Published : 04 Jan 2025, 12:57 PM
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান এবং আফ্রিকার সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা সাহিত্যে তুলে ধরার জন্য তিনি পরিচিত। ১৯৯১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এ লেখকের জন্ম ১৯২৩ সালের ২০ নভেম্বর, দক্ষিণ আফ্রিকার একটি সোনার খনির শহর, স্প্রিংসে। তিনি সাহিত্যিক নাদিন গর্ডিমার (১৯২৩ - ২০১৪)।
শৈশব থেকেই বই পড়ার প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল, যা তার লেখক হয়ে ওঠার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করে। ২০০৫ সালে সাংবাদিক সাইমন স্ট্যানফোর্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উঠে আসে গর্ডিমারের শৈশবের নানা কথা।
গর্ডিমারের মা এসেছিলেন ইংল্যান্ড থেকে, আর বাবা লাটভিয়া থেকে। বাবা ঘড়ি মেরামতের কাজ করতেন। ছোটবেলায় গর্ডিমার পড়তেন একটি কনভেন্ট স্কুলে। শনিবারে পকেট খরচ নিয়ে সিনেমায় যাওয়া ছিল আনন্দের বিষয়।
সাইমনের এক প্রশ্নের উত্তরে গর্ডিমার বলেন, “আমার মা প্রচুর বই পড়তেন এবং ছোটবেলায় আমাদেরও পড়ে শোনাতেন। আমার বয়স যখন মাত্র ছয় বছর, তখনই শিশুদের গ্রন্থাগারে আমার নাম নথিভুক্ত করা হয়। সেই গ্রন্থাগারকেই আমি এখনো আমার প্রধান শিক্ষার উৎস হিসেবে বিবেচনা করি।”
গর্ডিমার মনে করেন, সেই গ্রন্থাগার ছাড়া তিনি হয়তো কখনো লেখকই হতে পারতেন না। তার মতে, “লেখক হওয়ার একমাত্র প্রশিক্ষণ হলো বই পড়া।”
লেখক হওয়ার পেছনে কী প্রধান ভূমিকা রেখেছে? এমন প্রশ্নে উত্তরে গর্ডিমার বলেন, “গ্রন্থাগারে পড়া বইগুলোই আমাকে লেখক হতে সাহায্য করেছে। পাশাপাশি, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সচেতনতা এবং সমাজের অসাম্য সম্পর্কে চিন্তা করার প্রবণতাও আমার সৃষ্টিশীলতাকে প্রভাবিত করেছে।”
আজকের প্রজন্মের বই পড়ার অভ্যাস নিয়ে তার মতামত হচ্ছে, “শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস বিলুপ্তপ্রায়। তারা বাড়ি ফিরে টেলিভিশন চালায়, কিন্তু বই পড়া থেকে বঞ্চিত হয়। বই পড়ার আনন্দ এবং অন্য এক জগতে প্রবেশ করার অভিজ্ঞতা আজকাল অনেক কম। এর ফলে আমাদের মধ্যে কার্যকরী সাক্ষরতার মানও অনেক কমে গেছে।”
কিন্তু গর্ডিমার চেয়েছিলেন নৃত্যশিল্পী হতে। তার মতে ছোটবেলায় ‘ভয়ংকর শিশু’ ছিলেন তিনি। দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট। দশ বছর বয়সে হঠাৎ একদিন অজ্ঞান হয়ে পড়েন। খুব রোগা ছিলেন, কিন্তু কেউ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু পরে আবার ঘটায় তখন তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। দেখা গেল, হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত।
গর্ডিমারের মতে ‘চঞ্চলতার কারণেই এমনটা হচ্ছিল’। শেষ পর্যন্ত মায়ের নিষেধে আর নাচ করা হয়নি গর্ডিমারের। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমার মা স্কুলে গিয়ে বললেন, এই মেয়েটি কোনো শারীরিক পরিশ্রম করতে পারবে না, টেনিস খেলতে পারবে না, সাঁতার কাটতে পারবে না। মায়ের কথা তখন অমান্য করার কোনো উপায় ছিল না। তিনি বলতেন, সিঁড়ি দিয়ে উঠবে, ধীরে ওঠো। মনে রেখো, তোমার হৃৎপিণ্ড দুর্বল। আর এভাবেই আমার নাচ বন্ধ হয়ে গেল। এটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্ট।”
জীবদ্দশায় ১৫টিরও বেশি উপন্যাস, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ লিখেছেন গর্ডিমার। তার উল্লেখযোগ্য কিছু বই- ‘দ্য লায়িং ডেইজ’ (১৯৫৩), ‘দ্য ওয়ার্ল্ড অফ স্ট্রেইঞ্জার্স’ (১৯৫৮), ‘ওশিয়ান অফ লাভিং’ (১৯৬৩), ‘জুলাই’স পিপল’ (১৯৮১), ‘মাই সন’স স্টোরি’ (১৯৯০), ‘দ্য হাউজ গান’ (১৯৯৮) ও ‘গেট অ্যা লাইফ’ (২০০৫) ইত্যাদি।