Published : 27 May 2025, 12:02 PM
বিনামূল্যের সরকারি চাল বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ঝলইশালশিড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ১১ সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
অভিযোগ পাওয়ার পর সোমবার রাতে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা তাদের আটক করে। পরে রাতেই তাদের বোদা থানায় হস্তান্তর করা হয়।
বোদা থানার ওসি আজিম উদ্দীন বলেন, সেনাবাহিনী ১১ জন ইউপি সদস্যদের আটক করে বোদা থানায় হস্তান্তর করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
আটক ইউপি সদস্যরা হলেন- ঝলইশালশিরি ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. খলিলুর রহমান, ২ নম্বর ওয়ার্ডের মো. হামিজ উদ্দিন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রিয় নাথ রায়, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সুনীল চন্দ্র রায়, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. দাহির উদ্দিন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. খাদিমুল ইসলাম, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মামুন ইসলাম, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আশরাফুল ইসলাম, সংরক্ষিত ইউপি সদস্যা ১,২,৩ নম্বর ওয়ার্ডের শেফালী রাণী, ৪,৫,৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিলকিস বেগম এবং ৭,৮,৯ নম্বর ওয়ার্ডের রুপালী বেগম।
পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্থানীয়রা বলছে, সোমবার সকাল থেকে বোদা উপজেলার ঝলইশালশিরি ইউনিয়নের দারিদ্র্যপীড়িত অসহায় নারীদের সাহায্যের জন্য সরকারি ভিডব্লিউবি কার্ডের আওতায় (ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট) ২৫৮টি পরিবারের মাঝে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসের মোট ১৫০ কেজি (প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে) চাল বিতরণ করা হচ্ছিল।
এ সময় উপকারভোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে ৫০০-৬০০ করে টাকা আদায় করছিলেন ইউপি সদস্যরা। প্রতিবাদে পাঁচ শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার নজির, সেনাবাহিনীর একদল সদস্য ও বোদা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। সুবিধাভোগী ও স্থানীয়দের অভিযোগ খতিয়ে দেখেন তারা। পরে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাদের আটক করে সেনাবাহিনী।
সেনাবাহিনী বোদা ক্যাস্পের কমান্ডার আলভি বলেন, বোদা উপজেলায় ভিডব্লিউবির চাল বিতরণে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে ১১ জন ইউপি সদস্যকে আটক এবং তাদের কাছ থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯০০ টাকা জব্দ করা হয়েছে। পরে তাদের বোদা থানায় থানায় হস্তান্তর করা হয়। উপজেলা প্রশাসন ও থানা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
হামিদুল ইসলাম নামে স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, “আমাদের এই ইউনিয়ন পরিষদে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। বর্তমানে ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল হোসেন কারাগারে রয়েছেন। এখন আবার দুর্নীতির অভিযোগে একই সঙ্গে ১১ জন ইউপি সদস্য আটক হলেন।
“তাদের বিচার কার্যক্রম চলা অবস্থায় আমাদের ইউনিয়ন পরিষদে সেবা কার্যক্রম যেন অব্যাহত থাকে, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই।”
ভিডব্লিউবির উপকারভোগী হাসিবুল ও হাফিজুল বলেন, তাদের কাছ থেকে টানা ৫ মাসের চাল দেওয়ার নামে ৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। টাকা না দিলে চাল পাবে না বলে জানিয়েছিল। তাই বাধ্য হয়ে তারা টাকা দিয়েছেন।
বোদা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার নজির বলেন, বিনামূল্যের সরকারি চাল বিতরণে টাকা নিয়ে তারা ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। এ ঘটনার বিচারের মাধ্যমে দেশে একটি অন্যতম নজির স্থাপন করা হবে।