Published : 11 Jun 2025, 11:30 PM
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন কোনো উদাহরণ এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি যে, আলাপ-আলোচনা করে কোনো বড় সমস্যা বা সংকটের সমাধান হয়েছে। বরং ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পরে দেশে যখন পুনরায় সংসদীয় ব্যবস্থা চালু হলো, তার পরের নির্বাচনটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে—এমন একটি রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকার পরেও ১৯৯৫ সাল থেকে এই ব্যবস্থা চালুর জন্য বিরোধী দলগুলোকে রাজপথে নামতে হয়েছে এবং রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরে ১৯৯৬ সালে সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। ওই সময়ে এই সংকট নিরসনে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা কম হয়নি। এমনকি বিদেশি দূতরাও চেষ্টা করেছেন। সকল দূতিয়ালি ব্যর্থ হয়েছে। সমাধান হয়েছে রাজপথেই।
২০০১ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরে স্বাভাবিকভাবেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি অবাধ-সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। বরং ফের রাজনৈতিক সংকট। ওই সংকট নিরসনেও আলোচনা ও সংলাপ অনেক হয়েছে। ওইবারও বিদেশি দূতিয়ালি হয়েছে। কিন্তু ফল হয়নি। বরং রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরে এসেছে ওয়ান-ইলেভেন। সুতরাং, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আলোচনা ও সংলাপের অভিজ্ঞতা খুব সুখকর নয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের পরে গত বছরের ৫ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর যে পরিমাণ আলাপ-আলোচনা ও সংলাপ হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে, তা শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং সারা বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসেই বিরল। শুধু তাই নয়, সংলাপ করার জন্য সরকার ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ নামে একটি কমিশনও গঠন করেছে—স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা যে কমিশনের প্রধান। কিন্তু এই কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের ফল কী—তা নিয়ে জনমনে প্রশ্নের শেষ নেই। অনেকে রসিকতা করে বলেন, সংলাপের ডিম ভেঙে সংলাপ বেরিয়ে আসছে!
বাংলাদেশে কেন রাজনৈতিক সংলাপ বা শান্তিপূর্ণ আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায় না, তার একাধিক কারণ থাকতে পারে। তবে মূল কারণ বোধ হয় ‘ইগো’ এবং প্রত্যেকেরই নিজের অবস্থানে অনড় থাকার মানসিকতা।
এরকম বাস্তবতায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আসন্ন বৈঠক এখন রাজনীতির প্রধান ইস্যু। বিএনপির মহাসচিব বলছেন, এই বৈঠক হতে পারে রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট। আর দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই বৈঠককে বলছেন ‘ঐতিহাসিক’। প্রশ্ন হলো, এই বৈঠকে কী হবে বা কেন এটাকে ‘রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট’ বলে মনে করা হচ্ছে?
বৈঠকের এজেন্ডা কী?
চার দিনের সফরে প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে যাওয়ার পরপরই গুঞ্জন শুরু হয় যে, সেখানে অবস্থানরত তারেক রহমানের সঙ্গে তার বৈঠক হতে পারে। যদিও সরকারি সফরসূচিতে এরকম কোনো কর্মসূচি ছিল না। পরে জানা গেলো, তাদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হতে পারে। এরকম গুঞ্জনের মধ্যেই মঙ্গলবার (১০ জুন) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্বকালে তারেক রহমান বলেছেন, তাকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে বৈঠকটি হবে। লন্ডন সফরে মুহাম্মদ ইউনূস যে হোটেলে থাকছেন, সেখানেই বৈঠকটি হবে।
তার মানে বৈঠকটি হচ্ছে সরকার বা প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত আগ্রহে। যদি তাই হয়, তাহলে বলতে হবে, এটি এই মুহূর্তে দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং জাতীয় নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে যে অনিশ্চয়তা, অনাস্থা, অবিশ্বাস, বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা নিরসনে একটি বড় অগ্রগতি হতে পারে। সম্ভবত এ কারণেই মির্জা ফখরুল এই বৈঠককে রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু সংলাপ ও আলোচনার যে পূর্ব অভিজ্ঞতা, তাতে খুব বেশি আশাবাদী হওয়াও কঠিন। তারপরও আশাবাদী হওয়া উচিত। সেই আশাবাদ বিবেচনায় রেখে জনপরিসরে যে প্রশ্নটি ঘুরছে তা হলো, ইউনূস-তারেক বৈঠকে কী হবে বা তারা কী নিয়ে কথা বলবেন?
সরকারের তরফে বৈঠকের কোনো এজেন্ডার কথা বলা হয়নি। যতটুকু জানা যাচ্ছে, এখানে আলোচনার বিষয় উন্মুক্ত থাকবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, বৈঠকের নির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা নেই। তারেক রহমান এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলের নেতা এবং প্রফেসর ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। তারা যখন বসবেন, তখন বাংলাদেশের এখনকার যে কোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। আলোচনায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী জাতীয় নির্বাচন, জুলাই সনদ—এগুলোর যে কোনো বিষয়ে আলাপ হতে পারে।
বিএনপি মনে করে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা যেসব বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তার অনেক কিছুই আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধানের পথ বেরিয়ে আসতে পারে। যদিও এটি নির্ভর করবে দুজনের মধ্যে সত্যিই কী আলোচনা হয় এবং তারা পরস্পরের ওপর কতটুকু আস্থা, বিশ্বাস ও সম্মান বজায় রাখতে পারেন, তার ওপর।
জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান দল হওয়া সত্ত্বেও এবং মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে তাদের সক্রিয় ভূমিকা ও সমর্থন থাকার পরেও সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে বিএনপির যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সেটি এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে কমে আসবে বলে ধারণা করা যায়। তাছাড়া সরকারের সঙ্গে সংঘাতে গিয়ে বিএনপিরও যে খুব একটা লাভ হবে না, সেটি বোঝার মতো প্রাজ্ঞ লোকজন এই দলে আছেন। সুতরাং, আলোচনাটা উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
১. স্বাভাবিকভাবেই মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের আলোচনার মূল বিষয় হবে নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন বলার পরে এখন বলছেন আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে। কিন্তু এটাও বিএনপি মানছে না। কারণ তারা মনে করছে এপ্রিল মাস ভোটের জন্য উপযোগী নয়। এসব কারণে তারেক রহমান হয়তো জাতীয় নির্বাচন আরেকটু এগিয়ে আনার পরামর্শ দেবেন। বিএনপি যেমন এখন পর্যন্ত ডিসেম্বরেই আটকে আছে, তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনায় সমঝোতা হলে হয়তো এটা ডিসেম্বর ও এপ্রিলের মাঝামাঝি ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এগিয়ে আসতে পারে। মনে রাখতে হবে, সেনাপ্রধান গত বছরের সেপ্টেম্বরে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যে ১৮ মাসের যে কথা বলেছিলেন, সেই ১৮ মাস হয় আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। জামায়াতে ইসলামীও বলছে, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হলে ভালো হয়। তাছাড়া আবহাওয়া, রোজা, মাধ্যমিক পরীক্ষা—সব মিলিয়ে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি হচ্ছে নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। ফলে উভয়ের মধ্যে সমঝোতা হলে জাতীয় নির্বাচন এপ্রিল ও ডিসেম্বরের মাঝামাঝি কোনো একটা সময়ে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ঐকমত্য হতে পারে।
বাস্তবতা হলো, বিএনপি এপ্রিলে নির্বাচন মানবে না। সেটা নানা কারণে কঠিনও হবে। আবার এপ্রিলের পরে যদি ভোট করতে হয়, তাহলে জুনেও কঠিন হবে। এটা চলে যেতে পারে ২০২৬ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে। ততদিনে দেশের কী অবস্থা হবে, সেটা বলা মুশকিল। ফলে ভোটের দিনক্ষণ ইস্যুতে একটা মাঝামাঝি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। বিএনপির ডিসেম্বর নয়, আবার প্রধান উপদেষ্টার এপ্রিলও নয়। এটা করা গেলে দেশের জন্যও ভালো। ইউনূস-তারেক বৈঠকই হতে পারে এই মাঝামাঝি সমাধান খুঁজে বের করার প্রধান সুযোগ।
২. তারেক রহমানের সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকে নিশ্চয়ই সরকারের চলমান সংস্কার নিয়েও আলাপ হবে। বিএনপি বরাবরই তাদের যে ৩১ দফার কথা বলছে, মুহাম্মদ ইউনূসকে তারেক রহমান সেটি স্মরণ করিয়ে দেবেন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির আলোচনার বিষয়ও হয়তো সেখানে উঠে আসবে।
৩. সংস্কার ইস্যুতে সরকার প্রধান হয়তো তারেক রহমানকে ‘কনভিন্সড’ করার চেষ্টা করবেন যাতে বিএনপি সরকারের সংস্কার কর্মসূচিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়। কেননা সরকার এটা ভালো করেই জানে যে, বিএনপি রাজি না হলে অন্য সব দল চাইলেও সরকারের পক্ষে সংস্কার কার্যক্রম সফল করা সম্ভব হবে না। এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই হয়তো আলোচনাটা এগোবে। উভয় পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে। সংস্কার প্রশ্নে বিএনপিকে যেমন ছাড় দিতে হবে, তেমনি নির্বাচনের সময় প্রশ্নে ছাড় দিতে হবে সরকারকে। বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ও ধোঁয়াশা এখন পর্যন্ত রয়ে গেছে, যে অনাস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে, সেটি দূর করতে হবে সরকারকেই।
৪. ‘জুলাই সনদের’ ব্যাপারে বিএনপি যাতে ‘ক্রিটিক্যাল’ না হয়, সেরকম একটি প্রতিশ্রুতি হয়তো প্রধান উপদেষ্টা চাইবেন তারেক রহমানের কাছ থেকে। তবে এই ইস্যুতে সবচেয়ে বড় জটিলতা হয়তো তৈরি হবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অবস্থানের কারণে। তারা যদি তাদের মতো করে জুলাই সনদ তৈরি করতে চায় এবং সেটি যদি রাজনৈতিক ঐকমত্যের পথে বাধা সৃষ্টি করে, তখন বিএনপির অবস্থান কী হবে—সেটি বড় প্রশ্ন। অতএব তারেক রহমান হয়তো এরকম পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা কী হবে, সেটিও জানতে চাইবেন।
৫. এনসিপির প্রতি সরকারের সমর্থনের বিষয়টি উপেক্ষা বা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। যেহেতু এই দলের সাথে যুক্ত নেতারা জুলাই অভ্যুত্থানের সামনের সারিতে ছিলেন, অতএব তাদের দলটির ব্যাপারে সরকারের বিশেষ আগ্রহ থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়। সুতরাং বিএনপি যদি আগামী নির্বাচনের পরে সরকার গঠনের সুযোগ পায়, তাহলে সেখানে এনসিপির অংশ কী হবে, অর্থাৎ বিএনপির সঙ্গে তাদের আসন সমঝোতা হবে নাকি একটি জাতীয় সরকার গঠন করা হবে, যেখানে অন্যান্য দলের মতো এনসিপিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ থাকবে—সেই বিষয়টিও আলোচনায় যদি উঠে আসে, তাতেও বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। মনে রাখতে হবে, এই সরকার অতীতের কোনো সরকারের মতোই নয়। তারো ভোটে নির্বাচিত কিংবা বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতায় আসা সরকার নয়। আবার তারা সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারও নয়। সুতরাং, এই সরকার কী নিয়ে কথা বলবে বা তাদের কথা বলার সীমারেখা কতটুকু—সেটি বিগত সরকারগুলোর সঙ্গে তুলনা করার সুযোগ নেই। একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়া সরকার এমন অনেক কিছুই করবে বা করতে চাইবে, যা স্বাভাবিক সরকারগুলোর সঙ্গে নাও মিলতে পারে।
৬. অন্তর্বর্তী সরকার এবং তাদের স্টেকহোল্ডারদের প্রধান ভয় আওয়ামী লীগকে নিয়ে। এরই মধ্যে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে, বিশেষ করে আগামী নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগ যাতে কোনোভাবেই মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সেজন্য আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার কৌশল কী হবে, তা নিয়েও আলোচনা হতে পারে। কেননা রাজনীতির মাঠে এরকম আলোচনাও আছে যে, যদি সরকার নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি করে তাহলে একপর্যায়ে হয়তো বিএনপি-আওয়ামী লীগ একসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে। এরকম সম্ভাবনা যদি থাকে, তাহলে সেটি সরকার ও তাদের স্টেকহোল্ডারদের জন্য একটা বড় দুশ্চিন্তার কারণ হবে। অতএব আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার কৌশল হয়তো এই বৈঠকের একটা বড় এজেন্ডা হতে পারে।
৭. নির্বাচনের পরে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সম্মানজনক বিদায়, তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা একটা বড় বিষয়। যদি সত্যিই সরকার আগামী এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিতে চায়, তাহলে তার আগেই তার একটা ‘সেইফ এক্সিট প্ল্যান’ লাগবে। আলোচনায় এটিও উঠে আসতে পারে।
৮. অনেকেই মনে করেছিলেন, ৫ অগাস্টের পরে তারেক রহমান দ্রুতই দেশে ফিরবেন। তার আইনজীবীরা একাধিকবার বলেছেন, তার দেশে ফেরার পথে আর কোনো আইনি বাধা নেই। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের ১০ মাস অতিবাহিত হলেও তিনি ফিরছেন না। বাস্তব্তা হলো, তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও এই সরকার তাকে গ্রেপ্তার করবে না বা তাকে গ্রেপ্তারের সাহস দেখাবে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি দেশে আসছেন না কেন—তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন আছে। সত্যিই কি কোনো আইনি বাধা নেই নাকি এমন কিছু জটিলতা রয়ে গেছে, যে কারণে তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না? যদি তাই হয়, তাহলে এটিও আলোচনার একটা বিষয় হতে পারে।
পরিশেষে এটা অনুমান করা যায়, এই দুজনের বৈঠকে এর সবকিছু আলোচনায় নাও আসতে পারে। অথবা এটি নিতান্তই একজন সরকার প্রধানের সঙ্গে একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। যদিও এর সম্ভাবনা কম। কেননা, এটি বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, তারেক রহমান বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী। যদি তাই হয়, তাহলে একজন সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বর্তমান সরকার প্রধানের আলোচনাটি নিতান্তই সৌজন্য সাক্ষাৎ বা চায়ের আমন্ত্রণে সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে তারা হয়তো এমন অনেক কিছু নিয়েই কথা বলবেন, যেখানে দেশ ও দলের বাইরে ব্যক্তিগত অনেক বিষয়ও হয়তো চলে আসবে। যার সবকিছু সংবাদ সম্মেলনে বলা হবে না বা সরকার ও দলের পক্ষ থেকে পাঠানো বিবৃতিতেও উল্লেখ থাকবে না। যে কারণে বলা হয়, রাজনীতির আলোচনা বা সংলাপ শেষে সংবাদ সম্মেলনে কী বলা হলো, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কী কী গোপন করা হলো