Published : 18 Jun 2025, 04:48 PM
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ফোন করে ‘নিরপেক্ষ থাকবেন বলে আস্বস্ত করায়’ জামায়াতে ইসলামী জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে যোগ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
পাশাপাশি ইউনূস নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন অভিযোগ তুলে তিনি বলেছেন, “ঐকমত্য কমিশন এখন ইফ, যদিতে আছে, কিন্তুতে যাবে কিনা আল্লায় জানে।”
বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার সংলাপের তৃতীয় দিনে খাওয়ার বিরতিতে বেরিয়ে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর কোনো সদস্য অংশ নেননি। পরে জাময়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা বৈঠকটি ‘বয়কট’ করেছে।
গত ৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পরে যে যৌথ ঘোষণা প্রকাশ করা হয় তা ‘যথাযথ’ হয়নি বলে মনে করছে জামায়াত।
এর প্রতিবাদে জামায়াত কমিশনের বৈঠক ‘বয়কট’ করেছে বলে দলটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হামিদুর রহমান আযাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আমরা অন প্রোটেস্ট বৈঠকে যাইনি।”
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, “আমরা বিষ্মিত যে, আমরা ২৪ ঘন্টা আসি নাই, এর কারণটা বের করতে পারেন নাই। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা লন্ডন সফরের কিছু কিছু বিষয়ে প্রশ্ন করে এবং আপত্তি জানিয়ে একটা বিবৃতি আমরা দিয়েছি।
“মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে গিয়েছেন, অ্যাওয়ার্ড আনার জন্যে, টাকা ফেরত আনার জন্যে এবং ওনার উপস্থিতিতে বাংলাদেশের বৃহত্তর দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে একটা বৈঠক হয়। এটাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি।”
তাহের বলেন, “নির্বাচনের তারিখের ব্যাপারে উনি (প্রধান উপদেষ্টা) যে কথা বলেছেন এটার ব্যাপারেও তেমন কোনো আপত্তি আমাদের নেই। কারণ ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার প্রস্তাব আমরা করেছি। সুতরাং ডিসেম্বরে করা হলেও আমাদের দাবির মধ্যে পড়ে, এখন কড়া করে যে ফেব্রুয়ারি কথা বলা হচ্ছে, সেখানেও আমাদের প্রস্তাবের মধ্যেই। এখানেও কোনো আপত্তি নেই।”
ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে না আসার কারণ তুলে ধরেন তিনি বলেন, “আমরা যেখানে প্রশ্ন তুলেছি, উনি জাতির উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দিয়েছেন সেই ভাষণে একটা তারিখ ঘোষণা করেছেন, এখানে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তারিখ পরিবর্তন হতেই পারে। বিএনপি একটি বড় দল তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে তারিখ পরিবর্তন হতেই পারে, এখানেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
“আমাদের আপত্তি হলো, এখানে ভালো হইতো, তিনি টেলিভিশনে (জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ) কথা বলেছিলেন, এখন বাংলাদেশে এসে সেটাকে রিভাইস করতে পারতেন। কিন্তু সেটা উনি করেন নাই।”
জামায়েতের নায়েবে আমির বলেন, “আমরা বিস্ময়ের সাথে দেখলাম, তিনি একটি দলের সাথে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে আছে কিনা আমাদের জানা নাই। বিভিন্ন দেশে সরকার প্রধানের সাথে সংসদের প্রধান বিরোধী দল বা সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলের সাথে বৈঠক হয়। তখন তাদের একটা স্ট্যাটাস থাকে। এখানে বহুদলীয় গণতন্ত্রে ১০০ এর বেশি দল আছে। তাহলে তো এমন এক কালচার তৈরি হবে উনি যার সাথে কথা বলবেন, একটা যৌথ বিবৃতি করতে হবে।
“আমরা মনে করি এটা নজিরবিহীন ছিল, শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, সকল দলই বিব্রত হয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে আমাদের আপত্তি, বিএনপির ব্যাপারে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।”
প্রধান উপদেষ্টা ‘নিরপেক্ষা হারিয়ে ফেলায়’ ঐকমত্য কমিশন এগুতে পারবে না দাবি করে তাহের বলেন, “আমাদের সেই ধারণা হয়েছে, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে যে সংস্কার কমিশন আছে, এখানেও তারা খুব বেশি অগ্রসর হতে পারবে না।
“এটা অনেকটা ‘পর্বতের মুষিক প্রসব’ করার মত পরিস্থিতি দাঁড়াবে, এর কার্যকারিতা হারাবে। সে কারণে আমরা কাল আসিনি, প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে আসিনি।”
প্রধান উপদেষ্টা ফোন করার কারণে জামায়াত সংলাপে এসেছে জানিয়ে তাহের বলেন, “এর মধ্যে আমাদের সাথে অন্তর্বর্তী সরকারের অনেকে কথা হয়েছে। কাল (মঙ্গলবার) দুপুরে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আমাদের মাননীয় আমিরের সাথে ফোনে কথা বলেছেন।
“আমরা আমাদের কথা বলেছি, উনি উপলব্ধি করেছেন। উনি আস্বস্ত করেছে, উনার সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে। কোন বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর প্রতি ঝুঁকে যাওয়া না, তারা নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করবেন। ওনার সাথে কথা বলার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আবার আজকে আসার সিদ্ধান্ত নিই।
কোন দল উপকৃত হবে, কোন দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে, জাতীয় পর্যায়ে সেই বিবেচনায় আসা কাম্য নয়।”
তিনি বলেন, “সরকার যদি নির্বাচনকে সুষ্ঠু সঠিক করার জন্য কঠোর না হয়, তাহলে আরেকটা স্বৈরাচারী নির্বাচন এই দেশকে রক্ষা করতে পারবে না।
“স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দেখলাম, হঠাৎ করে উনি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করবেন, যিনি এক মাসেও একটা বিল্ডিংয়ের (নগর ভবন) তালা খুলতে পারেনি, তিনি ৩০০ আসনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করবেন?”
ঐকমত্য কমিশন ‘ইফ আর যদিতে’ আছে দাবি করে তাহের বলেন, “আমরা বলেছি, নারীদের জন্য ১০০ আসন সরাসরি নির্বাচনে আমাদের আপত্তি নাই, তবে সেটা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে হতে হবে। সুতরাং আগে ওইটা সমাধান না করলে এটা নিয়ে মতামত দেওয়া কঠিন হবে।
“কারণ ইফ, যদি ইত্যাদি দিয়ে তো চূড়ান্ত কোনো সমাধান হয় না। আমাদের ঐকমত্য কমিশন এখন ‘ইফে আছে, যদিতে আছে, এর পরে কিন্তু’ হবে কিনা সেটা আল্লাহ ভালো জানে।”
বুধবার বেলা সোয়া ১১টায় বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমির ‘দোয়েল মাল্টিপাস হল’ প্রবেশ করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদ।
মিলনায়তনের দরজার সামনেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার জামায়াতের প্রতিনিধি দলের নেতা তাহেরকে শুভেচ্ছা জানান। তারা হাসিমুখে করমর্দন করেন।
পরে জামায়াত নেতারা হেঁটে হেঁটে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও জামায়াতের নায়েবের আমিরের সঙ্গে করমর্দন করেন, শুভেচ্ছা জানান।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান জামায়াতের নায়েবের আমিরের সাথে কুশল বিনিময় করে বলেন, “ভাই একেবারে টেনশনে ফেলে দিয়েছিলেন। ফিরে এসেছেন। আমরা সবাই একসাথে নতুন বাংলাদেশ গড়ব।”