Published : 03 Jun 2025, 11:08 PM
যশোরের অভয়নগরের বাড়েদাপাড়ায় কৃষকদল নেতা তরিকুল হত্যার জেরে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঢাকার বিভিন্ন মানবাধিকার দলের কর্মীরা।
মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে তারা ওই গ্রামে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন ও তাদের প্রতি সমবেদনা জানান।
মাছের ঘের সংক্রান্ত কাজে গত ২২ মে বিকালে উপজেলার বাড়েদাপাড়ায় পিল্টু বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়ে খুন হন অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌর কৃষকদলের সভাপতি তরিকুল ইসলাম।
এর জের ধরে শতাধিক লোক মোটরসাইকেলে এসে বাড়েদাপাড়ার মতুয়া সম্প্রদায়ের ২০টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। এছাড়া ওইদিন ছিল স্থানীয় মহিতোষ বিশ্বাসের বাড়িতে মতুয়াযজ্ঞ। হামলাকারীরা সেখানে গিয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেন। এতে নিঃস্ব হয়েছে ১৩টি পরিবার।
এ ঘটনায় বাড়েদাপাড়ার বাসিন্দা সুকান্ত বিশ্বাসের স্ত্রী কল্পনা বিশ্বাস সোমবার অজ্ঞাত পরিচয় ১৫০ জনকে আসামি করে অভয়নগর থানায় মামলা করেন। অন্যদিকে, কৃষকদল নেতা তরিকুল হত্যায়ও মামলা হয়েছে।
ঘট্নার ১২ দিন পর গ্রামটিতে যান ঢাকার বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা। প্রতিনিধি দলে ছিলেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, নাগরিক ঐক্য পরিষদের সভানেত্রী সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি দীপক শীল, মানবাধিকার কর্মী দীপায়ন খীসা, আইপি নিউজের নির্বাহী সম্পাদক সতেজ চাকমা।
এসময় রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, “আমরা নাগরিক প্রতিনিধি দল যেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। তারই অংশ হিসেবে আসছি এখানে। মানবাধিকার কর্মীরা আছেন, আমাদের সঙ্গে এনজিও প্রতিনিধি আছেন। আমরা যেটা দেখলাম, প্রথমেই বিএনপির নেতা তরিকুল ইসলাম সাহেব, যিনি নিহত হয়েছেন নৃশংসভাবে। সেটার নিন্দা জানাই।
“কেননা, ওইটাই সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে এবং যারা সত্যিকারের আসামি তাদের ধরতে হবে।”
যিনি নিহত হয়েছেন, তার ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, “তারা বিশ্বাস করেন, এই যে যাদের বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে, ওরা খুব নিরীহ। এরা এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত না। হত্যা মামলায় যে আসামি ধরা হয়েছে, তারা মনে করছেন, এরা সত্যিকারের আসামি না। কাজেই ঘটনায় যারা সত্যিকারের জড়িত তাদের ধরতে হবে এবং বিচারের আওতায় আনতে হবে।
“দ্বিতীয়ত এই যেভাবে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মানুষের স্বপ্ন দেখলাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একজন নারীর সাথে কথা বললাম, তার সেলাই মেশিন যেটা দিয়ে, সে জীবিকা অর্জন করে, তারা বাচ্চা ছোট, গান শিখে তার শখ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কারও ধান ছিল, ধানটাকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে বসবাস করার যে একটা জোর সেটা মানসিকভাবে তারা হারিয়ে ফেলেছে। তাদের মধ্যে আছে ট্রমার মধ্যে আছে।”
নাগরিক অধিকারের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন, “এই ঘটনাগুলো, যে ঘটনাগুলো বাংলাদেশে ক্রমাগত ঘটছে, আমরা বলি মব। একটা ঘটনা ঘটে, সেখানে বৃহত্তর আর একটা গ্রুপ এসে আর একটা নিরীহ জনসাধারণের ওপরে একটা অত্যাচার করে। আমরা যিনি মারা গেছেন (তরিকুল ইসলাম) তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।”
ওই মানবাধিকার সংগঠনের প্রধান নির্বাহী বলেন, “হত্যা মামলায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, এখানে কথা বলে জানতে পারি, তারা মূল না, সব সময় পুলিশ প্রশাসন যেটা করে- সেটা প্রথমে একটা আই ওয়াশ করার জন্য কিছু মানুষকে গ্রেপ্তার করে এবং সেই গণগ্রেপ্তারের মত একটা পরোয়ানা এখানে হয়েছে। এইটা একটা চলমান ধারা, থানাকে কিছু করতে হয়, কিছু পারফরমেন্স দেখাতে হয়।
“কিন্তু আমাদের ধারণা হয়েছে, দুই ধরনের আসামি এখানে, যিনি খুন হয়েছেন, তাকে কারা খুন করেছে, এটা একটা অপরাধ করেছে এবং ওই সুযোগে কারা এই নিরীহ সংখ্যালঘু ভাইদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। আর এমনই পোড়াল যে আর কিছুই থাকল না।”
তিনি বলেন, “আমরা সার্বিক ক্ষতির হিসাব চাই এবং পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসন তাদের করতে হবে এবং যে ঘর পুড়েছে সে ঘর তাদের তৈরি করে দিতে হবে। এবং প্রতিটা আসামি ধরতে হবে।”
জাকির হোসেনের ভাষ্য, “আমরা ঢাকায় দু-এক জন উপদেষ্টাকে বলেছি। তারা বলেছেন, ‘আপনারা গিয়ে যা পাবেন, সেই প্রকৃত রিপোর্টটা আমাদের কাছে হাজির করেন’। কিন্তু আমাদের কাছে অনেক ধরনের রিপোর্ট আছে, কোনটা সত্য, আমরা বুঝতে পারছি না। আমরা তাদের সব কথা বলার চেষ্টা করবো, যেটা আমরা জেনেছি।”
ডহরমশিহাটী গ্রামের বাড়েদাপাড়ার পরিবেশ এখনও ভারি হয়ে আছে। মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পোড়া ঘর বাঁশ-খুঁটি দিয়ে মেরামতের চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান টাকা, খাদ্যসামগ্রী ও ব্যবহার্য বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করছে।”
ক্ষতির শিকার পরিতোষ বিশ্বাস বলেন, “সম্প্রতি সেনাবাহিনীর একটি দল এসে তাদের কার কী ক্ষতি হয়েছে, তার বিবরণ নিয়ে গেছে।”
দুই ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলায় তিনজন ও অগ্নিকাণ্ডের মামলায় দুইজন আটক হয়েছেন বলে জানান অভয়নগর থানার এসআই অনিষ বিশ্বাস।
আরো পড়ুন: