Published : 17 Jun 2025, 04:38 PM
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে স্কুলছাত্রীকে হত্যার পর লাশ ছড়ায় ফেলে দেওয়া হয় বলে দাবি করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় জুনেল মিয়া নামে এক যুবককে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা এ তথ্য জানান।
সোমবার মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার এম.কে.এইচ.জাহাঙ্গীর হোসেনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, জুনেল মিয়ার দেওয়া তথ্য মতে ঘটনাস্থলের আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা ভিকটিমের পরিহিত বোরকা, স্কুল ব্যাগ, বই ও একটি জুতা উদ্ধার করা হয়েছে ।
এর আগে গত ১২ জুন সকালে পাশের গ্রামে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন কুলাউড়ার স্কুলছাত্রী নাফিছা জান্নাত আনজুম (১৫)। এ বিষয়ে কুলাউড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
দুই দিন পর ১৪ জুন বিকালে বাড়ির পাশের ছড়ার দিক থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে নাফিছার ভাই ও মামা তার অর্ধগলিত মরদেহটি খুঁজে পান এবং পুলিশকে খবর দেন।
পরে সেদিন রাতেই পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হয়।
পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নাফিছা জান্নাত আনজুম হত্যায় তার প্রতিবেশী মো. জুনেল মিয়াকে (৩৯) রোববার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেন।
পেশায় কাঠমিস্ত্রি জুনেল মিয়া পাশবর্তী ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের দাউদপুরের জাহির মিয়ার ছেলে। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা জানান, ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য তিনিসহ কুলাউড়া সার্কেলের (অতি. দায়িত্বে) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজমল হোসেন, কুলাউড়া থানার ওসি গোলম আপছার, পুলিশ পুরিদর্শক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যসহ কয়েকটি টিম মাঠে নামে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নোবেল বলেন, “আমরা শুধু স্থানীয় লোকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিশেষ ছয়টি টিম গঠন করি। পরে স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, আলামত উদ্ধারের জায়গা এবং নারী ঘটিত কিছু বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা দেখে সন্দেহ হওয়ায় জুনেল মিয়াকে আটক করি।
“পরবর্তীতে তার মোবাইল চেক করে বিভিন্ন ‘পর্ন সাইটে’ ব্রাউজিংয়ের তথ্য দেখে আমাদের সন্দেহ আরও বাড়ে। পরবর্তীতে আমরা তাকে দুপুর থেকে রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করি। এক পর্যায়ে সে পুলিশ সুপারের সামনে রাত ১২টার দিকে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন তিনি।”
জুনেল মিয়ার বরাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নোবেল বলেন, নাফিছা জুনেল মিয়ার বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে প্রায়ই স্কুল ও প্রাইভেটে আসাযাওয়া করত। সেই সুবাদে জুনেল মিয়া তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করে।
এক পর্যায়ে গত ১২ জুন অনুমান সকাল সাড়ে ১০টার সময় ভিকটিম পাশের গ্রামে প্রাইভেট পড়া শেষে আসামির বাড়ির সামনে দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন।
তখন জুনেল মিয়া ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তার পিছু নেয়। কিন্তু ভিকটিম এড়িয়ে যেতে চাইলে জুনেল তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেন।
এ সময় চিৎকার নাফিছা করলে জুনেল মিয়া তার গলায় চেপে ধরেন। এতে নাফিছা অচেতন হয়ে পড়লে মোকাম সংলগ্ন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়ার পাড়ে ঝোপে তাকে ফেলে রাখে জুনেল।
পরে নাফিছার স্কুল ব্যাগ ও একটি জুতা ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী ঘন ঝোপে ফেলে দেয় এবং বোরকাটি কিরিম শাহ মাজারের উত্তর পাশে একটি পারিবারিক কবরস্থানের ভেতরে ছুড়ে ফেলে। পরে রোববার রাতে বোরখাটি উদ্ধার করে পুলিশ।
কুলাউড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুদীপ্ত শেখর ভট্টাচার্য বলেন, এর আগেও জুনেল মিয়া নারী ও স্কুলগামী মেয়েদের শ্লীলতাহানির ৬-৭টি ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে তাদের তদন্তে উঠে এসেছে।
“প্রায়শই তিনি এলাকার স্কুল-কলেজপড়ুয়া মেয়েদের উত্ত্যক্ত করতেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিক সালিশও হয়েছে।”
জুনেল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ওসি।