Published : 13 Jun 2025, 12:42 AM
নির্বাচন সামনে। পেছনে রয়েছে গত তিন তিনটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিগত সরকার যে আস্থাহীনতা তৈরি করে দিয়ে গেছে তার উদাহরণ। এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণায় দেশের কিছু মানুষ স্বস্তি পেলেও, কেউ কেউ কটাক্ষ করছেন– ‘এটা আবার এপ্রিল ফুল হয়ে যাবে না তো?’
কটাক্ষকারীদের একজন আমার বন্ধু। বন্ধুটি সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় তার নাম বরং গোপন রাখি। রাজনীতিকের নাম তো আর গোপন রাখার দরকার নেই। বাসদের দিনাজপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক কিবরিয়া হোসেন বলছিলেন, ‘বিএনপি যে ডিসেম্বরে নির্বাচন নির্বাচন বলে দাবি করছে, এটা একটা ভুল। নির্বাচন ডিসেম্বরের আরও আগেই হতে পারে।’ তার মতে, দ্রুততম সময়ে নির্বাচন হওয়া উচিত।
নির্বাচিত বা রাজনৈতিক সরকারের অধীনে বাংলাদেশে কখনো অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি। শুরুটা ১৯৭৩ সালে। যখন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ জয়ী হতো নিঃসন্দেহে, কিন্তু এমন বিপুল বিজয়ের সুযোগ ছিল না বলেই মনে করেন সেই সময়কার মানুষ। আমাদের শাসকগোষ্ঠীর আজন্ম প্রবণতা হলো ছলে-বলে কৌশলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা। ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখবার জন্য যে কোনো হীন চক্রান্ত করতেও তারা বিন্দুমাত্র পিছপা হয় না। দেশের লাভ ক্ষতি বরাবরই তাদের বিবেচনার ঊর্ধ্বে থেকে যায়। ৫৪ বছরে দেশের মানুষ মোট ১২টি জাতীয় নির্বাচন দেখেছে, যার মধ্যে নয়টি ছিল রাজনৈতিক সরকারের আয়োজনে ক্ষমতা ধরে রাখবার নির্বাচন। সর্বশেষ আওয়ামী সরকারের আমলের তিনটি নির্বাচন ছিল ভোটের নামের পুরোদস্তুর প্রহসন। অবশ্য এর আগে উর্দি পরে নির্বাচন করারও একাধিক নজির বাংলাদেশে রয়েছে।
বাংলাদেশে নির্বাচনকে ঘিরে বছরের পর বছর ধরে যে প্রহসন, দ্বন্দ্ব আর অবিশ্বাস চলে আসছে, তার ফলাফল হলো—তারিখ ঘোষণা করলেই কেউ আর স্বস্তি পায় না। বিশেষ করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচন এই অস্বস্তিকে চরম রূপ দিয়েছে। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের কথা তো বলেছি। নব্বইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের পরে নির্বাচন নিয়ে প্রহসন হয়েছে ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৬ সালে একই বছরে বাংলাদেশে দুটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়—একটি ১৫ ফেব্রুয়ারি, আরেকটি ১২ জুন। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে অংশ নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও, তা ছিল বিরোধী দলগুলোর বয়কট ও ভোটারবিহীন নির্বাচনের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ ও দেশব্যাপী বিতর্কিত। এই নির্বাচন রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর করে তোলে এবং গণআন্দোলনের মুখে তখনকার সরকার সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফিরে আসে। মনে করা হয়েছিল এটি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এক নতুন অধ্যায়ের শুরু। এই নির্বাচনকে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মাঝে ২০০১ সালে বিএনপির কাছে পরাজিত হয় আওয়ামী লীগ। তারপর আবারও নির্বাচন নিয়ে বিএনপির তালবাহানা আসে ওয়ান-ইলেভেনের সরকার। পরে ২০০৮ সালে ওই সরকারের অধীনে একটি অবিতর্কিত নির্বাচনে মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের হাতেই নির্বাচনি ব্যবস্থাটি সবচেয়ে বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন, ২০১৮ সালের রাতের ভোট মিলে গড়ে উঠা নির্বাচনি-উদ্বেগ ২০২৪ সালে চরম রূপ পায়। ২০২৪ সালের নির্বাচন আগের দুটি নির্বাচনের তুলনায় একধাপ এগিয়ে গিয়েছিল গণতন্ত্রের প্রহসনে—এটি ছিল ‘আমি আর ডামি’ প্রার্থীদের ভোট যুদ্ধ। বহু আসনে একজন প্রার্থী বাস্তব, আর অন্যজন ছিল আওয়ামী দলীয়ই—কেবল ভিন্ন নামে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়েছিল যেন নির্বাচন ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক’ দেখায়। ভোটার জানে, সেই ডামি প্রার্থীরা কখনো প্রচারে যায়নি, মাইক বাজায়নি, প্রতিশ্রুতি দেয়নি—তবু ব্যালটে নাম ছিল। এই আয়োজন দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিল—এটা কি আসলেই নির্বাচন, না ‘নির্বাচন নির্বাচন খেলা’?
যে তিনটি জাতীয় নির্বাচন কমবেশি অবাধ, সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে সবগুলোই আয়োজন করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ২৪-এর গণআন্দোলনে ১৭ বছর ক্ষমতা ধরে রাখা হাসিনা সরকারের পতনের পর ক্ষমতা গ্রহণ করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকারের কাঠামো পূর্বের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো হলেও এই সরকারের নাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং এই সরকার দায়িত্বে এসেছে রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। যেহেতু নির্বাচন গণতন্ত্রের প্রধান অনুষঙ্গ তাই সরকার দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকেই আসছে নির্বাচন নিয়ে আলেঅচনা। ইতোমধ্যে ১১ মাস অতিবাহিত হতে চলেছে। শোনা যাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের মধ্যেই নাকি বিভক্তি রয়েছে। এমন অবস্থায় ঈদুল আজহার আগের দিন গত ৬ জুন প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেছেন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণাটি এমন সময় এসেছে যখন মানুষ ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত ছিল। নির্বাচনের দিনক্ষণ হিসাব করার মত সময় সেটি ছিল না। রাজনৈতিক দলগুলো অবশ্য রাতারাতি তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আর সাধারণ মানুষকে ঈদের কাজকর্মের সঙ্গে আনন্দ করতে দেখা গেছে। ঈদ বিশেষ করে ঈদুল আজহার দিন থেকে দু-তিন দিন দিনাজপুর শহরের চায়ের দোকানসহ দোকানপাট রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকে, তাই রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনার বিতর্ক তেমন জমে ওঠেনি তখন। পরবর্তীতে দোকানপাট খুললে আড্ডা জমতে শুরু করলে বুঝলাম এপ্রিলের নির্বাচন নিয়ে কটাক্ষ করাটা শুধু আমার বন্ধুর একার নয়। এমন উক্তিও শোনা যায় যে এপ্রিলের নির্বাচনের আশায় আবার আমরা এপ্রিলের বোকা বনে যাব না তো?
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এমন অনাস্থা নতুন কিছু নয়। রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন পক্ষের চাপের মধ্যে আগের ঘোষণা থেকে কিছুটা এগিয়ে এনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য নতুন সময় ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ঈদুল আজহার আগের দিন সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে তিনি বলেছেন, “বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমি আজ দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যে কোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে।”
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে অনিশ্চয়তা, উত্তেজনা ও মতানৈক্য দেখা দিয়েছে, তা সহসাই মীমাংসা হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা নিয়ে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো দুই ভিন্ন মেরুতে অবস্থান নিয়েছে। একদিকে বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়, অন্যদিকে সরকার ঘোষিত এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সম্মতি দিয়েছে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন বিচার সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম করে তিনি ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যে কোনো দিন নির্বাচনের ঘোষণা দিচ্ছেন। বিচার বলতে মূলত শেখ হাসিনা সেইসঙ্গে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ও তার দোসরদের বিচারের কথাই বোঝায়। কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রধান কৌশলী হিসাবে যখন তাজুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয় তখন শুরুতেই এই বিচার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। সংস্কার প্রসঙ্গে যদি বলা হয়, সেই সব সুদূরপরাহত। শুধু নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের কথাই বিবেচনা করি, বলতে হবে সরকার এই বিষয়ে যে একটি সংস্কার কমিশন করেছিল, সেটি ভুলেই গিয়েছে।
এপ্রিলের প্রথমার্ধে দেশে জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার যে ‘প্রতিশ্রুতি’ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস দিয়েছেন, তাতে ‘জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি’ বলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে হতাশা ব্যক্ত করেছে। বৈঠকের পর বিএনপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “প্রায় দেড় যুগ ধরে মৌলিক ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত এদেশের জনগণ ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য গুম, খুন, জেল-জুলুম, আহত ও নির্যাতিত হয়েও অব্যাহত লড়াই চালিয়ে গেছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগষ্টের ছাত্র-জনতার বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে তার বিজয় অর্জিত হলেও নির্বাচন অনুষ্ঠানে অহেতুক বিলম্বে জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে বিধায়, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমপর্যায়ের পরীক্ষা এবং আবহাওয়া ইত্যাদি বিবেচনায় ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করছে।”
বিএনপি বলছে, “নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কথা বললেও একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সিংহভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত অগ্রাহ্য করে নিজেদের নিরপেক্ষতাকে যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, তাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে দেশের জনগণ সঙ্গতভাবেই শঙ্কিত হতে পারে বলে সভা মনে করে।”
জামায়াতে ইসলামী অবশ্য জাতির দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ফেলেছে। দলটির আমির শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় ‘জাতি আশ্বস্ত’। অবস্থাদৃষ্টে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের যোগসাজশটা বেশ ভালোই আছে। উচ্চ আদালতের রায়ে দলের নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার প্রতিক্রিয়া জানাতে ৩ জুন রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এসে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চেয়েছিলেন। তবে তিনি সেদিন বলেছিলেন, তার আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চান তারা। সংসদ নির্বাচন পরে আয়োজনের যুক্তি হিসেবে জামায়াতের পক্ষে বলা হয়, আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে জনগণের কষ্ট কমবে এবং নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা প্রমাণ হবে।
মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণার পর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলেছে, আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে যদি জুলাই সনদ, জুলাই ঘোষণাপত্র ও সংস্কার বাস্তবায়নের ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে ঘোষিত সময়ে নির্বাচনের বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই। বক্তব্যটি মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণার পর এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন দিয়েছিলেনে, তার কাছে একটি জাতীয় দৈনিক প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেছেন এই কথা। ‘কিংস পার্ট’ বলে পরিচিতি লাভ করা নবগঠিত এ দলের দলীয় অবস্থানও তাই এরই মধ্যে সেটা জানা গেছে।
দলগতভাবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিবি বরং বিএনপির কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। ইউনূস কেন ‘কালক্ষেপণ করে’ এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলছেন, প্রশ্ন রেখেছেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে নির্বাচনের যে সম্ভাব্য সময় বলা হয়েছে, তাতে ‘জন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি’ বলে মন্তব্য করে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে বামপন্থী এই দলটি।
রাজনৈতিক দলগুলো যাই বলুক, নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে সাধারণ মানুষের অবিশ্বাস, রসিকতা কিন্তু নিছক ঠাট্টা নয়—এটা এক জাতির দীর্ঘকাল ধরে প্রতারিত হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে জন্ম নেওয়া গভীর রাজনৈতিক অবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি।
এই অবিশ্বাসের জন্ম কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিচারিতা থেকে নয়, রাষ্ট্রযন্ত্রের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় এবং নির্বাচন কমিশনের বিতর্কিত ভূমিকার কারণেও। তাই নির্বাচনের নির্দিষ্ট মাস জানিয়ে দেওয়াটা একটি আংশিক তথ্য মাত্র—যেটি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি এবং ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া গন্তব্যে পৌঁছায় না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে নিরপেক্ষ হবে—এই প্রত্যাশাও অনেকের কাছে দূরাশা বলে মনে হয়। কারণ উপদেষ্টারা কে কোথা থেকে এলেন, কীভাবে মনোনীত হলেন, তাদের ভূমিকা কতটা স্বাধীন হবে—এসব প্রশ্নের জবাব মেলেনি। তার ওপর বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো কোনো সমঝোতা হয়নি। আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, ফলে সরকারঘনিষ্ঠ দলগুলো নমনীয় হলেও নির্বাচনে জনআস্থার ঘাটতি রয়েই যাবে।
নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিনের অনাস্থা ও প্রতারণার পর আসছে ভোটের মৌসুম। কিন্তু প্রয়োজন রাজনৈতিক সমঝোতার, তখন ভোটের দিন-তারিখ নিয়ে আপস-আলোচনার বদলে চলছে কৌশলের খেলা ও হুমকির চর্চা। জনগণ মনে করছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন সফরের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো। আজ বিকেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের পরই বোঝা যাবে নির্বাচনের ফুল কবে ফুটবে?