ভ্রমণগদ্য
Published : 02 Jun 2025, 03:11 AM
ইথিওপিয়া, হর্ন অব আফ্রিকার একটি প্রাচীন দেশ, যার পুরোনো নাম আবিসিনিয়া। এই নামটি ইতিহাসের পাতায় এক গভীর ছাপ ফেলেছে। ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হজরত বিলাল (রা.) ছিলেন এই আবিসিনিয়ার সন্তান, যিনি ইসলামের ইতিহাসে এক অমর নাম।
আবিসিনিয়া পৃথিবীর প্রাচীনতম জনপদগুলোর একটি, যার গল্প শুধু সময়ের সীমানায় আটকে থাকেনি, বরং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। একটি আশ্চর্যজনক তথ্য এই যে, মধ্যযুগে বাংলার মাটিতে শাসন করেছিলেন চারজন হাবশি সুলতান, যারা ছিলেন আবিসিনিয়ান বংশোদ্ভূত।
জালালউদ্দিন ফাতেহ শাহকে ক্ষমতাচ্যুত করে ১৪৮৭ সালে গিয়াসউদ্দিন শাহজাদা বরবক বাংলার সিংহাসনে বসেন। গিয়াসউদ্দিন শাহজাদা বরবক, সাইফুদ্দিন ফিরোজ শাহ, দ্বিতীয় মাহমুদ শাহ এবং শামসউদ্দিন মোজাফফর শাহ—এই চার হাবশি সুলতান ১৪৯৪ সাল (অন্য মতে ১৪৯৩) পর্যন্ত বাংলার মসনদে আসীন ছিলেন। সাত বছরের এই শাসনকাল হয়তো ইতিহাসের বিশাল পটভূমিতে সংক্ষিপ্ত, কিন্তু এর প্রভাব নিয়ে ভাবতে গেলে মনের মধ্যে কৌতূহল জাগে।
বঙ্গের ইতিহাসে এক ক্ষণিক দীপ্তি হয়ে উদিত হয়েছিলেন শাহজাদা বারবক। আফ্রিকার হাবশ দেশ হতে আসা এই মানুষটি প্রথমে ছিলেন সুলতান জালালউদ্দিন ফাতেহ শাহ-এর প্রাসাদরক্ষী বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। রাজসভায় তখন ইথিওপীয় বা হাবশিদের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছিল। জালালউদ্দিন যখন নিজের শাসন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন, সেই সময় তারই আস্থাভাজন বারবক গোপনে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।
ফলাফল ছিল নিষ্ঠুর ও আকস্মিক—সুলতানকে হত্যা করে বারবক নিজেই সিংহাসনে আরোহন করেন ১৪৮৭ সালে। নতুন নাম নেন—সুলতান শাহজাদা। কিন্তু তার রাজত্ব ছিল বাতাসে ঝুলে থাকা প্রদীপের মতো—নিভে যায় অভিষেকের বছরই। তাকে হত্যা করেন এক প্রাক্তন সেনাপতি, সাইফউদ্দিন ফিরোজ শাহ, যিনি নিজেও ছিলেন হাবশি জাতিভুক্ত। এইভাবে, বঙ্গের রাজদরবারে আফ্রিকান রক্তের এক ক্ষণজন্মা অধ্যায় রচিত হয়, যা ইতিহাসের পাতায় আজও জ্বলজ্বল করে।
একটি মজার প্রশ্ন উঠে আসে—এই হাবশি সুলতানদের শাসনের ফলে কি আমাদের ক্রোমোজোমে ইথিওপিয়ান জিনের কোনো ছোঁয়া লেগেছে? সাত বছর খুব দীর্ঘ সময় নয়, তবু কেউ কেউ বলেন—আমাদের কারও কারও চেহারায় নাকি ইথিওপিয়ানদের কিছুটা আদল দেখা যায়! এই কথাগুলো আমার নিজের নয়। ঢাকা থেকে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে আদ্দিস আবাবার পথে কেবিন ক্রু মিরাতের সঙ্গে আলাপের এক ফাঁকে এই প্রশ্ন ও কৌতূহলের কথা উঠে আসে।
তিনি হেসে বলেছিলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু অঞ্চলে আবিসিনিয়ানদের শাসনের ইতিহাস আছে। তাই কি আমাদের মধ্যে তাদের কিছু অংশ মিশে গেছে? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো ইতিহাসের গভীরে লুকিয়ে আছে, অথবা এটি কেবল একটি কৌতূহলী মনের কল্পনা। তবে এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ইতিহাস কতো বিচিত্র আর রঙিন, আর কীভাবে একটি দেশের গল্প অন্য দেশের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে যায়, যা আমাদের ভাবতে বাধ্য করে।
গত বছরের নভেম্বর থেকে ঢাকা থেকে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট শুরু হয়েছে। ফ্লাই এমিরেটস, তুর্কি এয়ারলাইন্স কিংবা কাতার এয়ারওয়েজের তুলনায় একটু হালকা খরচে এই এয়ারলাইন্স ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দুয়ার খুলে দিয়েছে। পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হলেও ইতিহাস আর ঐতিহ্যের প্রতি আমার মনের টান বরাবরই একটু বেশি। তাই ইথিওপিয়ার মাটি ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন আমার বুকের ভেতর বহুদিন ধরে ঘুরপাক খাচ্ছিল।
সেই স্বপ্নের টানে গতবার মাদ্রিদ যাওয়ার পথে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের টিকেট হাতে নিয়েছিলাম। ট্রানজিট মাত্র চার ঘণ্টার, তবু মনে মনে ভাবছিলাম, আদ্দিস আবাবার রাস্তায় একটু হেঁটে, দেশটার গন্ধ শুঁকে আসব। ট্রানজিট ভিসার আবেদনের প্রস্তুতিও সেরে ফেলেছিলাম। কিন্তু আকাশপথের সঙ্গী কেবিন ক্রু-এর কথায় স্বপ্নের রঙে যেন একটু ছায়া পড়ল। চার ঘণ্টায় ইথিওপিয়ার আত্মাকে ছোঁয়া প্রায় অসম্ভব। আদ্দিস আবাবার ট্রাফিকের জটিলতা নাকি মাঝেমধ্যে পথিকের ধৈর্যের পরীক্ষা নেয়।
ইথিওপিয়া আফ্রিকার দেশ, তাই ভেবেছিলাম খরচে কিছুটা সাশ্রয় হবে। কিন্তু শুনে হতাশ হলাম, সেটাও নাকি তেমন সস্তা নয়। তবু মনের কোণে একটা জেদ রইল। যখন চার ঘণ্টা আদ্দিস আবাবার বিমানবন্দরে কাটাতেই হবে, তখন অন্তত দেশটার স্বাদ একটু জিভে নিয়ে দেখি। খাবার তো একটা দেশের গল্প বলে, তার সংস্কৃতির ঝলক ফুটিয়ে তোলে। তাই ভাবলাম, ইথিওপিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদে হয়তো সেই দেশের হৃদয়ের কাছাকাছি পৌঁছানো যাবে।
মিরাত আমাকে ইনজেরা, হানি ওয়াইন আর ইথিওপিয়ান কফির স্বাদ নিতে বললেন। আফ্রিকার নাম শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ, দারিদ্র্য আর ক্ষুধার ছবি। কিন্তু আদ্দিস আবাবার মাটিতে পা রাখতেই সেই ভ্রান্তি ভাঙল। উড়োজাহাজ থেকে শহরটি দেখে মনে হলো, এ যেন এক পরিকল্পিত, পরিচ্ছন্ন জনপদ। গির্জার চূড়ার পাশাপাশি মসজিদের মিনারও চোখে পড়ল।
আধুনিক অট্টালিকার সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মিশেল দেখে বোঝা গেল, এখানে ধনী-গরিবের বৈষম্য বেশ প্রকট। তবু শহরটির একটা নিজস্ব মাধুর্য আছে, যা দূর থেকেও টের পাওয়া যায়। এটাও সত্য যে, বিশ্বব্যাংকের জরিপে ইথিওপিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে ‘ভঙ্গুর দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি আফ্রিকার সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর একটি।
ঢাকা থেকে আদ্দিস আবাবা পৌঁছাতে সময় লাগল প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা। এত লম্বা যাত্রার পর ক্ষুধার জ্বালায় পেট চনমন করছিল। বিমানবন্দরে নেমেই খোঁজ শুরু করলাম, কোথায় পাব ইথিওপিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবার। বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা ‘কাতেগনা’ নামে একটি রেস্তোরাঁর দিকে পথ দেখালেন। আদ্দিস আবাবার বিমানবন্দরে পা রাখতেই ভিন্ন এক ধরনের উষ্ণতা অনুভব করলাম। আয়তনে এটি বিশাল না হলেও এর মধ্যে যেন এক সহজ, স্বতঃস্ফূর্ত সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে।
ইথিওপিয়ার মানুষের স্বভাবটাই এমন—অমায়িক, আন্তরিক এবং হৃদয়ের দরজা সদা উন্মুক্ত। তাদের মুখের হাসি আর সাহায্যের আন্তরিকতা সত্যিই মন ছুঁয়ে যায়। বিশেষ করে মেয়েদের কথা না বললেই নয়—তাদের চেহারায় রয়েছে এক মোহনীয় মায়া। কখনো কখনো দক্ষিণ ভারতীয় নারীদের সঙ্গে তাদের মিল খুঁজে পাই, যা সত্যিই বিস্ময়ের জন্ম দেয়। দেশটির ধর্মীয় সম্প্রীতিও নজর কাড়ে। বিমানবন্দরের ভেতর নারী-পুরুষের জন্য আলাদা নামাজের জায়গা, এমনকি ইহুদিদের জন্যও প্রার্থনার স্থান—সবই সুনিপুণভাবে সাজানো।
হিজাব ও বোরখা পরা নারীরা এখানে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করছেন। হজযাত্রীদের জন্যও আলাদা প্রস্তুতি চোখে পড়ে, যেন বিমানবন্দরটি প্রতিটি ধর্ম, সংস্কৃতি ও মানুষের জন্য নিজেকে একটু একটু করে সাজিয়ে রেখেছে। শুনেছি, এখানকার প্রায় ৬২ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টান আর ৩৫ শতাংশ মানুষ মুসলিম, তবে সব ধর্মের মানুষের মিলেমিশে থাকার দৃশ্যটা সত্যি প্রশান্তি দেয়।
ইথিওপিয়ায় হালাল খাবারের জন্য তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। বিমানবন্দরের অধিকাংশ রেস্তোরাঁয় হালালভাবে প্রস্তুত মাংস দিয়ে তৈরি সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা হয়। বিমানবন্দরের এক কোণে ‘কাতেগনা’র অবস্থান; সাদামাটা একটি খাবারের দোকান, যদিও রেস্তোরাঁর চেয়ে পাবের ছাপটাই বেশি পাওয়া যায়।
রেস্তোরাঁয় ঢুকতেই এক তরুণীর হাসিমুখ আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। সে বিভিন্ন রকমের কফি কাপ আর কফি বিন নিয়ে বসে ছিল, আমাকে দেখে উষ্ণ হাসিতে স্বাগত জানালো। তারপর ওয়েটার কিরোবির কণ্ঠ ভেসে এলো, “কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?” রেস্তোরাঁয় তেমন ভিড় ছিল না, ফলে পরিবেশটা ছিল শান্ত ও আরামদায়ক। আমি বললাম, “ইথিওপিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ নিতে চাই।” কিরোবি হেসে বললেন, “আপনি ঠিক জায়গায় এসেছেন! কী খাবেন—ভেড়ার মাংস, না মুরগি?” আমি একটু ভেবে বললাম, “মুরগি আমার তেমন পছন্দ না, ভেড়ার মাংসই দাও।”
রেস্তোরাঁর রান্নাঘর থেকে ভেসে আসছিল মশলার মায়াবী সুগন্ধ। কিরোবিকে জিজ্ঞাসা করলাম, “আপনারা কি আমাদের মতো মশলা দিয়ে রান্না করেন?” তিনি হেসে বললেন, “দক্ষিণ এশিয়ার মানুষেরাই যে শুধু মশলাদার খাবার পছন্দ করেন, তা নয়। ইথিওপিয়ার রন্ধনশৈলীতেও মশলার ব্যবহার বেশ প্রাচীন ও বৈচিত্র্যময়।” কিরোবি আমাকে ভেড়ার মাংসের ‘শিরো’ চেখে দেখার পরামর্শ দিলেন। অর্থাৎ, ভেড়ার মাংসের ঝোলের সঙ্গে ‘শিরো’ নামের একটি চাটনি মিলিয়ে খেতে বললেন।
‘শিরো’ হলো হালকা কমলা রঙের একটি সস, যা ইথিওপিয়ার নানা মশলার মিশ্রণে তৈরি। আমাদের জিভের কাছে এটি খুব ঝাল নয়, তবে স্বাদে এক অনন্য গভীরতা আছে। এর সঙ্গে পরিবেশন করা হয় ‘ইনজেরা’। ‘ইনজেরা’কে রুটির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। যেমন আমরা ভাত ছাড়া নিজেদের জীবন কল্পনা করতে পারি না, তেমনি ইথিওপিয়ানদের কাছে ইনজেরা ছাড়া জীবন যেন অসম্পূর্ণ।
প্রথম দেখায় ইনজেরা গরুর বটের মতো দেখতে, কিন্তু ছুঁলে মনে হয় পাটিসাপটার বাইরের খোলসের মতো নরম রুটি। এটি এতটাই মোলায়েম, তুলতুলে—হাতে ধরা মেঘের টুকরোর মতো। স্পর্শ করতেই ফিরে এলো ছোটবেলার স্মৃতি—বাবল র্যাপের বুদ্বুদ টিপে ফাটানোর সেই আনন্দ, পটপট শব্দে একরকম উৎসবের অনুভূতি। কিন্তু মুখে দিতেই অভিজ্ঞতা পাল্টে গেল। ইনজেরা তীক্ষ্ণ টক স্বাদের। আমলকী, লেবু কিংবা আমড়ার টকের সঙ্গে এ টক স্বাদের কোনো মিল নেই। প্রথম কামড়ে পুরো মুখ ভরে গেল তীব্র টক স্বাদে, একটু অস্বস্তিও হলো।
কিরোবি জানালেন, টেফ নামের এক বিশেষ ধরনের বীজ পানি ও ইস্ট দিয়ে পাঁচ দিন ফার্মেন্ট করে পাতলা মাখন তৈরি হয়। তারপর এ মাখনকে বিশেষ চুলায় ছড়িয়ে তৈরি করা হয় ইনজেরা। চুলাটি দেখে আমার গ্রামের জেঠির খোলজা পিঠা তৈরির স্মৃতি মনে পড়ল, যা নোয়াখালী অঞ্চলে সকালের নাস্তায় জনপ্রিয়। এটা ঠিক যে, খোলজা পিঠার প্রস্তুতির সঙ্গে ইনজেরার প্রস্তুত প্রণালির কোনও ধরণের মিল নেই। ফার্মেন্টেশনের কারণে ইনজেরা অ্যাসিডিক এবং একইসঙ্গে তীব্র টক স্বাদের, তাই প্রথমবার খেলে অ্যাসিডিটির আশঙ্কা থাকতে পারে। ইনজেরা চাইলেই বারবার নেওয়ার সুযোগ মেলে।
কিরোবি বললেন, হাত দিয়ে ইনজেরা ছিঁড়ে ভেড়ার মাংসের স্টু ও শিরো সসের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে। তার পরামর্শ মেনে চললাম। শিরো সসে ডুবিয়ে খেলে ইনজেরার টক স্বাদ অনেকটা ম্লান হয়ে যায়। ঝালপ্রিয়দের জন্য আলাদা লাল মরিচের সস যোগ করার সুযোগও আছে। ভেড়ার মাংসের স্টু আমার ভালো লাগল, যদিও তাতে ঝাল বা মশলার প্রাচুর্য ছিল না। ভেড়ার মাংসে সাধারণত একটি গন্ধ থাকে, যা অনেকে পছন্দ করেন না, কিন্তু এই স্টুতে তেমন কিছু পেলাম না। মাংসের সঙ্গে ছিল পেঁয়াজ আর বেল পিপার, যা স্বাদে গভীরতা যোগ করেছে।
ইউরোপের আনুষ্ঠানিক ডাইনিং শিষ্টাচার ইথিওপিয়ার মাটিতে কোনো কাজেই আসে না। খাওয়ার শেষে এক কাপ কফি অর্ডার করলাম, দাম তিন ডলার। ইথিওপিয়ার কফি বিনের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। কেবিন ক্রু মিরাতের কাছে শুনেছিলাম, কফি সংস্কৃতির উৎপত্তি এই দেশেই। ইতালিয়ান এসপ্রেসোর তুলনায় ইথিওপিয়ান ব্ল্যাক কফির স্বাদ একেবারে স্বতন্ত্র। তীব্র স্বাদের কড়া কফি মুখের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়ে, এ কফির এক ঢোকে সমস্ত ইন্দ্রিয়কে জাগিয়ে তোলে।
ইথিওপিয়ার অর্থনীতি যেমনই হোক, বিল দেখে মনে হলো—এখানে খরচ একেবারেই চমকে দেওয়ার মতো। কেবিন ক্রু মিরাতের কথা এবার সত্যে পরিণত হলো। ইনজেরার সঙ্গে ভেড়ার মাংসের স্টু, শিরো, হানি ওয়াইন আর এক কাপ কফি—সব মিলিয়ে বিল এল ৪৩ মার্কিন ডলার। কিরোবি ও রেস্টুরেন্টের বাকি স্টাফদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কিছু টিপসও দিলাম।
চোখের পলকে কেটে গেল ট্রানজিটের ক্ষণিক বিরতি। এবার বিমানবন্দরের ব্যস্ততা ছেড়ে আদ্দিস আবাবা থেকে মাদ্রিদের পথে বিমানে পা রাখার পালা। ইথিওপিয়া আমার হৃদয়ে রেখে গেছে এক অদ্ভুত, অসম্পূর্ণ আবেশ—মনে হয় বিদায়ের মিশেলে নরম ঢেউ হয়ে খেলছে স্মৃতির তীরে। ইথিওপিয়ার খাবার সম্পর্কে কেউ জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিতে আমি একটু ইতস্তত করি। এমন স্বাদের অভিজ্ঞতা আমার জন্য একেবারে নতুন। তাই স্পষ্ট কিছু বলা কঠিন। তবে এ দেশের মানুষের আন্তরিকতা আর বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ আমার মন জয় করেছে। ভবিষ্যতে একদিন ইথিওপিয়া ঘুরতে চাই, তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর রন্ধনকলা কাছ থেকে জানতে চাই।