Published : 18 Jun 2025, 04:59 PM
গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একটি হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে দুইদিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
বুধবার সকালে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মাঈনুদ্দিন কাদির এ আদেশ দেন বলে জানান আদালত পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান।
তিনি বলেন, একই দিন ফতুল্লা থানার আরেকটি হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় আইভীকে ‘শ্যোন অ্যারেস্ট’ দেখাতে পুলিশের আবেদন মঞ্জুর করেছে আদালত। ওই মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন আবেদন করলে শুনানি শেষে তা নামঞ্জুর করে দেন বিচারক।
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে ভার্চুয়ালি শুনানিতে যুক্ত ছিলেন সেলিনা হায়াৎ আইভী।
এর আগেও আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া পোশাক শ্রমিক মিনারুল ইসলাম হত্যা মামলায় তাকে দুইদিনের রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২০ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান জুতা কারখানার শ্রমিক সজল মিয়া। ২০ বছর বয়সী সজলের মৃত্যুর প্রায় ১০ মাস পর গত ১৬ মে নিহতের মা রুনা বেগম সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ওই মামলায় ৬২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলার আসামি আইভীও।
কাইউম খান বলেন, পুলিশ এ হত্যা মামলাটিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিল।
এদিকে, গত বছরের ১৯ জুলাই আন্দোলনের সময় ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কে আহত হন মো. সাঈদ ওরফে চাঁদ মিয়া। পরে সেপ্টেম্বরে ফতুল্লা থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। বুধবার এই মামলাটিতে আইভীকে ‘শ্যোন অ্যারেস্ট’ দেখানো হয়েছে বলে জানান পুলিশ পরিদর্শক কাইউম।
আইভীর আইনজীবী আওলাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “আইভীকে যে হত্যা মামলাটিতে আসামি করা হয়েছে সেখানে তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২, ৩০৩ ও বিস্ফোরক আইনের ৬ ধারার সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নাই। মামলায় কে, কীভাবে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গুলি করছে তা বলা আছে। কিন্তু এজাহারে আইভীর নাম থাকা ব্যতীত তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নাই। তাছাড়া, আইভী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিরোধিতা করেছেন বা তার কোনো ভূমিকা ছিল, এমন কিছুও উল্লেখ নেই।
“তাছাড়া, দীর্ঘ ২১ বছরে মেয়র থাকাকালীন সময় আইভী একজন সততা, সাহসিকতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য প্রশংসিত ও আলোচিত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি কিংবা বিরোধীমত দমন করার কোনো অভিযোগ নাই। আইভী বরং ত্বকীসহ বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে তার নিজের দলের নেতাদের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন, ভূমিকা রেখেছেন। তাকে হয়রানি করতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এই মোকদ্দমায় জড়িত করেছে। আমরা বিষয়গুলো আদালতে উপস্থাপন করেছি। রিমান্ড মঞ্জুর ও জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি।”
গত বছর ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৯ অগাস্ট দেশের বাকি সিটি করপোরেশনগুলোর মত টানা তিনবার নির্বাচিত মেয়র আইভীকেও অপসারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর মিনারুল হত্যা মামলায় প্রথমবার আসামি করা হয় সেলিনা হায়াৎ আইভীকে।
চলতি বছরের ৯ মে সকালে মিনারুল হত্যা মামলায় নারায়ণগঞ্জ নগরীর দেওভোগ এলাকার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন আইভী।
জুলাই-অগাস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা অন্তত ছয়টি মামলায় সাবেক এ সিটি মেয়রকে আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনটি হত্যা ও একটি হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে আইভীকে।