Published : 16 Jun 2025, 08:13 PM
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী, স্বজন, বন্ধু ও শুভাকাঙ্খীদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় চির বিদায় নিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা গণফোরামের সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু।
সোমবার রাজধানী ও কেরাণীগঞ্জে তিনটি জানাজার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষ। সেখানে তাকে গার্ড অব অনারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সালামে বিদায় জানানো হয়।
পরে বিকাল ৫টার দিকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে দাফন করা হয় তাকে।
রোববার বিকালে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মোস্তফা মোহসীন মন্টু। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি গণফোরামের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
সেদিন রাতেই রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের একটি মসজিদে প্রথম জানাজা হয়।
পরে সোমবার সকালে কেরানীগঞ্জে নিজের এলাকায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের বেড়ে ওঠা শুরু এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমেই।
এখানে শেষ জানাজায় ছাত্র রাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতিতে তার সহযোদ্ধা ও বন্ধু বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য রাজনৈতিক নেতারা অংশ নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অংশ নেন জানায়।
পরে দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মন্টুকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেন, মির্জা ফখরুল, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ সংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা দিদারুল হক ভূইয়া, জনঅধিকার পার্টির নেতা ইসমাইল সম্রাটের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ, জাসদ, জেএসডিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
গণফোরামের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান। এসময় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুব্রত চৌধুরী, এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, আলতাফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লতিফুল বারী হামিম, মুহাম্মদ রওশন ইয়াজদানী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ মধু, সাংস্কৃতিক সম্পাদক সানজিত রহমান চৌধুরী, স্বাস্থ্য সম্পাদক আজম রুপুসহ ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “নীতির সঙ্গে তিনি কখনও আপোস করেননি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন। ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে গণতন্ত্রকামী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য কাজ করেছেন।”
পরে বিকাল ৫টার দিকে বনানী কবরস্থানে মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠককে চির বিদায় জানানো হয়।
দাফনের সময় ছেলে কনক মোস্তফা, ভাই তৌফিক এহসানসহ পরিবারের সদস্য ও দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে গণফোরামে নাম লেখানো বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ১৯৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
সত্তরের দশক থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় এই আওয়ামী লীগ নেতা ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ঢাকা-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত এই নেতা যুবলীগের চেয়ারম্যান, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
পরে ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বাদ পড়েন মন্টু। এর কিছুদিন পর আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গণফোরাম গঠন করেন প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। পরে তার নেতৃত্বাধীন গণফোরামে যোগ দেন মন্টু।
২০০৯ সালে তিনি গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি গণফোরাম সভাপতি হিসেবে সক্রিয় ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-২ ও ৩ আসন থেকে গণফোরামের প্রার্থী হিসেবে উদীয়মান সূর্য প্রতীকে এবং ঢাকা-৭ আসন থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন।
আরও পড়ুন: