Published : 19 Jun 2025, 09:31 PM
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে পারলেও কোন পদ্ধতিতে এ নির্বাচন হবে সে বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।
জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, "সংবিধানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের যে বিধান আছে ৪৮ এর ১ অনুচ্ছেদ আছে। এই অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের বিষয়ে সকল রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। পরিবর্তিত সংশোধিত ও সংস্কারের বিষয়টি আমরা পরবর্তীতে আলোচনা করব।"
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার চতুর্থ দিনের সংলাপ শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৫টায়।
আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে কমিশনের সদস্যদের মধ্যে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, আইয়ুর মিয়া, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন বৈঠকে অংশ নেন।
সংস্কার প্রশ্নে কমিশনের দ্বিতীয় দফার এই সংলাপে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার ছিল এদিনের আলোচ্য বিষয়।
বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদ, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, অধ্যাপক রোরহান উদ্দিন খান; জামায়াতে ইসলামীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ; এনসিপির হাসনাত আবদুল্লাহ; গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস; খেলাফত মজলিসের আহমেদ আবদুল কাদের; বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক; বাংলাদেশ জাসদের মুশতাক হোসেন, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের বজলুর রশীদ, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, বিএলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম এদিন বৈঠকে যোগ দেন।
সংলাপ শেষে বের হয়ে আলী রীয়াজ বলেন, “রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নিয়ে আলোচনায় সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে- প্রত্যেক রাজনৈতিক দল স্মরণ করিয়ে দেয় এর সাথে পার্লামেন্টের দ্বিকক্ষ জড়িত। রাষ্ট্রপতি কীভাবে নির্বাচিত হবেন সেক্ষেত্রে উচ্চকক্ষ কীভাবে হবে সেটার জন্য দ্বিকক্ষ পার্লামেন্ট নিয়ে আলোচনা করেছি।
"আমাদের আলোচনায় বিভিন্ন রকম মত থাকলেও আলোচনাটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে হচ্ছে। প্রত্যেকেই মতামত দিচ্ছে। আজকে আমরা সবাই একমত হয়েছি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের যে পদ্ধতি রয়েছে তা পরিবর্তন হওয়া দরকার।"
তিনি বলেন, "আমরা আশা করব এ সপ্তাহে যেসকল বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে, সেগুলো নিয়ে (আগামী সপ্তাহে) প্রথমে আলোচনা করব।"
১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের ভোটে। তখন থেকে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একবারই সংসদের কক্ষে ভোট করতে হয়েছিল। পরে প্রতিবারই ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে এসেছেন।
সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি পাল্টানোর পাশাপাশি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে। যেখানে সংসদের নিম্নকক্ষে আসন থাকবে ৪০০, নির্বাচন হবে বর্তমান পদ্ধতিতে। এর মধ্যে ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তারা নির্বাচিত হবেন সরাসরি ভোটে।
আর উচ্চকক্ষে আসন থাকবে ১০৫টি। নির্বাচন হবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে। সংসদের দুই কক্ষ মিলিয়ে মোট আসন হবে ৫০৫টি।
দ্বিকক্ষ আইনসভা নিয়ে সবাই একমত হয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন আলী রীয়াজ বলেন, "অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। ১০০ সদস্য বিশিষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রেও একমত হয়েছে। তার মানে এই নয় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে আরও সংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে যেগুলো ঐক্যমত হলে পরে জানানো হবে।"
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, "রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইলেক্টোরোল পদ্ধতিটির বিষয়ের রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন, এর মধ্যে বেশি মতামত এসেছে উচ্চকক্ষ-নিম্ন কক্ষের সদস্যদের গোপন ব্যালাটের ভেতরে ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার। এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায়নি। তবে সবগুলো রাজনৈতিক দল গোপন ভোটের পক্ষে একমত হলে এতে একমত বিএনপি।"
জমায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলরন, "রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের যে বিষয়টিতে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে, সেটা হচ্ছে উচ্চ কক্ষ ও নিন্ম কক্ষের সদস্য এবং এটাকে কনস্টিটিউন্সি প্রেসিডেন্টের যে কনস্টিটিউন্সি.. মানে ইলেক্ট্রোরাল কলেজ, সেটা আরেকটু বর্ধিত করা।
"কমিশনের প্রস্তাব হচ্ছে এটা আপ টু দি ইউনিয়ন কাউন্সিল মেম্বারস, যেটার সংখ্যা হয়ে যায় প্রায় ৭০/৭৫ হাজার। আমরা বলেছি এক্সটেন্ড করা দরকার, তবে এটা এত বড় নয়। ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল এবং পৌরসভা আছে এটাকে কাভার করে। আর উচ্চ কক্ষ ও নিম্ন কক্ষ থাকবেই।"
জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গোপন ব্যালটে ভোট চায় জানিয়ে তিনি বলেন, "এতে করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যারা সরকার গঠন করবে বা যারাই করুক তার বাইরেও অন্য কোনো ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হতে পারবে এমন একটা বিষয় এখানে ওপেন হওয়া। যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, কিন্তু অলটারনেটিভ হওয়ার একটা স্কুপ এবং অপরচুনিটি, যদিও এটা খুব ন্যারো, তারপরও এটা একটা পজিশন থাকবে। সে জন্য আমরা এটা বলেছি।"
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহীন হোসেন প্রিন্স বলেন, "রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সৎ, যোগ্য, সুনামসম্পন্ন, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের সার্বভৌমত্বের পক্ষে, অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিদের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার বিধান করার কথা আমরা বলেছি।
"৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধিত হলে সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি পদে যে কোনো প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে–এটা বিবেচনা করে গোপন ব্যালটে ভোট প্রদান করা যেতে পারে বলে আমরা বলেছি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বর্তমান পদ্ধতি পরিবর্তন করা।"
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, "রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে কথা হচ্ছিল। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গোপন ব্যালটের কথা আমরা বলেছি।"