Published : 18 Jun 2025, 05:54 PM
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দোদুল্যমান পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো যেন ‘পুরনো ভুলে ফিরে না যায়’, সে পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের বাল্টিমোর শহরে ‘দ্য ফিউচার অব ডেমোক্রেসি অ্যান্ড দ্য রোল অব ইনটেরিম গভর্নমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন তিনি।
ইউএস-বাংলাদেশ অ্যাডভোকেসি কাউন্সিলের (ইউবেক) উদ্যোগে এ সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোজেনা বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নির্মাণে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপ না দিয়ে সহযোগিতা করা। এর জন্য সময় দেওয়া প্রয়োজন। আমি মনে করি বাংলাদেশের জনগণ সত্যিকারের বিপ্লব এবং এর সফলতা ছাড়া অন্যকিছু গ্রহণ করবে না।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো আবার তাদের পুরনো ভুলে ফিরে যাক এটা আমি যুক্তিযুক্ত মনে করি না। জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের কাজ হবে তাদেরকে নৈতিক আচরণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পথনির্মাণ, সংস্কার এবং গণতন্ত্রে যাত্রার পথটি সহজ নয়। তবে ইউনূস সেই ব্যক্তি, যিনি বাংলাদেশকে সেই পথে টেনে নিয়ে যেতে পারবেন।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো হাসিনার সরকার নিয়ে মোজেনা বলেন, “আমি কয়েক বছর হাসিনার শাসন দেখেছি। কিন্তু স্বপ্নেও ভাবিনি খুব সহজে এই সরকারের পতন ঘটবে। আমরা দেখেছি তরুণরা কী না করতে পারে। তারা জুলাইয়ে এটা করে দেখিয়েছে। ৫ অগাস্টকে আমরা কখনো ভুলে যাবো না।”
তিনি আরও বলেন, “বিপ্লবের পর কোনো ধরনের বিপর্যয় ঘটেনি, বরং স্থিতিশীল গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা শুরু হয়েছে। আমি যখন ৫ অগাস্টের দিকে তাকাই এবং হেলিকপ্টার দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখি, তখন মনে হয় এটা বাংলাদেশের ইতিহাসের বিস্ময়কর ঘটনা।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক সাবেক রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট।
তিনি বলেন, “গুগল করলে আপনি দেখতে পাবেন, বাংলাদেশ সম্ভাবনা এখন স্বীকৃত। দেশটি শতশত নদী দিয়ে পরিবেষ্টিত। কৃষি ও বনায়নে উন্নয়নে অংশীদারদের সঙ্গে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা প্রশংসনীয়। দেশটি পৃথিবীর অন্যতম চাল এবং পাট উৎপাদনকারী দেশ। বাংলাদেশের কৃষক এবং বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে নিজেরা উপকৃত হচ্ছেন এবং উদ্ভাবনী সুবিধাগুলো বিদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছেন, যার মধ্যে রয়েছে বন্যা সহনশীল শস্য। বঙ্গোপসাগরে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। এছাড়া বাংলাদেশে প্রচুর মৎস্য খামার রয়েছে।”
বার্নিকাট বলেন, “অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তারা এদেশের উন্নয়ন এবং সাফল্যে ভূমিকা রাখছে। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রায়ণে অভিবাসীরা যেমন ভূমিকা রাখছে, ঠিক তেমনিভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রায়ণ এবং বিনিয়োগে তারা ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশা রাখি।”
আয়োজক সংগঠনের সমন্বয়ক সামছুদ্দীন মাহমুদের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী।
রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পথে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে। তার নেতৃত্বে সাংবিধানিক পথ, প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র এবং সব নাগরিকের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে তিনি দেশকে সঠিক রাস্তায় ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছেন।”
সভা পরিচালনা করেন সাফায়াত আহমেদ ও রাইশা ফারিন। স্বাগত বক্তব্য দেন কপিল স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিন অধ্যাপক জামালউদ্দিন।