Published : 17 Jun 2025, 02:36 AM
‘টাকা জমাও’, শিশুরা এই বাক্যটা প্রায়ই শোনে। কিন্তু তারা বুঝতে পারে না, কীভাবে টাকা জমাতে হবে, আর কেন জমাতে হবে? সঞ্চয় শুধু অর্থ জমানো নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য ভাবা, দায়িত্ব নেওয়া ও নিজের প্রয়োজন বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশিক্ষণ। এই অভ্যাস শিশুকাল থেকেই গড়ে তোলা জরুরি।
কেন শিশুদের সঞ্চয় শেখানো দরকার, কারণ আছে অনেকগুলো। সেগুলো এখানে উল্লেখ করা হলো।
অর্থের মূল্য শেখে
খেলনার জন্য টাকা জমাতে গিয়ে বুঝতে শেখে কোনটা দরকারি, কোনটা বিলাসিতা। এই শিক্ষা ওকে অর্থের গুরুত্ব বুঝতে সহায়তা করবে।
ধৈর্য ও পরিকল্পনা শেখে
এখনই না পেয়ে পরে পাওয়া, এই ‘ডিলেইড গ্র্যাটিফিকেশন’ শিশুকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শেখায়। এতে সে ধৈর্যশীল হয়। অর্থ খরচ করার ব্যাপারে পরিকল্পনা করতে শেখে।
আয় ও ব্যয়ের হিসাব
ছোটবেলার অভ্যাস থেকেই বড় হয়ে নিজের বাজেট ও ব্যয়ের পরিকল্পনা গড়ে ওঠে। আয় অনুযায়ী ব্যয় করতে শিখবে। ছোটবেলা থেকেই অতিরিক্ত খরচ করার বদ অভ্যাস থেকে দূরে থাকবে।
এখন প্রশ্ন হলো, শিশুকে কীভাবে সঞ্চয়ে উৎসাহী করবেন? আসলে শিশুকে সঞ্চয় শেখানোর চেষ্টা সব অভিভাবকদের থাকা উচিত। কেবল কয়েকটি বিষয় মেনে চললেই শিশুর মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা সম্ভব।
মাটির ব্যাংক উপহার ও নাম দিন
আপনার সন্তানকে একটি ছোট্ট মাটির ব্যাংক বা টিনের বক্স উপহার দিন। তারপর সেটাতে টাকা জমানোর পরামর্শ দিন। আরও ভালো তার নামে মাটির ব্যাংকটির নামকরণ করলে। কারণ শিশুরা নিজের নামে কিছু পেলে আরও যত্ন করে। তাই তার সঙ্গে মিলিয়ে নাম দিতে পারেন, ‘সঞ্চয়ী সোহান’, ‘টুকটুকি টাকা’ ইত্যাদি। এমন মজার নাম রাখলে আগ্রহ বাড়বে।
লক্ষ্য ঠিক করতে সাহায্য করুন
শিশুদের অনেক রকম চাহিদা থাকে। সেখান থেকে ওকে একটি লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে দিন। আর বলে দিন, তার জমানো টাকা দিয়ে পছন্দের জিনিসটি কেনা হবে। ধরা যাক, সে একটি বই বা খেলনা কিনতে চায়। হিসাব করুন, কতদিনে কত টাকা জমালে সেটা কিনতে পারবে। তারপর তাকে সেই লক্ষ্য বেঁধে দিন। তবে শিশুর বয়স অনুযায়ী লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। তাহলে তার জন্য সেটা অর্জন সহজ হবে। এতে সে হতাশ হবে না।
টাকা দিলে তার কারণ জানিয়ে দিন
মাঝে মাঝে শিশুর হাতে টাকা দেন, কিন্তু কেন দেন এবং সেই টাকা সে কীভাবে খরচ করবে তা বলে দিতে পারেন। যেমন—ঈদ, জন্মদিন, বা পরীক্ষায় ভালো করলে তাকে টাকা দেন। তবে এই টাকা দেওয়ার সময় কিছু পরামর্শ দিতে পারেন। সেটা শুধু খরচ না করে কিছু অংশ জমিয়ে রাখতে উৎসাহ দিন। তাকে বুঝিয়ে বলুন, এই টাকাটা জমিয়ে কী ভালো কাজ করা যেতে পারে।
তিন ভাগে ভাগ করতে শেখান
এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট। কেবল শিশু নয়, আমাদের সবার এটা শেখা উচিত। শিশুকে শেখান তার টাকাকে ভাগে ভাগ করতে হবে। তিনটি ভাগ হলো—দরকারি ব্যয়, ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় এবং অন্যদের দান। এতে শিশু অর্থের ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহার শিখবে।
গল্প পড়ান সঞ্চয় নিয়ে
সঞ্চয়ের গুরুত্ব নিয়ে অনেক শিশুতোষ গল্প প্রচলিত আছে। সেই গল্পগুলো ওদের পড়ে শোনান। তাহলে ছোট থেকেই সঞ্চয়ের গুরুত্ব বুঝবে এবং সঞ্চয়ে আগ্রহী হবে। ছড়া ও গল্পের মাধ্যমে অর্থের গুরুত্ব ও সঞ্চয়ের মূল্য শেখানো যায়।
সঞ্চয়ের জন্য পুরস্কার দিন
ছোটদের পুরস্কৃত করলে ওরা খুব খুশি হয়। শুধু তাই নয়, ওই কাজের প্রতি আগ্রহ বেড়ে দ্বিগুণ হয়। তাই সে যদি তার লক্ষ্য পূরণ করে, তাহলে তাকে পুরস্কৃত করুন, বাহবা দিন। পরিবারের সবার সামনে তার প্রশংসা করুন। এতে তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
বয়স অনুযায়ী সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা
ছোট থেকে শিশুকে সঞ্চয়ী করতে তার বয়সকে প্রাধান্য দিতে হবে। শিশুর বয়স অনুযায়ী তাকে সঞ্চয় শেখাতে হবে। যেমন— ৩-৫ বছর বয়সীদের রঙিন মাটির ব্যাংক উপহার দিন। তাকে কয়েন চিনিয়ে সঞ্চয় শেখাতে হবে।
৬-৮ বছরের শিশুদের ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিন। তাকে ছোট উপহার কিনতে সঞ্চয় শেখান। ৯-১২ বছরের শিশুদের বাজেটের ধারণা দিতে হবে। মাসে কত আয় কত ব্যয় করতে সেই অনুযায়ী সঞ্চয় শেখাতে হবে।
১৩-১৫ বছরের শিশুদের দৈনিক খরচের তালিকা তৈরি করতে শেখান। তাহলে সে দায়িত্বশীল হয়ে উঠবে।
শেষ কথা, শিশুরা চোখে দেখে শেখে, কান দিয়ে নয়। তাই আপনি যদি ওদের দেখিয়ে সঞ্চয় করেন, শিশুও তা অনুকরণ করবে। সঞ্চয় মানে শুধু অর্থ জমানো নয়। দায়িত্ব, ধৈর্য ও ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা—এই মানসিকতা শিশুর ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।