Published : 03 Jun 2025, 06:41 PM
দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসবের ঈদুল আজহা। লালমনিরহাটের কামার পল্লীগুলোতে পুড়ছে কয়লা; জ্বলছে লোহা।
কোরবানির পশু জবাই ও মাংস প্রস্তুতের জন্য ছুরি, চাপাতি, বঁটি, দা তৈরি করতে দিনরাত খাটছেন জেলার কামাররা।
আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের শালমারা কামারপাড়ায় প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার প্রজন্ম ধরে কামারের কাজ করেন। সারা বছর কাজ কম থাকলেও কোরবানি ঈদের আগ মুহূর্তে জমজমাট হয়ে ওঠে তাদের কর্মযজ্ঞ।
ওই এলাকার কামার আল-আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বছরের অন্য সময় দিনে দুই-তিনটা ছুরি-বঁটি তৈরি করি। কিন্তু এখন প্রতিদিন ১৫-২০টি তৈরি করছি। পরিবারের সবাই মিলে কাজ করছি। গত বছর কেবল ঈদের আগের দুই সপ্তাহে প্রায় ৫০ হাজার টাকার বিক্রি হয়েছিল।”
চুলার আগুনে গরম লোহা পিটিয়ে ছুরি-চাপাতি তৈরির দৃশ্য এখন প্রতিটি কামারপল্লীতে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন তারা। কেউ বিভিন্ন ধরনের চাপাতি, ছুরি, বটি ও চাকু তৈরি রছেন। কেউ স্থানীয় বাজারে ও জেলার বাইরে এসব বিক্রি করছেন।
আদিতমারীর কুমড়ীরহাট হাটের বিক্রেতা মোকছেদুল মমিন (৪২) বলছিলেন, “পাইকারি দরে কামারদের কাছ থেকে কিনে বিভিন্ন হাটে বিক্রি করি। এ বছর বড় ছুরি বিক্রি করছি ৭০০ টাকা, চাপাতি ৮০০, মাঝারি ছুরি ৫০০, ছোট ছুরি ২০০ আর বঁটি ৬০০ টাকায়।”
তবে এ বছর অন্যান্য জেলার পাইকারদের আগমন কিছুটা কম, ফলে বিক্রি কিছুটা কম হতে পারে বলে আশঙ্কা কামারদের।
তারা বলছেন, সারা বছর আয় সীমিত হলেও ঈদুল আজহাকে ঘিরে যে বেচাকেনা হয়, তা দিয়েই বছরের একটা বড় অংশের সংসার খরচ চলে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে কর্মব্যস্ততা।
ভেলাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া রিপন বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের শালমারা কামারপাড়ার পরিবারগুলো এই পেশার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু তাদেরকে এ সরকারি ভাবে তেমন কোনো পৃষ্ঠপোষকতা কখনোই করা হয়নি। তারা সরকারি সহায়তা পেলে এই শিল্পটি দীর্ঘদিন ধরে টিকে থাকতো।”
ভেলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলী বলেন, “সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই শিল্প টিকিয়ে রাখা যাবে। না হলে এই শিল্প আস্তে আস্তে হারিয়ে যাবে। এ অবস্থায় কামার শিল্পে জড়িতদের সহায়তা দেওয়ার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করি।”