Published : 18 Jun 2025, 01:30 PM
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার শাহবাগে ঝুট ব্যবসায়ী মো. মনির হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
এছাড়া সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারীকে ২০২৩ সালে পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে গণ অধিকার পরিষদের কর্মী বদরুল ইসলাম সায়মনকে হত্যাচেষ্টার মামলায় তিন দিন করে রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
ঢাকার মহানগর হাকিম এম মিজবাহ উর রহমান বুধবার শুনানি শেষে তিনজনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আনিসুল হককে গত ২৮ মে মনির হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পাশাপাশি তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই মাইনুল ইসলাম খান পুলক।
অন্যদিকে মোশাররফ হোসেন ও বাবুল সরদার চাখারীকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন পল্টন মডেল থানার এসআই বিমান তরফদার।
বুধবার ওই দুই আবেদনের শুনানিতে তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।
প্রথমে আনিসুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করা হয়। এরপর রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, “আসামি ফ্যাসিস্ট হাসিনার অবৈধ মন্ত্রী। হত্যা মামলা। এজাহারনামীয় আসামি। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।”
আনিসুল হকের পক্ষে ব্যারিস্টার সুমন হোসেন বলেন, “আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। আইন অনুযায়ী আপনি যা ভালো মনে করেন।”
পরে বিচারক পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
মোশাররফ হোসেন এবং বাবুল সরদার চাখারীর মামলাতেও ১০ দিনের রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন ওমর ফারুক ফারুকী।
তিনি বলেন, “পুলিশের অনুমতি নিয়ে বিএনপি পল্টনে সমাবেশের আয়োজন করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা সর্ববৃহৎ সমাবেশ। সেখানে হামলা চালানো হয়। হাজার হাজার নেতাকর্মী আহত, কয়েকজন নিহত হয়। এক পুলিশ সদস্যও নিহত হয়। বাদী গুলিবিদ্ধ হন। ফ্যাসিস্টদের কারণে তখন মামলা দায়ের করা সম্ভব হয়নি। পরে মামলা করেন। আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।”
মোশাররফ হোসেনের পক্ষে তার আইনজীবী তানভীরুল ইসলাম রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন আবেদন করেন।
তিনি বলেন, “মামলার এজাহারে তার (মোশাররফ) নাম নাই। ২০২৩ এর আগে ২০১৯ সাল থেকে তিনি রাজনীতি থেকে অবসরে যান। তিনি অসুস্থ, বয়স্ক একজন মানুষ। তার বয়স ৮৩ বছর। তার বিরুদ্ধে ১১টা হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সবগুলো মামলায় তিনি হাই কোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। যখন তিনি কারামুক্ত হবেন ঠিক তখনই তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়েছে।”
এ আইনজীবী বলেন, “তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। তার হার্টে পাঁচটি রিং পড়ানো। ঠিকমত ব্যালেন্স দিয়ে কথা বলতে পারেন না। কীভাবে রিমান্ড চাচ্ছে বোধগম্য নয়। তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের প্রার্থনা করছি।”
বাবুল সরদার চাখারীর পক্ষে কোনো আইনজীবী শুনানি করেননি। পরে আদালত তাদের দুজনকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেয়।
আনিসুল হকের মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৫ অগাস্ট শাহবাগ থানার চানখারপুল এলাকায় ছাত্র-জনতার সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন ঝুট ব্যবসায়ী মো. মনির। দুপুরে গুলিতে তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় তার স্ত্রী গত ১৪ মার্চ শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন।
আর মোশাররফ হোসেন এবং বাবুল সরদার চাখারীর মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর গুম, খুন, নিপীড়ন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে সমাবেশ আয়োজন করা হয়। বিএনপি ও গণ অধিকার পরিষদসহ অন্যান্য সমমনা রাজনৈতিক দল ওই মহাসমাবেশের ডাক দেয়।
গণ অধিকার পরিষদের কর্মী বদরুল ইসলাম সায়মনও সেদিন সমাবেশে অংশ নেন। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আসামিরা ‘অতর্কিতে হামলা করে’। এ সময় আসামিদের ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে সায়মন আহত হন।
তাকে উদ্ধার করে পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়। দীর্ঘদিন তাকে চিকিৎসা নিতে হয়।
এ ঘটনায় গত ২৯ এপ্রিল রাজধানীর পল্টন মডেল থানা হত্যাচেষ্টা মামলা করেন সায়মন। সেখানে শেখ হাসিনাসহ ২৪৫ জনকে আসামি করা হয়।