Published : 13 May 2025, 04:14 PM
খুলনার দাকোপ উপজেলায় খালের ইজারাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে ঘটনা মামলা হয়েছে। এ ছাড়া উভয়পক্ষের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে দাকোপ উপজেলা ও চালনা পৌরসভা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পাশাপাশি এক নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে জেলা কমিটি।
সাময়িক বহিষ্কার হওয়া মোজাফফর হোসেন চালনা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ছিলেন। তবে গ্রেপ্তারদের নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
এর আগে সোমবার বিকালে বিএনপির দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত নয়জন আহত হন বলে জানান খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) মফিজুর রহমান।
এ ঘটনায় আহত দাকোপ থানার এএসআই আজাহার উদ্দিনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মঙ্গলবার ভোরে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
আহত অন্য দুই পুলিশ সদস্য হলেন- এসআই মনোয়ার তালুকদার এবং পুলিশ সদস্য শুভ চৌধুরী বিশ্বাস। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ ছাড়া বিএনপির উভয়পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে ইব্রাহীম বিশ্বাস, সোহেল সরদার, বাচ্চু ফকির, মিজানুর রহমান, মাহাবুর শেখ এবং রতন রায় আহত হয়েছেন। তারা স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দাকোপ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের বাজুয়া ইউনিয়নের ডাকাতিয়া বিল ও খলিশা খালের ইজারাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। সোমবার দুপুরে ভূমি অফিসে উভয়পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, দাকোপ উপজেলা বিএনপিতে বর্তমানে দুটি পক্ষ। একটি পক্ষের নেতৃত্বে আছেন চালনা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মোজাফফর হোসেন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অসিত কুমার সাহা এবং সদস্যসচিব আবদুল মান্নান খান।
অপরপক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন খুলনা জেলা বিএনপি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শাকিল আহমেদ দিলু, চালনা পৌর বিএনপির সদস্যসচিব আল আমিন সানা এবং যুগ্ম আহ্বায়ক আইয়ুব আলী কাজী।
এ বিষয়ে চালনা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মোজাফফর হোসেন বলেন, “দিলু স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করছেন। তার ভাই পানখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা। আওয়ামী লীগের কিছু লোক আমাদের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন।”
অভিযোগ অস্বীকার করে শাকিল আহমেদ দিলু বলেন, “সোমবার দুপুরের দিকে দলীয় কার্যালয়ের সামনেই এক দফা মারামারি হয়। আমরা যতটুকু সম্ভব ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলাম।
“বিকালে বাজুয়া এস এন কলেজ থেকে যখন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা চালনায় ফিরছিলেন, তখন মোজাফফর হোসেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই দলবল নিয়ে ব্যারিকেড দেন। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের খোরশেদ মেম্বারের লোকজন ছিল। এক পর্যায়ে সেখানে মারামারি শুরু হয়।”
সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে ইটের আঘাতে এএসআই আজাহার উদ্দিনসহ তিন পুলিশ সদস্য ও বিএনপির উভয়পক্ষের ছয়জন আহত হন।
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, “এ ঘটনার পর দাকোপ উপজেলা ও চালনা পৌরসভা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপির চালনা পৌর আহ্বায়ক মোজাফফর হোসেনকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া চালনা পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আইয়ুব আলী কাজীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
খাল ইজারার বিষয়ে দাকোপ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জুবায়ের জাহাঙ্গীর বলেন, “সোমবার উপজেলার সব খাস খালের উন্মুক্ত ডাক ছিল। এর মধ্যে ডাকাতিয়া খালের ইজারাকে করে ঘটা সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে।”
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মফিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।