Published : 06 Jun 2025, 01:15 PM
সাত-সকালে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় লরি বিকল হয়ে পড়লে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে লেগে যায় যানজট; ঘণ্টাখানেক পর লরিটি সরিয়ে নেওয়া হলেও যানজট সরেনি তার পরের এক ঘণ্টাতেও।
শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে ভোগড়া বাইপাস মোড় ও চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় দেখা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে যানবাহন। বাসের ভেতরে গরমে অতিষ্ঠ যাত্রীরা বাস থেকে নেমে সড়কের পাশে দাঁড়ান। সামনে দিকে যানবাহনের সারির দিকে তাকাচ্ছিলেন। অপেক্ষা করছিলেন কখন গাড়ির চাকা নড়ে।
পরিবারের সঙ্গে কোরবানির ঈদ উদযাপনে এমন ভোগান্তি আর বিড়ম্বনার মধ্যে বাড়ি ফিরছে মানুষ। কদিন আগ থেকেই ঈদযাত্রা শুরু হলেও শেষ দিন শুক্রবার দেখা গেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে উপচেপড়া ভিড়। একটু পরপর যানজট আর থেমে থেমে চলছে যানবাহন।
নেত্রকোণাগামী নেত্র পরিবহনের যাত্রী আবুল কালাম ৫ বছরের সন্তান নিয়ে ভোর ৪টার দিকে রওনা দেন। সকাল ৭টার দিকে তারা গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড়ে যানজটে পড়েন।
কালাম বলেন, চল্লিশ মিনিট ধরে বাস থেমে রয়েছে। শিশুসন্তান গরমে অতিষ্ঠ হয়ে কান্নাকাটি শুরু করলে বাস থেকে নেমে সড়কের পাশে দাঁড়ান।
ঢাকার হৃদরোগ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে ফিরছিলেন আহমদ আলী। সকালে গাজীপুরের ভোগড়া ফ্লাইওভারে যানজটে আটকা পড়েন। টানা চল্লিশ মিনিট একই জায়গায় আটকে থাকেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এ ভোগান্তি থেকে কবে রক্ষা পাব। দীর্ঘক্ষণ গরমের মধ্যে আটকা পড়ে রোগীও অসুস্থ হয়ে উঠেছে।”
ময়মনসিংহ থেকে পিকআপে মুরগি নিয়ে ঢাকায় আসছিলেন ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন। তিনি বলেন, সকালে গাজীপুরের চৌরাস্তা এলাকায় পৌঁছানোর চার কিলোমিটার আগে থেকেই যানজটে পড়েন। এরইমধ্যে তার ৬০টির মত মুরগি মারা গেছে। বৃহস্পতিবারও একই কারণে তার ৮০টি মুরগি মারা যায়।
অপরদিকে শুক্রবার সকালে টঙ্গীর স্টেশন রোডের উত্তরে চেরাগ আলী এলাকার পর থেকে চান্দনা চৌরাস্তার তেলিপাড়া পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার জুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় মোটরসাইকেল চালকরাও যাত্রী পরিবহন করছেন। তাদের একজন জনি বলেন, “বৃহস্পতিবার যানজটের মধ্যেও যাত্রী নিয়ে চলা গেছে। কিন্তু শুক্রবার সকালে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় খালি দেহ নিয়ে পার হওয়ার মত অবস্থা নেই।”
কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক থেকে চন্দ্রা মোড় পর্যন্তও যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। শুক্রবার ভোর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়ে অপেক্ষা করেন ঘরমুখো মানুষেরা। যে যেভাবে পারেন, ট্রাক কিংবা পিকআপে চড়ে গন্তব্যের পথে ছোটেন।
কালিয়াকৈরের পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় পোশাক শ্রমিক অনোয়ার হোসেন বলেন, “শুক্রবার সকালে গ্রামের বাড়ি বগুড়ায় যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় চন্দ্রায় যাই৷ সেখানে গিয়ে দেখি হাজার হাজার যাত্রী। কোনো বাস, গাড়ি খালি নেই। কখন বাস পাব আর কখন বাড়ি পৌঁছাব জানি না।”
রংপুর থেকে ছেড়ে আসা একটি বাসের চালক আবুল কাশেম বলেন, বৃহস্পতিবার যেসব বাস গাজীপুর থেকে ছেড়ে উত্তরাঞ্চলে গিয়েছিল, সেগুলো কালিয়াকৈর-চন্দ্রা মোড়, টাঙ্গাইল ও যমুনা সেতুর উভয় প্রান্তে ব্যাপক যানজটের কবলে পড়ে। ফলে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি লেগেছে গন্তব্যে যেতে। আর যাত্রী নামিয়ে বাসগুলোর গাজীপুরে ফিরতেও অনেক সময় লেগেছে।
শুক্রবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের (দক্ষিণ) সহকারী পুলিশ কমিশনার এ কে এম আসাদুজ্জামান বলেন, গাজীপুর চৌরাস্তা ও আশেপাশের এলাকায় এখনও গাড়ির চাপ রয়েছে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে কমে আসতে পারে।
গাজীপুর মহানগরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
নাওজোর হাইওয়ে পুলিশের ওসি সওগাতুল আলম বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকারখানা ছুটির পর বিকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মৌচাক, চন্দ্রা মোড় ও সফিপুর এলাকায় যাত্রীদের ঢল নামে। শুক্রবার সকালেও একই অবস্থা চলছে। মহাসড়কে যানবাহনের চাপ রয়েছে।
সকাল থেকেই গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তায় যাত্রীদের ভিড় থাকায় যানবাহনের চাপ ও ধীরগতির তথ্য দেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম।