Published : 18 Jun 2025, 08:52 PM
ঢাকার বাইরেরও ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহী এইডিস মশার বিস্তার বাড়ছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের এক জরিপে উঠে এসেছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর গত ফেব্রুয়ারি, মার্চ এবং মে মাসে এই জরিপ চালায়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, বরিশাল সিটি করপোরেশন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন এবং কুষ্টিয়া, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ঝিনাইদহ এবং মাগুরা পৌরসভা এলাকায় যান জরিপকারীরা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ফেব্রুয়ারি মাসে, বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় মার্চ মাসে এবং অন্য পৌরসভাগুলোয় মে মাসে চলে এই জরিপ।
বুধবার মহাখালীতে আইইডিসিআরের সভাকক্ষে এক অবহিতকরণ সভায় জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন।
তিনি বলেন, জরিপ করা আটটি জেলার মধ্যে ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলায় এইডিস মশার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।
জরিপে ঝিনাইদহ পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের ২৭০টি বাড়ি পরিদর্শন করে ৫৪টি বাড়িতে এইডিস লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যায়। ওই পৌরসভার ব্রুটো ইনডেক্স ৬০।
মাগুরা পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের ২৭০টি বাড়ি পরিদর্শন করে ১৫০টি বাড়িতে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। ওই পৌরসভার ব্রুটো ইনডেক্স ৫৫।
কোনো এলাকার মশার ঘনত্বের একক হল ব্রুটো ইনডেক্স। কোনো এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর বেশি হলেই সেখানে মশার বিপজ্জনক উপস্থিতি বিবেচনা করা হয়।
সভায় জানানো হয়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স, ৫.৫২, বরিশালের ২.৫ এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স ৪.৭৯। এছাড়া কুষ্টিয়ায় ৭.৮৭, পিরোজপুরে ২০ এবং পটুয়াখালী পৌরসভায় ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ১৯.২৬।
অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, “জরিপের ফলাফল হাতে আসার পরই আজকেই প্রথম জানলাম যে ওই দুই জেলায় মশার উপস্থিতি বেশি। এ কারণে ঠিক কেন সেখানে মশা বেশি সেই কারণটা জানা যায়নি।”
চলতি মৌসুমে ঢাকার বাইরে বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণ হিসেবে অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, বরগুনা এলাকায় নোনা পানির কারণে খাওয়ার পানির সমস্যা আছে। সে কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা বড় বড় মটকায় পানি সংরক্ষণ করে, সেখানে মশা জন্মাচ্ছে।
“তারা পানিটা ঢাকে না, অনেক সময় কাপড় দিয়ে ঢাকলেও কাপড়ের ওপর পানি উঠে যায়। সেখানে মশা জন্মাতে পারে, তাছাড়া সেখানে প্লাস্টিক কনটেইনারও আছে অনেক। এগুলো কারণ হতে পারে। বরগুনায় এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হওয়ায় আইইডিসিআরের একটি দল সেখানে গেছে। সেখানে আউটব্রেক ইনভেস্টিগেশন করছে। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে সেখানে সার্ভে করেছে। এখন আবারও কাজ করছে। তারা ফিরে আসলে ডিটেইল বলা যাবে।"
সভায় বলা হয়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ৩ হাজার ১৪৭টি বাড়ি পরিদর্শন করে ৪৬৩টি বাড়িতে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। অর্থাৎ সে সময় ঢাকার ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ বাড়িতে এইডিস মশার উপস্থিতি ছিল।
তাহমিনা শিরিন বলেন, জরিপে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকাং ৮.৩২ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৭.৯৫ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে।
“রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ১৩টি ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ওই দুটি ওয়ার্ডের ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর বেশি।”
সভায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন বলেন, জনস্বাস্থ্যে জরুরি পরিস্থিতি যত দ্রুত সম্ভব মানুষকে জানাতে হবে। এতে মানুষ প্রাথমিকভাবে একটু ধাক্কা খেলেও তারা প্রস্তুতি নিতে পারে।
“তারা অভ্যস্ত হয়ে যায় যে এই বিপদটা আসছে। সাগরে ঘূর্ণিঝড় হলে আবহাওয়া দপ্তর থেকে সিগন্যাল দেওয়া হয় মানুষকে সতর্ক করা, প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য, আতঙ্কিত করার জন্য নয়। আমরা কিছুটা রক্ষণশীলতা অবলম্বন করি যে মানুষ প্যানিকড হয়ে যাবে। কিন্তু যত দেরিতে বলবেন মানুষ তত বেশি প্যানিকড হয়ে যাবে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা জরুরি, পানি জমতে দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি জনসচেতনতাও বাড়াতে হবে।
“সমস্যাটার দায়দায়িত্ব অনেকগুলো সংস্থার। বিশেষ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন। আমি মনে করি অনেক কিছুর পরও যদি আমরা মশারি না টানাই তাহলে আমাদের ঝুঁকি থেকে যাই।”