফারুক আমরাও কিন্তু নেতৃত্ব দিয়েছি। এসব পরিস্থিতি আমরা কল্পনাও করিনি।”
একজন শিল্পী ঠিক কেন এই রিট করলেন- সেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “কী কারণে তিনি ফলাফল স্থগিত চাইছেন, এই বিষয়ে কিন্তু আমরা বোধগম্য নই। গতবারও নির্বাচনের পর সিনিয়রদের সঙ্গে সমাধান না করে তারা কোর্টে গিয়েছে। কোর্টে যাওয়ার পর সেটার সুরাহা এখনও হয়নি। বিষয়টি দ্বিতীয় নির্বাচন দিয়ে ফুরিয়ে গেল।
“কিন্তু দ্বিতীয়বারের মতো একই শিল্পী কোর্টে গেছে। আর কেউ যাচ্ছে না। ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে মেনে নিল, আমরা সেটা প্রশংসা করেছি। এক মাস পর আবার রিট করে সে কী চাচ্ছে? তার কমিটি থেকে যে কজন পাস করেছে তারা কিন্তু সকলের সঙ্গে মিলে কাজ করছে। কেউ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। সে কেন কোর্টে গেল এটা আমারও প্রশ্ন।”
আলোচনায় থাকতে নিপুণ এই কাজ করেছেন মন্তব্য করে গুণী এই অভিনেতা বলেন, “হতে পারে সে সংবাদমাধ্যমে আলোচনায় থাকতে চায়। সবাই তো নিজেকে তুলে ধরতে, আলোচনায় থাকতে পছন্দ করে। সে হয়ত নেগেটিভভাবে আলোচনা ধরে রাখতে চায়। একজনই কিন্তু দুবার করে কোর্টে যাচ্ছে অভিযোগ নিয়ে আর কেউ যায়নি। এটা হাইলাইটে থাকার জন্য।
“চলচ্চিত্র জগতে ২-৩ জন ছাড়া তো আর কেউ কাজ করছে না। এখন তার কাজ না থাকলে সে হারিয়ে যাবে, এটা হয়ত মানতে চাচ্ছে না। তবে এটা বন্ধ হওয়া দরকার। কারণ সে শিক্ষিত একটা মেয়ে। এসব সঠিক কাজ নয়।”
একইভাবে বিরক্তি প্রকাশ করে অভিনেত্রী সূচন্দা গ্লিটজকে বলেন, “এসব নিয়ে কথা বলাটাও খারাপ লাগে। শিল্পী সমিতি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা, আমাদের সংস্কৃতির আতুড়ঘর। এখানে শিল্পীরা একসঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করবে। সংগঠন নিয়ে বারবার আদালতের কাছে যাওয়া দুঃখজনক।
“আমরা যখন নিয়মিত কাজ করেছি, সে সময়ও সমিতি ছিল। এ রকম হয়নি। এখন কেন এগুলো হচ্ছে? বিভেদ তৈরি হচ্ছে। এগুলো নিয়ে আলোচনা করলেও খারাপ লাগে। সবাই মিলেমিশে কাজ করুক।”
এ বিষয়ে কথা বলতে ‘রুচিতে বাঁধে’ বলে মন্তব্য করেছেন অভিনেতা বাপ্পারাজ। অনেক শিল্পীই বিষয়টি নিয়ে নিন্দা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে শিল্পীদের আরও সংযত হওয়া উচিত।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে এফডিসিতে শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটিকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন নিপুণের আমলে পদ ফিরে পাওয়া ১০৪ জন শিল্পী।
এ অনুষ্ঠানে নির্বাচনকে আবার আদালতে নিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজল।
নিপুণকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “কেস খেলবা, আসো। যেটা খেলার মন চায় সেটাই খেল। আমরা চাই ভদ্রতা ও নম্রতা। আমরা চাই চলচ্চিত্র কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সেদিকেই কাজ করার। আমরা ঝামেলা চাই না।”
অভিনেত্রী নিপুণ এখন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
গত ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ২৬৫ ভোট পেয়ে সভাপতি পদে জয়ী হন মিশা সওদাগর। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মাহমুদ কলি পেয়েছেন ১৭০ ভোট। ২২৫ ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক হন ডিপজল। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নিপুণ অল্প ভোটে হেরেছেন; তিনি পেয়েছেন ২০৯ ভোট।