Published : 10 Jun 2025, 03:45 PM
অল্প বয়সিদের মধ্যে আজকাল টিকটক, ফেইসবুক বা ইউটিউবের নানান ভিডিওতে ‘গেট রেডি উইথ মি’ বা ‘নিজে করি’ ধর্মী ভিডিওর দারুণ জনপ্রিয়তা।
এসব ভিডিওতে ১৮ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরীরা রীতিমতো সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞের মতো নানান রকম ত্বকযত্নের পণ্য ব্যবহার করে দেখাচ্ছে।
সেটা দেখে অনেক কিশোর-কিশোরীই মুগ্ধ হয়ে তাদের মতো করে ত্বক পরিচর্যা করা শুরু করে। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন মেডিসিন-এর এক গবেষণায় কিছু তথ্য উঠে এসেছে।
যেখানে বলা হয়েছে এই ধারা অনুসরণ করে অজান্তেই দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হচ্ছে কিশোর ত্বক।
গবেষণার তথ্য
‘পেডিয়াট্রিকস’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ৭ থেকে ১৮ বছর বয়সি ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’দের ১০০টি টিকটক ভিডিও বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন, তাদের ত্বক পরিচর্যার রুটিনে গড়ে ১১টি সক্রিয় উপাদান বা ‘অ্যাক্টিভ ইনগ্রিডিয়েন্স’ থাকে।
যার অনেকগুলোই ত্বকে অ্যালার্জি, রোদে সংবেদনশীলতা ও ‘কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস’য়ের ঝুঁকি বাড়ায়।
গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিতভাবে এসব উপাদান ব্যবহারের ফলে ত্বকে স্থায়ী অ্যালার্জি তৈরি হতে পারে। যা আজীবনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু সাবান, শ্যাম্পু বা প্রসাধনী ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দিতে পারে।
সবচেয়ে অবহেলিত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সানস্ক্রিন
গবেষণায় সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্যটি হল, যত বিস্তারিত রুটিনই হোক না কেনো, মাত্র ২৬ শতাংশ ভিডিওতে দিনের রুটিনে সানস্ক্রিনের উল্লেখ ছিল।
অথচ ত্বক-বিশেষজ্ঞদের মতে, সানস্ক্রিনই হল সব বয়সের মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ত্বক পরিচর্যার উপাদান। বিশেষ করে কিশোরদের জন্য।
বিশেষজ্ঞের উদ্বেগ ও পরামর্শ
এই গবেষণা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ত্বক পরিচর্যার প্রতিষ্ঠান ‘আর্লি’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ত্বক-বিশেষজ্ঞ ডা. হ্যালি ম্যাকডোনাল্ড রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “এই গবেষণা একটি ভয়ংকর বাস্তবতাকে বৈজ্ঞানিকভাবে তুলে ধরেছে, যা প্রতিদিন চেম্বারে প্রত্যক্ষ করি।”
তিনিও মনে করেন, সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া প্রশংসা বা ‘ট্রেন্ড’ অনুসরণ করতে গিয়ে আজকাল কিশোর-কিশোরীরা অনিয়ন্ত্রিতভাবে পণ্য ব্যবহার করছে। যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক হতে পারে।
ট্রেন্ড নয়, ত্বকের স্বাস্থ্যকেই প্রাধান্য
ডা. ম্যাকডোনাল্ড বলেন, “শিশু ও কিশোর বয়সে ত্বক বিকাশমান থাকে। এ সময় অতিরিক্ত ‘অ্যাকটিভ’ উপাদান বা ‘ফ্র্যাগ্রেন্স’ ব্যবহার করলে ‘অ্যালার্জিক কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস’ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এটা পরে ত্বকে নানান সমস্যার জন্ম দেয়, যা সারাজীবন ভোগাতে পারে।”
মৌলিক রুটিনই যথেষ্ট
এই চিকিৎসক পরামর্শ দেন, “দশ ধাপের জটিল রুটিন নয়, একটি ‘মাইল্ড ক্লেনজার’, একটি হালকা ময়েশ্চারাইজার, ও একটি ভালো সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। কারণ এই তিন উপাদানই যথেষ্ট তরুণদের ত্বকের জন্য। তা-ও হতে হবে ‘ফ্র্যাগ্রেন্স ফ্রি’ বা গন্ধহীন এবং ‘হাইপোঅ্যালার্জেনিক’।”
অতিরিক্ত সক্রিয় উপাদান এড়িয়ে চলা
ডা. ম্যাকডোনাল্ড আরও বলেন, “গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, রেটিনয়েডস, বেনজয়েল পারঅক্সাইড, এসব ‘অ্যাকটিভ’ উপাদান চামড়ার ওপর দিয়ে গেলে ত্বকের সুরক্ষার স্তর ভেঙে পড়তে পারে, দেখা দিতে পারে জ্বালা, ফুসকুড়ি বা ত্বকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।”
এগুলো ব্যবহার করলেও যেন একটির বেশি না হয়। আর অবশ্যই ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
সানস্ক্রিন কখনও বাদ না দেওয়া
মাত্র ২৬ শতাংশ ভিডিওতে সানস্ক্রিন ব্যবহার থাকাটাকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করেন ডা. ম্যাকডোনাল্ড।
“তরুণ বয়স থেকেই ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করা ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে উপকারী। ‘ট্রেন্ডি সেরাম’ বা মাস্ক’য়ের চেয়ে এটা অনেক বেশি কার্যকর” বলেন এই ত্বক বিশেষজ্ঞ।
তার মতে, ‘মিনারেল’ ভিত্তিক ‘ব্রড-স্পেকট্রাম এসপিএফ’ বেছে নেওয়া উচিত।
বাংলাদেশে টিকটক ও রিলস ভিডিওর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। দেশের অনেক কিশোর-কিশোরী এখন বিদেশি ব্র্যান্ডের স্কিনকেয়ার পণ্য কিনছে, ব্যবহার করছে, আবার ‘নিজে করুন’ ধরনের কনটেন্ট তৈরি করেও ভাইরাল হচ্ছে।
তবে সমস্যার জায়গা হল আবহাওয়া, জলবায়ু এবং ত্বকের ধরন ভিন্ন। তাই অন্য দেশের ইউটিউবার বা ইনফ্লুয়েন্সারের রুটিন অনুকরণ করলে তা ক্ষতিকর হতে পারে।
বিশেষ করে দ্রুত পরিবর্তনশীল আবহাওয়া ও ধুলাবালির দেশে ত্বক পরিচর্যায় আরও সাবধান হওয়া দরকার।
আরও পড়ুন
ত্বক পরিচর্যা সম্পর্কে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা