Published : 20 May 2025, 03:53 PM
নরসিংদীর সুটুরিয়া ফজলুল হক খান দাখিল মাদ্রাসায় খাতা কলমে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখানো হলেও প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ১৮ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এই শিক্ষার্থীদের জন্য মাদ্রাসাটিতে রয়েছেন ২০ জন শিক্ষক ও পাঁচজন কর্মচারী।
দীর্ঘদিন ধরে বেলাব উপজেলার পাটুলী ইউনিয়নের এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর চেয়ে দেড়গুনের বেশি শিক্ষক নিয়ে কার্যক্রম চললেও বাস্তবে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। বরং এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতনরা অবগত আছেন বলে দাবি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের।
তবে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল করিম বলেন, কারও গাফিলতি পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৯৮৭ সালে সুটুরিয়া ফজলুল হক খান দাখিল মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইবতেদায়ি থেকে দাখিল শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চলা মাদ্রাসাটিতে বর্তমানে ২০ জন শিক্ষক ও পাঁচজন কর্মচারী আছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি থাকলেও দিন দিন তা কমেছে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে মাদ্রাসাটিতে শিক্ষার্থী উপস্থিতির সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ জন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি দেখানোর জন্য পার্শ্ববর্তী মাদ্রাসা ও এতিমখানাসহ বিভিন্ন হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এখানে ভর্তি দেখানো হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মাদ্রাসা পরিদর্শনে গেলে আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থী এনে শ্রেণিকক্ষে বসিয়ে রাখা হয়।
এছাড়া সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বিকাল ৪টা পর্যন্ত পাঠদানের সময়সূচি থাকলেও প্রায়ই দুপুর ২টা কিংবা ৩টার মধ্যে প্রতিষ্ঠান ছুটি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ আছে।
রোববার সরেজমিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে দেখা গেছে- অফিস কক্ষের বারান্দায় বসে গল্প করছেন শিক্ষকরা।
তৃতীয় শ্রেণির কক্ষে তিনজন; চতুর্থ, পঞ্চম, অষ্টম ও দশম শ্রেণিতে দুইজন করে এবং নবম শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। সপ্তম শ্রেণিতে দেখা মিলেছে সব্বোচ্চ ছয় শিক্ষার্থীর।
অন্যদিকে প্রথম, দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণির কক্ষগুলি ছিল পুরোই ফাঁকা, সেখানে কোনো শিক্ষার্থীরই দেখা মেলেনি।
অর্থাৎ পুরো মাদ্রাসায় মোট ১৮ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। সেইসঙ্গে শিক্ষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ১৭ জন।
এ সময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে তাড়াহুড়ো করে পাঠদানে ব্যস্ত হয়ে পড়েন শিক্ষকরা। পরে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে অনীহা দেখান প্রতিষ্ঠানের সুপারসহ অন্য শিক্ষকরা।
মাদ্রাসা সুপার মো. সিদ্দিকুর রহমানের দাবি, প্রতিদিন শিক্ষকরা উপস্থিত থাকেন। প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাও দেড় শতাধিক বলে দাবি করেন তিনি।
মাদ্রাসাটির এলাকার কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তারাও মাদ্রাসাটিতে না পড়ে দূরের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে।
বাড়ির পাশে প্রতিষ্ঠানে না পড়ে পড়ার কারণ জানতে চাইলে এক শিক্ষার্থী বলে, এই মাদ্রাসায় নিয়মিত ক্লাস হয় না। শিক্ষকরা ক্লাস না করে বাইরে বসে থাকেন। বিকাল ৪টার আগেই ছুটি দিয়ে দেয়।
নাম না প্রকাশের শর্তে মাদ্রাসার সাবেক এক শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষকরা সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ছুটিতে থাকেন। যার কারণে পাঠদান ব্যাহত হয়।
সুটরিয়া গ্রামের রাজু মিয়া বলেন, “মাদ্রাসাটিতে আগের তুলনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বর্তমানে খুবই কম। মাঝেমধ্যে দুপুরের পরপর ছুটি দেওয়া হয়।”
এদিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পাঠদানে গাফিলতি ও আগেই ছুটি দেওয়ার বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি মাদ্রাসাটির কোনো শিক্ষক ও কর্মচারী।
মাদ্রাসার সুপার সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “এসব বিষয়ে কথা বলতে বাধ্য নন তিনি। প্রতিষ্ঠানের সব সমস্যার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন।”
১৫ বছর ধরে মাদ্রাসাটিতে সুপারের দায়িত্বে থাকা সিদ্দিকুর কথা বলার এক পর্যায়ে নিজেকে সাংবাদিক বলেও পরিচয় দেন।
এসব বিষয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, “আগেও ওই মাদ্রাসার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। এখানে কারও কোনো গাফিলতি আছে কি-না তা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নরসিংদী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ এস এম আব্দুল খালেক বলেন, “আমি কয়েকদিন আগে এখানে যোগদান করেছি। তাই মাদ্রাসাটি সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত অবগত নই। তবে শিগগির সরেজমিনে মাদ্রাসাটি পরিদর্শন করে অনিয়ম পাওয়া গেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”