Published : 25 May 2025, 02:10 PM
ইতালিতে অবৈধ অভিবাসীদের আলবেনিয়ায় স্থানান্তরের প্রক্রিয়া এখন থেকে আইনি কাঠামোর অধীনে পরিচালিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার।
দেশটির সংসদে আস্থা ভোটের মাধ্যমে বিতর্কিত ‘আলবেনিয়া ডিক্রি’ আইন হিসেবে পাশ হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশিসহ নিরাপদ দেশ হিসেবে চিহ্নিত অন্যান্য দেশের অবৈধ অভিবাসীরা নতুন সংকটের মুখে পড়তে পারেন বলে অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
স্থানীয় সময় বুধবার ইতালির পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত আস্থা ভোটে ১৪৭ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ৯০ জন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন, বিপক্ষে ভোট দেন ৫৬ জন এবং একজন সদস্য ভোটদান থেকে বিরত থাকেন।
প্রায় এক সপ্তাহ আগে এই প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদে উত্থাপন করে মেলোনির নেতৃত্বাধীন সরকার। এতে বলা হয়, আলবেনিয়ার মাটিতে ইতোমধ্যে নির্মিত অভিবাসী কেন্দ্রগুলোতে অবৈধ অভিবাসীদের পাঠিয়ে সেখানে আশ্রয় আবেদন যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করা হবে। আবেদন গৃহীত হলে তাদের পুনরায় ইতালিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে, অন্যথায় নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি আইনটি পাশ হওয়ার পর স্থানীয় গণমাধ্যমে বলেন, “সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। এই আইন তারই প্রতিফলন।”
তবে প্রস্তাবটি শুরু থেকেই বিতর্ক ও আইনি জটিলতার জন্ম দেয়। রোমের আপিল বিভাগসহ ইতালির বিভিন্ন আদালত রায় দিয়ে জানান, ইউরোপীয় আইনের আওতায় ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের ইতালিতে এনে আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া পরিচালনা করতেই হবে। পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবেদন বাতিল হলে তবেই তাদের ফেরত পাঠানো যেতে পারে।
এবারের আইনে আগের প্রস্তাবনায় থাকা ‘আটক কেন্দ্র’ ধারণা বাতিল করে আলবেনিয়ার অভিবাসী কেন্দ্রগুলোকে ‘ডিপোর্ট সেন্টার’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অভিবাসীরা চাইলে কেন্দ্রের বাইরে চলাফেরা করতে পারলেও তাদের হাতে থাকছে ইলেকট্রনিক ট্র্যাকার ডিভাইস, যাতে তারা নিরুদ্দেশ হতে না পারেন।
নতুন আইন অনুসারে, শুধু আশ্রয় আবেদন ইতোমধ্যে প্রত্যাখ্যাত নয়, বরং চলমান আবেদন প্রক্রিয়াধীন ব্যক্তিদেরও আলবেনিয়ায় পাঠানো যাবে। সেখান থেকে মাত্র সাত কর্মদিবসের মধ্যে তাদের আবেদন নিষ্পত্তি করা হবে।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি জানান, “সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন আইনের বাস্তবায়ন শুরু করবে, যাতে অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও কার্যকর ও সময়োপযোগী হয়।”
এ বিষয়ে ইতালির আইন ও বিচারমন্ত্রী কারলো নর্দিও বলেন, “আস্থা ভোটের মাধ্যমে আইনি বৈধতা পেয়ে ‘আলবেনিয়া ডিক্রি’ এখন বাস্তবায়নের পথে। খুব শিগগিরই পুরো ব্যবস্থাটি কার্যকর হবে।”
তবে আইনটির সমালোচনা করেছেন বিরোধী দল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো। মধ্য-বামপন্থি রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক পার্টির সংসদ সদস্য রাখায়েলে স্কারপা বলেন, “এই আইন পুরোপুরি জোরপূর্বক ও অস্বচ্ছভাবে পাশ করানো হয়েছে। এক বিলিয়ন ইউরো খরচ করে মাত্র ১৫৭ জন অভিবাসীকে স্থানান্তর করে আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক ন্যাক্কারজনক নজির স্থাপন করেছি।”
নতুন আইন অনুসারে, যেসব অভিবাসীর আবেদন ইতোমধ্যে নেগেটিভ হয়ে আপিল বিভাগে আছে, কিংবা যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে, এমনকি যাদের জনশৃঙ্খলা বা নিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচনা করা হচ্ছে—তাদেরও আলবেনিয়ায় পাঠানো যাবে।
নিরাপত্তা সহযোগিতার অংশ হিসেবে আলবেনিয়াকে ইতালি দুটি টহল নৌকা উপহার দিয়েছে এবং কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
ইতালি বর্তমানে যেসব দেশকে নিরাপদ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। এ তালিকায় মোট ২৩টি দেশের নাম রয়েছে।