Published : 11 Jun 2025, 06:12 PM
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে চুরির অভিযোগে এক নারীর চুল কেটে দেওয়া ও বাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে ওই নারী বাদি হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কুমারখালী থানায় মামলা করেছেন।
এর আগে সোমবার রাত ৮টার দিকে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুরে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারনামীয় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে করা হয়েছে বলে কুমারখালী থানার ওসি (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম জানান।
এ ঘটনায় নির্যাতিত নারী বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন-কুমারখালীর শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন, মোমিনের স্ত্রী পারভিন খাতুন ও বক্করের স্ত্রী লিপি খাতুন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মাংস চুরির অভিযোগে স্থানীয় নজরুল, কাশেম, রিপনের নেতৃত্বে কয়েকশ নারী-পুরুষ সোমবার রাত ৮টার দিকে ওই বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে এবং ওই নারীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে রিপনের বাড়িতে নিয়ে তাকে আবারও ব্যাপক মারধর করে মাথার চুল কেটে দেয়।
পরে সেখানে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শাহ আলমের নেতৃত্বে সালিশ বসানো হয়। মাংস চুরির জরিমানা হিসেবে ওই নারীর দুটা গরু, একটা ছাগল ও স্বর্ণালংকারের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওই নারীকে চিকিৎসাধীন দেখা গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা (আরএমও) শামীমা আক্তার
বলেন, “ওই নারীর শরীরের একাধিক স্থানে গুরুতর রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে এবং মাথার চুল কাটা।”
নির্যাতনের শিকার নারীর অভিযোগ, সোমবার বিকালে প্রতিবেশী রিপন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রিপনকে ডাকতে ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন মাংস চুরির অপবাদ দিয়ে তাকে বেঁধে রাখে। তারপর কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেয়।
“এরপর রাতে গ্রামের লোকজন নিয়ে রিপন আমাকে বাড়ি থেকে তুলে এনে গাছে বেঁধে মারধর করে। এ সময় রিপনের স্ত্রী মুক্তি ও পারভিন আমার চুল কেটে দেয়।”
তিনি বলেন, “তারা বাড়িতে ভাঙচুর করেছে ও গরু-ছাগল, স্বর্ণালংকারসহ মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে। ভয়ে আমার স্বামী পালিয়েছেন। আমি এর বিচার চাই।”
সরেজমিনে দেখা যায়, রিপনের বাড়িতে দড়ি ও কাটা চুলের অংশ পড়ে আছে। আর রিনার ঘরের দরজায় তালা লাগানো। ভেতরে আসবাবপত্র ভাঙচুর। গোয়ালঘরে নেই গরু-ছাগল।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রিপন বলেনন, তার ঘর থেকে টাকা চুরি করে পালানোর সময় ওই নারী হাতেনাতে ধরা পড়ে। তিনি এর আগেও এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করেছে। সেই রাগেই লোকজন তাকে ধরে মারধর করে চুল কেটে দিয়েছে।
রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন স্বীকার করে বলেন, “আমি শুধু দড়ি দিয়ে বেঁধে শুধু একটা চর থাপ্পর মারিচি। কিন্তু চুল কাটেচে কারা তা আমি দেখিনি।”
ঘটনায় অভিযোগের মুখে থাকা কাশেমের দাবি, ওই নারী এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করে। সেই ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওইদিন রাতেই সালিশে নেওয়া সিদ্ধান্তে তার গরু-ছাগল নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ সব বিষয়ে মেম্বরের সঙ্গে কথা বল্লিই সব জানা যাবি।
তবে ওই নারীর বাড়ি থেকে গরু-ছাগল নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন ইউপি সদস্য মো. শাহ আলম।
তিনি বলেন, “আমি ঘটনাস্থল থেকে শুধু ওই নারীকে উদ্ধার করে তার স্বজনদের হাতে তুলে দিয়েছি। পরে আর কি ঘটেছে তা আমার জানা নেই। এভাবে আইন হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি।”
কুমারখালী থানার ওসি সোলাইমান শেখ বলেন, “চুরির অভিযোগে এক নারীর চুল কেটে দেওয়া ও মারধরের ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত সংগ্রহসহ তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
“এ ঘটনায় বাদির দেওয়া এজাহারনামীয় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।”