Published : 28 May 2025, 07:40 PM
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার একটি পশুর হাটে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তারের পরদিন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতা।
বুধবার দুপুরে চাঁদাবাজির মামলায় দুইজনকে কুড়িগ্রাম মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে তোলা হলে জ্যেষ্ঠ বিচারক লিটন চন্দ্র শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেন বলে জানান কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি হাবিবুল্লাহ।
এর আগে মঙ্গলবার উপজেলার যাত্রাপুর হাটে এক গরু ব্যবসায়ীর কাছে থেকে জোরপূর্বক চাঁদাবাজির অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী।
গ্রেপ্তাররা হলেন- কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বেলগাছা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাহাবুবার রহমান (৫৮) এবং জেলা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সংগঠক আলমগীর হোসেন (২৭)।
পরে রাতে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন আজাদ তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দেন বলে জানায় পুলিশ।
সেনাবাহিনী ও পুলিশ জানায়, যাত্রাপুর হাটের সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ইজারা পান বিএনপি নেতা মাহাবুবার রহমান। ওই ইজারায় অংশীদারিত্ব নেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কয়েকজন নেতা। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের অফিস আদেশ না নিয়ে তারা হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে চাঁদা আদায় শুরু করেন। আটকের পর তারা ইজারার বৈধতার কোনো কাগজপত্রও দেখাতে পারেননি।
পরে রাতে চাঁদাবাজির অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩৮৬ ধারায় মামলা রুজু হওয়ার পর তারা উপজেলা পরিষদ থেকে ইজারার অনুমোদন পত্র সংগ্রহ করেন বলে জানায় পুলিশ।
মামলা থেকে জানা গেছে, “মঙ্গলবার ফেনী থেকে যাত্রাপুর হাটে আসা পশু ব্যবসায়ী আজাদ ১৭টি মহিষ ক্রয় করেন। এ সময় বিএনপি নেতা মাহাবুবার রহমান ও আলমগীরের লোকজন আজাদের কাছে খাজনা বাবদ মহিষ প্রতি ৫০০ টাকা করে আট হাজার ৫০০ টাকা আদায় করেন।
“তবে তাকে বিক্রির চালান কপি সরবরাহ করা হয়নি। চালান কপি ছাড়া পশুবাহী পরিবহণ নিয়ে যেতে পথে সমস্যা হতে পারে জানালেও তাকে কোনো বৈধ কাগজপত্র দেননি ইজারাদারের লোকজন। পরে আজাদ বিষয়টি কুড়িগ্রাম সেনাবাহিনীকে জানান।”
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে বিএনপি নেতা মাহাবুবার রহমান ও বৈষম্যবিরোধী নেতা আলমগীরকে আটক করে সেনাবাহিনীর একটি দল।
এ সময় বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে না পারায় তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পরে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী দুইজনের বিরুদ্ধে সদর থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেন।
এ সময় বিএনপি নেতা মাহবুবার রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “ইউএনও কার্যালয়ের দরপত্র মোতাবেক সর্বোচ্চ দরে হাটের ইজারা নিয়েছি। কিন্তু সেখান থেকে আমাকে কাগজ না দেওয়ায় ক্রেতাকে শুধু রসিদ মূলে মহিষ প্রতি ৫০০ টাকা করে গ্রহণ করি। সময় দিলে কাগজ প্রদান করতে পারব জানালেও মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।”
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈদা পারভীন বলেন, “যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দরপত্র আহ্বান করা হলেও কাঙ্ক্ষিত দরপত্র ক্রয়কারী না থাকায় দরপত্র মূলে মাহবুবার রহমানকে অনুমোদন দেওয়া হয়। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত চিঠিতে স্বাক্ষর করেছি।”
সদন থানার ওসি হাবিবুল্লাহ বলেন, চাঁদা আদায়ের অভিযোগে দুজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। পরে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার আদালতে সোপর্দ করা হয়।
আসামি পক্ষের আইনজীবী আশরাফ আলী বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। মাহবুবার রহমান এক কোটি ১১ লাখ ২০০ টাকা দরদাতা হিসাবে যাত্রাপুর হাট ইজারা গ্রহণ করেছেন।
“এ সংক্রান্ত কাগজপত্র বিচার বিশ্লেষণ করে বিচারক আসামিদের পিআর পর্যন্ত (অভিযোপত্র না আসা পর্যন্ত) জামিন মঞ্জুর করেন।”