Published : 09 Jun 2025, 05:11 PM
আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের দাবি অন্তর্বর্তী সরকার কেন মানছে না তার ব্যাখ্যা দাবি করেছেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
তিনি বলেছেন, “এপ্রিল মাসে নির্বাচনের কথা সরকার বলছেন। আমি ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে পারব না কেন? কোথায় বাধা? আর এপ্রিলে নির্বাচন করলে, সেই বাধাটা থাকবে না- সেটা কি?
“এই কারণটা আমি দেখি না। সরকার কোনো ব্যাখ্যাও দিচ্ছে না।”
রোববার নয়া পল্টনে নিজের চেম্বারে একদল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির এই সদস্য অন্তর্বতীকালীন সরকার, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “উনি (মুহাম্মদ ইউনূস) বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু এই সরকারের তো ব্যস্ততা একটা বিষয়ের ওপর থাকার কথা ছিল। যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিগত দিনে সরকার হয়নি বলেই ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটেছে, এখন আমাদের গণতন্ত্রের উত্তরণ অর্থ্যাৎ নির্বাচনটা হলো মূল এজেন্ডা।
“কিন্তু বর্তমান সরকার নির্বাচনটাকে মূল এজেন্ডায় না রেখে অপ্রাসঙ্গিক বা যেটা সম্ভব না, এসব বিষয় নিয়ে একটা বির্তকের সৃষ্টি করেছে।”
ডিসেম্বরেই সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে ‘বিএনপি রাজপথে থাকবে’ বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর।
তিনি বলেন, “নির্বাচন দাবিতে আন্দোলন আমাদের চলমান, এটা নতুন করে বলার দরকার নাই। ঈদের আগে-পরে বলারও দরকার নাই, বর্ষার আগে-পরেও বলার দরকার নাই। ১৭ বছর ধরে আমরা এই দাবিতে (নির্বাচন) আন্দোলন করছি।
“এখন এটার সমাপ্তি দেখতে চাই, এটার এন্ড দেখতে চাই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন- যেখানে ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট দেবে, সেটা দেখতে চাই। আমরা আন্দোলনে আছি, নির্বাচন বা ভোট আমরা সবসময় চাইব- যতক্ষণ পর্যন্ত এটা (নির্বাচন) না হয়।”
নির্বাচনের দাবিতে কোনো কর্মসূচির ভাবনা রয়েছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে গয়েশ্বর বলেন, “চলমান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমরা আন্দোলনে আছি। একটা সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলনেই থাকব।
“আন্দোলনের প্রকারভেদ কী হবে, সেটা তো অন্য জিনিস, সেটা মাঠ (রাজপথ) বলে দেবে।”
‘সরকার আস্থা সংকটে ভুগছে’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “এপ্রিলে নির্বাচন…আবহাওয়া, রমজান; এরপর যদি আবার পেছায়? নির্বাচন নিয়ে জনগণ এই সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে কি? সরকারকে আস্থা অর্জন করতে হবে যে, গভর্মেন্ট ইজ ভেরি মাচ সিনসিয়ার টু হ্যান্ড ওভার পাওয়ার থ্রু প্রোপার ইলেকশন।
‘‘জনগণ আস্থা নিতে পারবে যে- একটা ইলেকশন হবে; তাহলে আমি-তুমি কী বললাম, এটা ইমমেটেরিয়াল। আর জনগণের মধ্যে যদি সংশয়-আশঙ্কা থাকে, তাহলে আমি-তুমি কী বললাম- এটা কিন্তু একটা ফ্যাক্ট।”
তিনি বলেন, “বিএনপি জনগণের কথা বলে। বিএনপি তার নিজের কথা বলে নাই। এই নির্বাচনের যে দাবি, এটা তো জনগণের কথা।
“এখানে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ আস্থার সংকট বললে বুঝতে হবে যে, রাজনীতিতে যারা স্টেকহোল্ডার তাদের।’
‘‘প্রত্যেক পলিটিশিয়ান কিন্তু জনগোষ্ঠীর একাংশের প্রতিনিধি। সে পার্লামেন্টের মেম্বার হতে পারে, নাও হতে পারে।”
‘সরকারের ইগো সমস্যা’
গয়েশ্বর বলেন, “সরকারের ইগো প্রোবলেম আছে। সরকারের যদি ইগো প্রোবলেম না থাকে, আর যদি পণ করে থাকে যে- বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতেই দেওয়া যাবে না। তাহলে সরকার এভাবেই চলবে।
“আমি মনে করি, সরকার যদি ইগো সমস্যা পরিহার করে, তাহলে আমরা যে কথাগুলো বলছি যে- নির্বাচনের বিষয়টি বিবেচনা করে উনি রিশিডিউল করতে পারেন। সেই রিশিডিউলটা যদি জনগণের আস্থার মধ্যে হয়, সেই ক্ষেত্রে আমাকেও তো জনগণকে নিয়ে রাজনীতি করতে হয়; আমি সেটা বিবেচনা করার একটা সুযোগ পাব। আর যতক্ষণ পর্যন্ত উনি এক জায়গায় থাকবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তো আমার নির্বাচনের দাবি করবই।”
তিনি বলেন, “নির্বাচন দাবি করা অন্যায় না। সরকার যদি মনে করে যে, ডিসেম্বরে নয়, নভেম্বরে নির্বাচন করব; তাতে কি সরকারের প্রেস্টিজ চলে যাবে? তখন কি আমি বলব, নভেম্বরে কেন? ডিসেম্বরেই করতে হবে- এই কথা বলব না।
“মূল কথাটা হলো, এখানে একটা আস্থার অভাব আছে, আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে, জনগণের মধ্যে নানা ধরনের প্রশ্ন আসছে। কারণ আমার যে কাজ না, সেই কাজ নিয়ে যদি ব্যস্ত থাকি, আমার যেটা কাজ সেটা নিয়ে যদি ব্যস্ত না থাকি- এখানে একটা আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে।”
‘সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া’
গয়েশ্বর বলেন, ‘‘সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া, এটা যুগের দাবি, এটা সময়ের দাবি, এটা জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনের দাবি। প্রতি পাঁচ বছর পরপর সংসদ নির্বাচন হয় কেন? এই জনদাবি জনআকাঙ্ক্ষাকে পূরণের ক্ষেত্রে কখনো কখনো সংবিধানে কোনো কোনো আইন সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন ইত্যাদি বিষয় আসে।
“সুতরাং পৃথিবী যতদিন আছে, দেশ যতদিন আছে; ততদিনই কিন্তু এই সংস্কার চলবে। এটা পবিত্র কোরআনও না, ভগবান কর্তৃক প্রেরিত গ্রন্থ না অথবা গড কর্তৃক বাইবেলও না; যেখানে কোনো পরিবর্তন হয় না।”
তিনি বলেন, “রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে সংস্কার চলমান থাকতে হবে। একসময় আমরা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির কথা বলেছি, সেখান থেকে আমরা মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এসেছি, একসময় রাষ্ট্রপতির শাসনব্যবস্থা ছিল, সেখান থেকে আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্র ও সংসদীয় গণতন্ত্রে এসেছি।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর বলেন, “এসব সংস্কার গণতন্ত্রে বাধা না, উন্নয়নেও বাধা না। আজকে যে সংস্কার, সেটা গণতন্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো বিষয় নাই। যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়েছে, সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটা পুনরুদ্ধার করতে গেলে যে সংস্কার প্রয়োজন-সেটা করতে হবে।
“অর্থাৎ অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই পিপলস গভর্মেন্টটা হলে তো ইট উইল বি দা ফাউন্ডেশন অব নেক্সস্ট রিফর্ম এবং যেহেতু আমার সংসদ দরকার হবে; সেকারণে একটা জনপ্রতিনিধিমূলক জনগণের সরকার যখন হবে- তখন অসামঞ্জস্যপূর্ণ মৌলিক অধিকারে আঘাত করে, মানবতাবিরোধী কোনো ধারা-উপধারা থাকলে এগুলো তা পরিবর্তন করা যাবে।”