Published : 07 Jun 2025, 02:48 AM
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের এপ্রিলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে হতাশা প্রকাশ করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি।
শুক্রবার রাতে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলের স্থায়ী কমিটির এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
এদিন সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমি আজ দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যে কোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে।”
গত ডিসেম্বর থেকে ইউনূস বলে আসছিলেন, নির্বাচন কবে হবে তা নির্ভর করবে সংস্কার কতটা করা হবে তার ওপর। গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার সেরে ডিসেম্বরেই নির্বাচন সম্ভব। আর আরো কিছু সংস্কার করলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ভোট করা যাবে। তবে নির্বাচন জুনের পরে যাবে না, সেটাও তিনি বলেছেন।
অন্যদিকে বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। এমনকি কিছুদিন আগে তারা এও বলেছিল যে ওই সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাওয়া তাদের জন্য ‘কঠিন’ হবে।
শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচন নিয়ে নতুন ঘোষণা আসার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটি সভায় বসে। পরে রাত দেড়টায় পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলের অবস্থান না পাল্টানোর বার্তা আসে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “প্রায় দেড় যুগ ধরে মৌলিক ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত এদেশের জনগণ ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য গুম, খুন, জেল-জুলুম, আহত ও নির্যাতিত হয়েও অব্যাহত লড়াই চালিয়ে গেছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগষ্টের ছাত্র-জনতার বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে তার বিজয় অর্জিত হলেও নির্বাচন অনুষ্ঠানে অহেতুক বিলম্বে জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে বিধায়, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমপর্যায়ের পরীক্ষা এবং আবহাওয়া ইত্যাদি বিবেচনায় ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করছে।”
বিএনপি বলছে, “নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কথা বললেও একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সিংহভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত অগ্রাহ্য করে নিজেদের নিরপেক্ষতাকে যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, তাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে দেশের জনগণ সঙ্গতভাবেই শঙ্কিত হতে পারে বলে সভা মনে করে।
“সভায় সর্বম্মতভাবে এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে যে, ঈদুল আযহা উপলক্ষে প্রদত্ত প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য প্রসঙ্গকে অতিক্রম করে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে পরিণত হয়েছে। এই দীর্ঘ ভাষণে তিনি বন্দর, করিডোর ইত্যাদি এমন সব বিষয়ের অবতারণা করেছেন, যা তারই ভাষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিনটি ‘ম্যান্ডেটের’ মধ্যে পড়ে না। ভাষণে তিনি শব্দ চয়নে রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম করায় সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করছে, এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হলে একদিকে আবহাওয়ার সংকট, অন্যদিকে রমজানের মধ্যে নির্বাচনী প্রচার ও কার্যক্রম এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে যা নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
“অধিকিন্তু কেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়, এমন কোন সুনির্দিষ্ট কারণ তার ভাষণে উল্লেখ করা হয়নি।”