Published : 16 Jun 2025, 06:21 PM
পঞ্চাশ বছর আগে যে দিনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান চারটি পত্রিকা রেখে সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিলেন সে দিনটির কথা ‘গণমাধ্যমে না আসায়’ প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
সোমবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জাহিদ হোসেন এই প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন, “কয়টা পত্রিকায় এবার ১৬ জুন সম্পর্কে কিছু লিখেছে? দুর্ভাগ্য… আপনারাই যদি না লেখেন। যদিও বিএফইউজে-ডিইউজে প্রোগ্রাম করছে… হাতে গোনা কয়েকটা প্রিন্ট মিডিয়া ছাড়া বা অনলাইন মিডিয়া ছাড়া বেশির ভাগ প্রিন্ট মিডিয়ায় ১৬ জুন কোনো ধরনের বক্তব্য নাই।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, “এটার জন্য আজকের সরকারেরও দায়িত্ব ছিল… আজকে তথ্য মন্ত্রণালয়, তাদের প্রোগ্রাম করা উচিত, প্রেস কাউন্সিলের কর্মসূচি নেওয়া দরকার, জাতীয় সম্প্রচার কর্তৃপক্ষের কর্মসূচি পালন করা প্রয়োজন ছিল।
“কিন্তু তারা কেউ কর্মসূচি নেয়নি। কারণ এগুলো নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ তাদের মধ্যে হয়ত অনেকের আসেনি।”
জাতীয় প্রেসসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এর একাংশের যৌথ উদ্যোগে সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
১৯৭৫ সালের ১৬ জুন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান দেশে চারটি পত্রিকা রেখে সব পত্রিকা বন্ধ করে দেয়। সেই থেকে সাংবাদিকরা এই দিবসটিকে কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন।
‘সংবাদপত্রের কল্যাণে বিএনপি’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা সংবাদপত্রের জন্য এই কালো দিবসে বিবৃতি দেননি বলে দাবি করেছেন অধ্যাপক জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, “মনে রাখতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল যে কোনো পরিস্থিতিতে, আমরা মানুষের সাথে ছিলাম, আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আপনারা অনেকে ব্যক্তিগতভাবে, ওনার সাথে পেশাগত সম্পর্ক হয়েছে এবং আছে… উনি কীভাবে আপনাদের পাশে থেকেছেন, কথা বলেছেন… যতটুকু সম্ভব আপনাদের এই শিল্পের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিও ইঙ্গিত করে বিএনপির এই নেতা বলেন, “কেনো লিখলেন না? আপনারা দেশ চালাচ্ছেন।”
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক বলেন, “আপনি আগামী দিনে সরকারে যেতে চান? দেশের ভালোর জন্য কথা বলেন, ….আপনি খালি নির্বাচন নির্বাচন নিয়ে কথা বলবেন, সংস্কার নিয়ে কথা বলবেন, ১৬ জুন আজকে আপনার কেন বক্তব্য নেই…এটা কেন? এটা তো হওয়ার কথা নয়।”
‘শুধু গুনগান গাইলে চলবে না’
জাহিদ হোসেন বলেন, “এখানে যারা বসে আছেন সবাই শিক্ষিত মানুষ… আপনারা কমবেশি লেখালেখি করেন… আপনারা সবাই গুনগান গাইবেন, দোষ বলবেন, আলোচনা হয়েছে, চুক্তি হয়েছে ১০টা? কী চুক্তি করলেন এই কথা জিজ্ঞাস করার সাহস নাই… তাহলে তো হলো না।
“রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পে খরচ এত কোটি টাকা, কিন্তু এটার মধ্যে ২৯ হাজার টাকা দামের পর্দা, এগুলো জিজ্ঞাস করার আপনাদের সাহস নাই… এটা তো হবে না।”
সত্য বলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “(অনেকে) বলছেন যে, আমার তো ইসলামিক টিভির মতো বন্ধ করে দেবে, দিগন্ত টিভির মত বন্ধ করে দেবে। এখানে অনেকের চাকরি ছিল না… আপনারা কি হারিয়ে গেছেন? অনেকে মারা গেছেন, অনেকে শহীদ হয়েছেন, অনেকে জেলে খেটেছেন, কিন্তু আজকে আপনারাই আছেন, অন্যরা পালিয়ে গেছে। এটা হল আপনাদের অর্জন।”
ফ্যাসিবাদের দোসরা কেন থাকবে, এ প্রশ্ন রেখে জাহিদ হোসেন বলেন, “ফ্যাসিবাদের প্রধান মানুষটি পালিয়ে যেতে পারে, যে ফ্যাসিবাদের একক কর্তৃত্ববাদের প্রতিষ্ঠাতা, প্রশ্রয়দাতা সব কিছু করেছে, যে কিনা হাসতে হাসতে মানুষকে মেরে ফেলার জন্য বলেছেন, সেই মানুষ যদি পালিয়ে যেতে পারেন তাহলে তার দোসরা কীভাবে থাকে?”
“মনে রাখতে হবে আমাদের সরিষার মধ্যে যেন ভূত না থাকে।”
পেশার ক্ষেত্রে স্পষ্ট থাকা ও সত্য বলার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, “তাহলে দেখবেন আমরা বিএনপি সত্যের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে, পেশাজীবীদের স্বার্থে, সাংবাদিকতার স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে আমাদের একটাই কথা ‘সবার আগে বাংলাদেশ’।”
ডিইউজের একাংশের সভাপতি শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএফইউজের একাংশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহিন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, সহকারী মহাসচিব বাছির জামাল, সহসভাপতি খায়রুল বাশার, এ কে এম মহসিন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, ডিইউজের সহসভাপতি হাসনাত করীম পিন্টু, রাশেদুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খান, কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন বক্তব্য রাখেন।