অনূদিত কবিতা
Published : 31 May 2025, 01:16 PM
ওরহান ভেলি কানিক (১৯১৪-১৯৫০) ছিলেন তুরস্কের একজন জনপ্রিয় কবি, যিনি ‘গারিপ আন্দোলন’-এর পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত। তিনি তুরস্কের পুরোনো কবিতার রীতি ভেঙে ফেলেছিলেন এবং নতুনভাবে লিখতে শুরু করেন—যেমন আমরা রাস্তায় কথা বলি, তেমনভাবেই।
তার কবিতায় ছিল না অলঙ্কারের বাহুল্য, ছিল না দুর্বোধ্যতা। বরং তিনি সহজ ভাষায়, সাধারণ মানুষের জীবনের কথা বলতেন। ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন শাস্ত্র পড়তেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। তারপর পুরোপুরি কবিতার জগতেই নিজেকে সঁপে দেন।
কিছু কবি সাধারণ পাঠকের প্রিয় হন, কেউ বা শুধু সাহিত্যিকদের চোখে মহারথী, আবার কেউ কেউ থাকেন বিতর্কের কেন্দ্রে। ওরহান ভেলি ছিলেন সেই বিতর্কিত ঘরানারই একজন। কেউ বলেন, তিনি হতাশাবাদী ছিলেন। কেউ আবার বলেন, তিনিই প্রথম আধুনিক তুর্কি কবি, যিনি আশাকে আঁকড়ে ধরেছিলেন।
তার কবিতায় বারবার উঠে আসে প্রতিদিনকার জীবনের ছোট ছোট ঘটনা, সাধারণ মানুষের ব্যথা-বেদনা আর আনন্দ। তিনি বিশ্বাস করতেন—কবিতা মানেই জটিল শব্দ নয়, বরং জীবনের সহজ কথা বলা। চলুন, তার তিনটি কবিতা পড়ে নিই।
মুক্তি
বাঁচতে আমাদের টাকা লাগে না—
বাতাস লাগে? একটুও নয়।
মেঘ দেখে টাকা কাটে কেউ?
না, পাহাড়-উপত্যকায় ঘোরাঘুরি বিনামূল্যে।
বৃষ্টি পেতে লাগে না কোনো ফি,
রাস্তায় হাঁটলে বা দোকানের জানালায় তাকালে
কেউ থামিয়ে টাকা চায় না।
তবে হ্যাঁ,
রুটি চাইলে পয়সা দরকার,
তেল-মাখনের দাম আছে।
কিন্তু বাসি জল?
ওটা তো কেউ গুনে নেয় না।
স্বাধীনতার দাম মাথা হতে পারে,
তবু জেলখানা—সে তো বিনা খরচেই!
এই যে বেঁচে থাকা—সেটা একদম ফ্রিতে।
সরিষা বিষয়ক
আমাকে যদি বোকার হদ্দ বলা হয়,
তাও কমই বলা হবে।
সত্যি কথা, সারা জীবন ধরে
আমি একেবারেই বুঝিনি—
এই সমাজে সরিষার এত দরকার!
আবেদীন সাহেব বলছিলেন সেদিন,
যারা ভাবে—সব রহস্যের তল পেতে হবে,
তাদের উদ্দেশ্যে কথাটা।
আমি জানি,
সরিষা না থাকলেও চলত হয়তো।
তবু, হে প্রভু,
কাউকে তার সরিষা থেকে বঞ্চিত কোরো না!
আচমকা
সবকিছুই হলো হঠাৎ—
আলো এলো এক মুহূর্তে,
আকাশ খুলে গেল চোখের পলকে,
মাটি থেকে বাষ্প উঠল হুট করে।
গাছ জন্মালো, কুঁড়ি ফুটলো,
ফল ধরল—সবই একরকম আচমকা।
মেয়েরা এলো, ছেলেরা এলো,
রাস্তা, পুকুর, বিড়াল, মানুষজন…
সব যেন এল হঠাৎ করে।
ভালোবাসাও এলো—
কোনো জানান না দিয়ে, আচমকাই।
যা কিছু আনন্দের—সবই যেন
হুট করে ঘটে যাওয়া এক বিস্ময়!