Published : 19 Apr 2025, 07:27 PM
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় উপজেলায় বিএনপির এক নেতাকে হাতুড়িপেটার ঘটনায় জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের ৪০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে আহত বিএনপি নেতার ছোট ভাই উল্লাপাড়া পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে জানান উল্লাপাড়া মডেল থানার ওসি রাকিবুল হাসান।
মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- উল্লাপাড়া পৌর জামায়াতের আমীর রফিকুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি আব্দুল বারী, ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা আল আমিন, নুরুল হক এবং আব্দুল মোমিন।
অটোরিকশা স্ট্যান্ডের ইজারার টাকা তোলা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শুক্রবার দুপুরে থানা গেইটের সামনে উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব আজাদ হোসেন আজাদকে হাতুড়িপেটার ঘটনা ঘটে।
ওসি রাকিবুল হাসান বলেন, মামলায় জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের ১৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার রাতে উপজেলার সলপ এলাকা থেকে মামলার প্রধান আসামি পৌর জামায়াতের প্রচার সম্পাদক হাফিজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শনিবার দুপুরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
হামলার প্রতিবাদে বিএনপি ও ছাত্রদলের বিক্ষোভ
আজাদ হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
শনিবার সকালে উল্লাপাড়ায় দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিলটি বের হয়ে উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে শহীদ মিনারে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। সেখানে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা।
এ সময় বিএনপি নেতা সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান, শরাফু উদ্দিন মঞ্জু, পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম মোস্তফা ও সদস্যসচিব নিক্সন কুমার আমিন বক্তব্য দেন।
সমাবেশে বক্তারা বিএনপি নেতা আজাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। সেইসঙ্গে উল্লাপাড়ায় জামায়াতকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তারা।
এ ছাড়া হামলার ঘটনার প্রতিবাদে রোববার সকালে উপজেলা সদরে মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বিএনপি।
হামলার ঘটনার পর থেকে উল্লাপাড়ায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা দফায় দফায় মিছিল-সমাবেশ করলেও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের টিম টহল দিচ্ছে।
জামায়াত নেতার ভিডিও বার্তা
এ পরিস্থিতিতে শনিবার রাতে উল্লাপাড়া উপজেলা জামায়াতের আমীর শাহজাহান আলী একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। এতে তিনি দাবি করেন, “উল্লাপাড়া পৌর বাস টার্মিনালের ইজারার টোল তোলাকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা আজাদ ১৭ এপ্রিল পৌর জামায়াতের প্রচার সম্পাদক হাফিজুল ইসলামকে মারধর করেন।
“এ ঘটনার জের ধরে বিএনপি নেতা আজাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং আজাদের সুস্থতা কামনা করছি। বিষয়টি ব্যক্তিগত, এ ঘটনার সঙ্গে জামায়াতের কেউ জড়িত নয়।
“তবুও আমাদের ভাই হাফিজুলকে পুলিশে সোপর্দ করেছি। অথচ বিএনপির ভাইয়েরা এ ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছেন; যা আমরা কামনা করি না। এ অবস্থায় কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে জামায়াত ইসলামী দায়ী থাকবে না।”
সকলকে ধৈর্য ধারণ করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার অনুরোধ জানিয়েছেন জামায়াত নেতা শাহজাহান আলী।
শুক্রবার দুপুরে বিএনপি নেতা আজাদ উপজেলা মসজিদে জুম্মার নামাজ শেষে থানার গেইটের সামনে কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করছিলেন। এ সময় তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
গুরুতর অবস্থায় প্রথমে তাকে উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে বগুড়ায় নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
বর্তমানে আজাদ ঢাকার শ্যামলীতে বাংলাদেশ স্পেশালাইস্ট হাসপাতালে ভর্তি আছেন। হাতুড়ির আঘাতে তার মাথার দুটি স্থানে জখম হয়েছে।
শনিবার বিকালে আজাদের মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জে বিএনপি নেতাকে হাতুড়িপেটা, অভিযোগ জামায়াতের বিরুদ্ধে