Published : 11 May 2025, 01:44 PM
প্রচণ্ড গরমে নওগাঁয় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তীব্র রোদের কারণে সাধারণ ও কর্মজীবী মানুষের ভোগান্তি আর কষ্ট বেড়েছে। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ।
বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার জেলায় ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। নওগাঁয় গত চারদিন ধরে তীব্র তাপদাহ চলছে।
তাপদাহের কারণে মাঠে, কল-কারখানায় কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া লোকজনের কাজ করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। গরমের মধ্যে স্কুলে যেতে নাভিশ্বাস উঠছে শিক্ষার্থীদের। ক্ষতির মুখে পড়েছে আম ও লিচু। পানি স্প্রে করে আম রক্ষার চেষ্টা করছেন চাষিরা। তীব্র গরমে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালে।
নওগাঁ সড়ক উন্নয়ন কাজের শ্রমিক শিপলু খান বলেন, “দিনের বেলা সড়কে দাঁড়িয়ে কাজ করা খুবই কষ্ট। তীব্র তাপাদাহ ও গরমে রাস্তার পিচ গলে যাচ্ছে। আমাদের শরীর জ্বলতাছে।”
নওগাঁ সদরের বোয়ালিয়া এলাকার কৃষক আজিজার রহমান বলেন, “গরমে কৃষি শ্রমিকরা মাঠে ঠিকমতো ধান কাটা-মাড়াই করছে পারছেনা। এক ঘণ্টা কাজের পর আধা ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হচ্ছে তাদের। এ কারণে কাটা-মাড়াই দেরি হওয়ার পাশাপাশি শ্রমিক মজুরিও মাথাপিছু দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা বেড়েছে। বাড়ির কৃষানিরা ছাতা নিয়ে ধান সিদ্ধ ও ধান শুকানোর কাজ করছেন।”
মহাদেবপুর উপজেলার উত্তর গ্রামের আজাদুল ইসলাম বলছিলেন, “গরমের জ্বালায় তো রাতের ঘুম ও হারাম হয়ে গেছে। ফুল স্পিডে ফ্যান চালায়ও শরীর ঠান্ডা হচ্ছে না। বিভিন্ন বয়সের মানুষ নানা অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে।”
জেলার সাপাহার সদরের বাসিন্দা বাবুল আখতার ও মুনিরুল ইসলাম বলেন, “এমনিতেই এ বছর খড়ার কারণে আম ঝরে যাওয়ায় উৎপাদন অনেকটা কম হবে। তারওপর গত ৪-৫ দিন ধরে ফের তাপদাহের কারণে গাছ থেকে আম ঝরে পড়ছে। ফলে জেলার আমচাষি ও বাগান মালিকরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।”
নওগাঁ শহরের রিকশা চালক ইয়াছিন আলী বলেন, “রাস্তা থেকে যেন আগুন তাপ ছড়াচ্ছে। ঠিকমত রিকশা চালাতে পারতাছি না। ঘন ঘন পানি খাই। শহরে লোকজন না থাকায় ভাড়াও কইমা গেছে। এ অবস্থায় সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়ছে।”
এদিকে তীব্র তাপদাহ থেকে বাঁচাতে গরু, ছাগলসহ অন্যান্য পশুকে পুকুর, ডোবা ও নদীতে গোসল করাচ্ছেন মালিকরা। কুকুরসহ অন্যান্য পশু পাখিদেরও পানিতে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “তীব্র তাপদাহের কারণে আম ঝরে পড়া রোধে গাছে পানি স্প্রে করতে হবে। সম্ভব হলে গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে।”
নওগাঁ সদর জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রাশেদুল হক বলছেন, “তীব্র দাবদাহের কারণে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।”
এ অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়া, ছায়াযুক্ত স্থানে অবস্থান করা ও বেশি করে খাবার স্যালাইন মিশ্রিত পানি পান করার পরাপর্শ দিয়েছেন তিনি।