Published : 08 Jun 2025, 07:26 PM
আগাম বন্যার পানিতে থৈ থৈ করছে চলনবিল। আর এতে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, ও তাড়াশ উপজেলায় শত শত বিঘা জমির কাঁচা-পাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
কোথাও হাঁটুপানি, আবার কোথাও কোমর পানিতে নেমে ধান কাটছে কৃষক। নৌকা, কলার ভেলা ও পলিথিন দিয়ে তৈরি বিশেষ নৌকায় করে এসব ধান ঘরে তুলতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট।
রোববার বিকালে সিরাজগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসান শহীদ সরকার বলেন, “কৃষকরা নৌকা নিয়ে ও পানিতে নেমে ধান কাটার চেষ্টা করছেন। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে পানি নেমে গেলে কৃষক কম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”
কৃষকরা বলছেন, কিছু এলাকা ডুবে যাওয়া ধান কোনোভাবেই কাটা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া যমুনাসহ অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলার চরাঞ্চল ও নিচু এলাকাগুলোতেও বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে।
উজানে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর ভারি বর্ষণে শাহজাদপুর উপজেলার নন্দলালপুর এলাকায় হুরাসাগর নদীতে হঠাৎ পানি বেড়ে নিমাইগাড়া বিলের প্রায় ১০০ হেক্টর জমির পাকা ও আধা পাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এ অঞ্চলের কৃষকরা বিলের মুখে বাঁধ নির্মাণের দাবি করলেও কেউ তা শোনেননি বলে অভিযোগ কৃষকদের।
উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের নন্দলালপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম রওশন বলেন, “এবার ধান ভালো হওয়ায় ফলনও ভালোর আশা করেছিলাম। আট বিঘা জমিতে লাগানো প্রায় সব ধান পেকে গেছে। ঈদের তিন দিন আগে এলাকায় হঠাৎ বন্যার পানি ঢুকে সব ধান তলিয়ে গেছে।”
একই এলাকার কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, “১০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। কিন্তু ধান পাকার আগেই পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন সারা বছর কীভাবে সংসার চলবে চিন্তা করতে পারছি না।”
শাহজাদপুর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার হোসেন বলেন, হঠাৎ আগাম বন্যার পানি ঢুকে নিমাইপাড়া বিলের আধাপাকা ধান ডুবে গেছে। এতে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। আগামী বছর বিলের প্রবেশ মুখে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এদিকে তাড়াশ উপজেলার হামকুড়িয়া গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, “সরিষা আবাদ করার পর ব্রি-২৯ জাতের ধান লাগাই। এই কারণে ধান পাকতে সময় লাগে। টানা বৃষ্টি আর আগাম বন্যার পানিতে ধান ডুবে যাচ্ছে।
“১০ বিঘার মধ্যে পাঁচ বিঘা জমির ধান কেটেছি। বাকিগুলো এখনো কাটতে পারিনি। ধানের জমিগুলো পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। বিঘা প্রতি সাত থেকে আট হাজার টাকা মজুরি দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলন ভাল হলেও এবার লোকসান গুণতে হবে।”
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ইতিমধ্যে ৯৩ ভাগ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। বৈরী আবহাওয়া ও পানি প্রবেশ করায় বিলের নিম্নাঞ্চলে নাবি জাতের ধান কাটা নিয়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব ধান কাটা শেষ হবে বলে জানান তিনি।
সিরাজগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসান শহীদ সরকার বলেন, শাহজাদপুরে ৬০ বিঘা জমির ধান একটু বেশি পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে তাড়াশ ও উল্লাপাড়ায় এলাকায় তুলনামূলক পানি কম। পানিতে নেমে ধান কাটার চেষ্টা করছেন কৃষক। তবে মজুরি একটু বেশি লাগছে।
কয়েকদিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে কৃষকরা কম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে আশা এই কৃষি কর্মকর্তা।
বোরো ধান ছাড়াও চরাঞ্চল ও যমুনা নদী তীরবর্তী নিচু জমিতে লাগানো কাউন ও তিল পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানান তিনি।