Published : 02 Jun 2025, 03:42 PM
আদালতের আদেশে দলের নিবন্ধনের সঙ্গে প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরে আসছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি এ এই এম হামিদুর রহমান আযাদ।
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন ‘ইতিবাচক’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
সোমবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কথা বলছিলেন তিনি। আযাদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল ওই বৈঠকে অংশ নেন।
এদিন দলের নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পেতে আপিল বিভাগের রায়ের অনুলিপি নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের যে রায় হাই কোর্ট দিয়েছিল, এক যুগ বাদে রোববার তা বাতিল করে দেয় আপিল বিভাগ। সেদিনই নির্বাচন কমিশন বলেছিল, রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার পরই জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সকালে সংক্ষিপ্ত রায়ের অনুলিপি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে হাজির হয় জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলটি। আপিল বিভাগের রায়ের মধ্য দিয়ে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়ে আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ খুলেছে ২০০১-০৬ মেয়াদে বিএনপির সঙ্গে সরকারে থাকা জামায়াতে ইসলামীর।
সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখন নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীকের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
জামায়াত নেতা আযাদ বলেন, "আদেশের মধ্যে বলা হয়েছে পূর্বের অবস্থায় ফিরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যেমন আমি ২০০৮ সালে নির্বাচন করেছি নবম সংসদ নির্বাচনে। তখন নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলাম। আমিতো দাড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছি। তাহলে আদেশে আজ পর্যন্ত হাই কোর্ট যে অন্যায় আদেশটা দিয়েছিল, যে আদেশটা বাতিল হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। এখানে উনাদের (ইসি) না দেওয়ার কিছু নেই, কিছু বলেওনি, বলার সুযোগও নেই। আদালতের বিরুদ্ধে কিভাবে বলবে?"
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, যেহেতু ২০১৩ সালে হাই কোর্ট অর্ডার করার আগে তখন প্রতীক (দাঁড়িপাল্লা) ইসির সংরক্ষিত তালিকায় ছিল, দলের নিবন্ধনও ছিল।
“পূর্ব অবস্থায় আসা মানে এটা অটোমেটিক তালিকার মধ্যে অর্ন্তভুক্ত হয়ে যায়। বাকিটা হল অফিসিয়াল। এখন কমিশন পজিটিভ বলেছেন। আমরা দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ফিরে পাবো, দলের নিবন্ধনও ফিরে পাবো।
২০১৩ সালের ১ অগাস্ট সংবিধানের সঙ্গে গঠনতন্ত্র ‘সাংঘর্ষিক হওয়ার কারণ দেখিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়।
এদিকে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ‘দাঁড়িপাল্লা’ ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রামে ব্যবহৃত হবে এবং কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও দলের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
ওই সিদ্ধান্ত ইসি সচিবালয়ে পাঠানোর পর নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ৯ এর উপবিধি (১) এর ৩২ নম্বর ক্রমিক থেকে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক বাতিল করার প্রস্তাব কমিশন সভায় অনুমোদিত হয়। তারপর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে জামায়াতের জন্য বরাদ্দ মার্কা দাঁড়িপাল্লা নির্বাচনি প্রতীকের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ২০১৭ সালের ৮ মার্চ গেজেট জারি করে ইসি।
ফুলকোর্ট সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জামায়াতে নেতা আযাদ জানান, ২০১৬ সালের সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক অর্ডার মানার ‘কোনো সুযোগ নেই’।
“সুপ্রিম কোর্ট ফুল কোর্ট সভা-এটা তো কোনো আদালত নয়। এটা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বডি ফাংশান করে। ইনশাহআল্লাহ আমরা দাঁড়িপাল্লা ফিরে পাবো, এটা আদালত বলেছে। কমিশনও পজেটিভ।”
সিইসি ছাড়াও বৈঠকে অংশ নেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, বেগম তাহমিদা আহমদ, আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ও ইসি সচিব আখতার আহমেদ।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদের নেতৃত্বে প্রতিনিধিত্ব করেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য জসিম উদ্দিন সরকার এবং আইনজীবী শিশির মনির।
আরও পড়ুন
রাজনৈতিক দলকে আর দাঁড়িপাল্লা নয়: সুপ্রিম কোর্ট