Published : 16 Oct 2024, 04:34 PM
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অন্তর্বর্তী সরকার ‘জাতির পিতা’ মনে করে না বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "আওয়ামী লীগ দল হিসেবে ফ্যাসিস্টভাবে ক্ষমতায় ছিল। মানুষের ভোটাধিকার হরণ ও গুম-খুন করে এবং গণহত্যা করে তারা ক্ষমতায় ছিল। কাজেই তারা কাকে জাতির পিতা বলল, তারা কোন দিবসকে জাতীয় দিবস ঘোষণা করল, নতুন বাংলাদেশে সেটার ধারাবাহিকতা থাকবে না।”
গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী প্রশাসন বাংলাদেশকে ‘নতুনভাবে গড়তে যাচ্ছে’ মন্তব্য করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে সরকারের দায়িত্বে আসা নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, “ইতিহাসের প্রতি আমাদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক ফেইসবুক পোস্টে এদিন সকালে আটটি জাতীয় দিবস বাতিলের সিদ্ধান্ত জানানো হয়, যার মধ্যে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসও রয়েছে।
সাংবাদিকরা দুপুরে ওই সিদ্ধান্তের বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, "আপনারা যদি আওয়ামী লীগের করা সবকিছু মনে করেন জাতীয়...। ভোটবিহীন সরকারেরই কোনো বৈধতা নেই। সেই সময়ে অনেক কিছু করা হয়েছে। সবগুলোকে পুনর্গঠন ও পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।"
একজন সাংবাদিক এ সময় বলেন, সব দেশেরই জাতির পিতা থাকে। বর্তমান সরকার কি তাহলে বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদশেরও জাতির পিতা হিসেবে মানে না?
জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, “অবশ্যই না।"
তাহলে বাংলাদেশে কোনো জাতির পিতা থাকবে না?– এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, "আমাদের এই ভূখণ্ডের লড়াইয়ের ইতিহাসে বহু মানুষের অবদান রয়েছে। আমাদের ইতিহাস কিন্তু কেবল ৫২-তেই শুরু হয়নি, আমাদের ব্রিটিশবিরোধী লড়াই আছে, ৪৭ ও ৭১-এর লড়াই আছে, ৯০ ও ২৪ আছে। আমাদের অনেক ফাউন্ডিং ফাদারস রয়েছে। তাদের লড়াইয়ের ফলে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।"
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১১ সালের জুনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে বর্ণনা করে তার প্রতিকৃতি সংরক্ষণ, প্রদর্শনের বিধান করা হয়।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণ, ২৬ মার্চ তার দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ১৯৭১ সালের মুজিবনগর সরকারের জারি করা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রও সে সময় সংবিধানে যুক্ত করা হয়।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটলে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রপরিচালনার ভার নেয়।
সরকারের উপদেষ্টারা বলছেন, অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা অনুযায়ী আগে রাষ্ট্রের সংস্কার করে তারপর নির্বাচন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করে দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে একটি কমিশন সংবিধান সংস্কারের জন্য কাজ করছে। এ বিষয়ে মতামত নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপও করছেন প্রধান উপদেষ্টা।